ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায়;###;চৌদ্দগ্রামের ঘটনায় আটক একজনের স্বীকারোক্তি

যাত্রী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার নেপথ্য কাহিনী-

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যাত্রী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার নেপথ্য কাহিনী-

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ আর হরতালের মধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। পরিকল্পিতভাবে যাত্রীদের হত্যা করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের নেপথ্যে আসলে কারা? দৃশ্যত হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের, তা স্পষ্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে চালকও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনার পর চালকের হদিস মেলেনি। বিশেষ করে বড় বড় নাশকতার পর পরই গা-ঢাকা দিয়েছে চালকরা। এই প্রেক্ষাপটে হামলার সঙ্গে চালকরাও জড়িত কি না এ প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি ছাড়াও, বেশ কয়েকটি নাশকতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তীর চালকের দিকেই। হামলাকারীদের সঙ্গে বাসচালকদের সখ্যের বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে অনেক নাশকতার ঘটনার তদন্ত চলছে। চৌদ্দগ্রামের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। এ হামলা জড়িত সবাই জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগের তীর চালকদের দিকেই কেন? এমন প্রশ্ন অমূলক নয়। বিজিবি পাহারায় কক্সবাজার থেকে গাড়িটি আসছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বহর থেকে বাসটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে নিরিবিলি স্থানে গাড়িটিতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। আর হামলার ঘটনা যে যেখানে সে স্থান জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত বলে পরিচিত। বিজিবি প্রধানও ঘটনার পর পরই বলেছেন, কিভাবে গাড়িটি বহর থেকে বেরিয়ে গেল তা স্পষ্ট নয়। ঘটনার পর থেকেই বাসটির চালক পলাতক। ঘটনার সঙ্গে চালক যুক্ত না থাকলে বাসটি কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহর থেকে বেরিয়ে এলো? তাছাড়া চালক পালিয়েই বা যাবে কেন? যেভাবে সামনে নেপথ্যের ঘটনা ॥ চৌদ্দগ্রামের নৈশবাসে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। জড়িত একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উন্মোচিত হয়েছে হামলার পুরো রহস্য। গ্রেফতারকৃত বিএনপি কর্মী আলমগীর হোসেনের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানা গেছে, সবাই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে নৈশবাসে বোমা হামলাকারী মোঃ সোহেলের লাশ পাওয়া গেছে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সে চৌদ্দগ্রামের মিয়ারবাজারের জগমোহনপুরের বাবুল মিয়ার ছেলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম নিশ্চিত করে বলেছেন ‘নিহত সোহেল পেট্রোলবোমাটি বাসে ছুড়ে মারে এমন কথাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আছে। প্রথমে ১২ ও পরে মুখোশ পরে আরও অনেকে এই ঘটনায় অংশ নেয়। তাদের আরও বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতারকৃত বিএনপি কর্মী আলমগীর হোসেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সূত্র জানায়, পেট্রোলবোমা হামলার জন্য মিয়ারবাজারের জগমোহনপুরের বাবুল মিয়ার ছেলে মোঃ সোহেলকে ঠিক করা হয়েছিল। সে ও তার বাবা কিছুদিন আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। পরে সোহেল জামিনে মুক্তি পায়। পুলিশ বলছে, নৈশবাসে বোমা হামলার পর সোহেল পালিয়ে যায়। মোবাইল ফোন ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে তাকে ধরার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু সে মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে। কুমিল্লার চান্দিনার মহিচাইলে একদিন এবং মহারং গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে একদিন সে অবস্থান করে। পরে সোহেলের লাশ পাওয়া যায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তার বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রামে নৈশবাসে বোমা হামলাসহ ১০/১২ টি মামলা রয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি মহাসড়ক পুলিশ থানার ইনচার্জ জোবায়ের আলম জানান, দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ফোনে জানানো হয় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজনের লাশ আছে, নিয়ে যাওয়ার জন্য। এএসআই অহিদ তার লাশ নিয়ে আসে। ৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় চৌদ্দগ্রামের মিয়ারবাজারের জগমোহনপুরে যাত্রীবাহী নৈশবাসে পেট্রোলবোমায় ৮ যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা রাখা হয়েছে আরও ১৫/২০ জনকে। মামলার বাদী এসআই নূরুজ্জামান হাওলাদার। দুটি মামলাতেই একই আসামি। মামলাটি তদন্ত করছেন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মোঃ ইব্রাহিম। তিনি জানান, দাউদকান্দিতে যে সোহেলের লাশ পাওয়া গেছে সে নৈশবাসে বোমা হামলায় জড়িত। সেই বোমাটি নিক্ষেপ করে। তিনি জানান, হামলায় প্রথমে ১২ জন অংশ নেয়। মহাসড়কে ছিল ২০/২৫ জন। মহাসড়কের নিচে ছিল ১৫ জনের মতো। তারা ছিল মুখোশ পরা। ঘটনার পর হামলাকারীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে জগমোহনপুরের পশ্চিমদিকে এবং গ্রেফতারকৃত আলমগীর হোসেন (২৫)সহ অন্যরা ভারতীয় সীমান্তে কাঠালিয়া গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। এসআই ইব্রাহিম আরও জানান, ঘটনায় জড়িত বিএনপির কর্মী চৌদ্দগ্রামের কালিকৃষ্ণনগরের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আলমগীর হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছেন, ঘটনায় জড়িতরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আলমগীর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ জুয়েলের সহযোগী। জুয়েলও এ মামলার আসামি। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বাস চালককেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাস মালিকের কাছ থেকেও চালকদের ব্যাপারে কোন তথ্য মেলেনি।
×