ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ফোরকান মল্লিকের ইঙ্গিতে পাঞ্জাবী সেনারা দেবেন ডাক্তারকে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ফোরকান মল্লিকের ইঙ্গিতে পাঞ্জাবী সেনারা দেবেন ডাক্তারকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মতিলাল রায় জবানবন্দীতে বলেছেন, ফোরকান মল্লিকের দেখানো মতে পাঞ্জাবী সেনারা দেবেন ডাক্তারকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর নিজ হাতে রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে ডাক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করে ফোরকান মল্লিক। জবানবন্দী শেষে আজ আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আরেক মামলায় অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পলাতক রাজকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী সঞ্জু বালা ঘোষ জবানবন্দীতে বলেছেন, হাসান আলী নিজ হাতে রাইফেল দিয়ে আমার স্বামী সতীশ চন্দ্র ঘোষসহ তিনজনকে হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে আজ আসামি পক্ষ তাকে জেরা করবেন। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ১৬ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে সাক্ষী তার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। আজ তাকে জেরা করবেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মতিলাল রায়, পিতা-মৃত গোরাঙ্গ রায়, মাতা মৃত-সোনালক্ষী, গ্রাম-উত্তর সবিদখালী, থানা- মির্জাগঞ্জ, জেলা- পটুয়াখালী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০-৬১ বছর। আমার ‘রাম যাত্রাপালা’ নামে একটি যাত্রার দল আছে। বিভিন্ন স্থানে যাত্রা প্রদর্শনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার কৃষি জমিও আছে। সময় সময় কৃষি কাজ করি। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মে মাসের প্রথম দিকে সুবিদখালী বাজারে পাক সেনারা আসে। এরপর স্থানীয় পুরাতন হাসপাতালে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে, সেখানে ফোরকান মল্লিকসহ অন্যান্য রাজাকাররা ট্রেনিং দিতে শুরু করে। পুরাতন হাসপাতালটি সুবিদখালী বাজার সংলগ্ন ভাড়ানী খালের দক্ষিণ পাড়ে। এরপর পাকসেনারা আজাহার খানকে সভাপতি করে মোজাফ্ফর খান, হামিদ খান, ওয়াজেদ সিকদার প্রমুখদের নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানার পিস কমিটি গঠন করে। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট সময় আনুমানিক দেড়টার দিকে আমি সুবিদখালী বাজারে আসি। বাজারে এসে শুনতে পাই যে, রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনা বাহিনীর সদস্যরা বাজারের ভিতর প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পর বাজারে আগত লোকদের কাছে শুনতে পাই দেবেন ডাক্তারের দোকানে তাকে পাঞ্জাবীরা গুলি করে হত্যা করেছে। আমি দোকানের সামনে দিয়ে দেবেন ডাক্তারের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি। ডাক্তারের দোকানের পাশে শান্তি রঞ্জনকে ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আসামি ফোরকান মল্লিকের দেখানো মতে পাক সেনারা দেবেন ডাক্তারকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ফোরকান মল্লিকের রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট ফোরকান মল্লিক নির্দেশে রমনী কু-ু, শ্যাম সুন্দর কু-ু ও সুনীল কু- এই তিন ভাইকে ধর্মান্তরিত করে মুসলমান করে। সাক্ষী আরও বলেন, কৃষ্ণ সাহার মেয়ে গোলাপীকে তারা ধর্ষণ করেছে। তাদের অত্যাচারে মেয়েটি মারা যায়। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ফোরকান মল্লিকসহ রাজাকাররা ললিত কর্মকারের মেয়ে শোভা রানী ও তার পুত্রবধূ সুষমা রানীকেও ধর্ষণ করে। হাসান আলী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী নেত্রকোনা জেলার পাইকুড়া গ্রামের সঞ্জুবাস ঘোষ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আসামি হাসান দারোগার গুলিতে স্বামী সতীশ চন্দ্র ঘোষ, দেবরসহ অন্যান্যদের গুলি করে হত্যা দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে সাক্ষী কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্বামী, দেবরসহ অন্যান্যদের হত্যার বিচার চেয়েছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ সাক্ষী এ কথা বলেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এ সময় প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণে তাকে সাহায্য করেন।
×