ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আয়োজনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ;###;ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক

অবিলম্বে ঢাকা সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবিলম্বে ঢাকা সিটি নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনির্ধারিত বৈঠকে আলোচনা হয়। কিছু সমালোচক দুই নেত্রীকে এক পাল্লায় মাপতে চাইছেন, এ সকল সমালোচকদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়ার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। দেশে নাশকতা চালানো হচ্ছে। এতে আমার দোষ কোথায়? তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি এটি কি আমার দোষ? সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কই আপনারাতো বেগম জিয়াকে মানুষ হত্যা করতে নিষেধ করছেন না। তিনি মানুষ হত্যা করবেন। আর আমাকে আলোচনায় বাসার কথা বলবেন, এটা কেমন কথা? সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দ্রুত ব্যবস্থা করেন। এ নির্বাচন আর কতদিন ঝুলে থাকবে! যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচন দিয়ে দিন। এভাবে সিটি কর্পোরেশন চলতে পারে না। এতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের নাম জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তবে দক্ষিণে এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। এটা পরে করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা বলছেন, এই পরিস্থিতির জন্য দুই নেত্রী দায়ী। এখানে আমার দোষ কোথায়? সবই তো ঠিক ছিল। যারা বোমা মারছে, মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে আমাকে কেন মেলানো হচ্ছে? তিনি বলেন, তাদের কেন দায়ী করা হয় না? আমাকে কেন দায়ী করছে? আমি তো এসব করছি না। সমালোচকদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা এসব কথা বলছেন, যারা বিশেষজ্ঞ, তারা দেখে না কেন, কারা এটা করছে? তারা দেখুক? জনগণ কী বলে? আমাকে আর যিনি এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাকে কেন এক পাল্লায় দেখা হচ্ছে? সোমবারের নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নিজ মন্ত্রণালয়ের এজেন্ডা থাকলেও সভায় অংশ না নেয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি আইনও আলোচনায় আসেনি। হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে শ্রমিক, কর্মচারী, পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনটি এজেন্ডা থাকলেও নৌমন্ত্রণালয়ের একটি এজেন্ডা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯০৮ সালের পোর্টস এ্যাক্ট আছে। এটা সংশোধন করতে হবে। মন্ত্রী (নৌপরিবহনমন্ত্রী) সোমবার ছিলেন না। তাই, এটা (এজেন্ডা) আলোচনা হয়নি। সোবহান সিকদারকে ধন্যবাদ অবসরোত্তর ছুটিতে (পিএলআর) যাওয়া প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই কর্মকর্তার জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। আবদুস সোবহান সিকদার (রোববার) অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে, তিনি বিচক্ষণ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা ছিলেন। ৩৪ বছর বিভিন্ন পদে থেকে সরকার ও জাতিকে সেবা দিয়েছেন। সে জন্য মন্ত্রিসভা আবদুস সোবহানের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রশংসা করে। এ প্রেক্ষাপটে ধন্যবাদ প্রস্তাব করে তার অবসরোত্তর জীবনে সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে মন্ত্রিসভা। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সোহবান ৩৪ বছরের চাকরিকালে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বও পালন করেন। রেলওয়ে বোর্ড (রহিতকরণ) আইন বাতিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ড (রহিতকরণ) আইন- ২০১৪’ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। পরে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আইনটির প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মতামত আসে। ফলে, মন্ত্রিসভা এর আগে দেয়া নীতিগত অনুমোদনটি বাতিল করে। মন্ত্রিসভা কোন অনুমোদন বাতিল করলেও মন্ত্রিসভায় আনতে হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আর্থিক ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ এবং অনুন্নয়ন বাজেটের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ ও পুনঃঅর্পণ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্প পরিচালক, অধিদফতর/সংস্থা এবং বিভাগ-জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। পূর্ত কাজ যেমন- ভবন ও রাস্তা নির্মাণ, মালামাল ক্রয়, বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা বা প্রশিক্ষণ, ডিজাইন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হয়। আর কনসালটেন্সি সেবা কাজের ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকার বেশি হলে মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে আসে। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান/মহাপরিচালক/চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১৪ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০ কোটি, ‘ক’ শ্রেণীর প্রজেক্ট পরিচালকের ক্ষেত্রে ৮ কোটি, ‘খ’ শ্রেণীর পরিচালকের ক্ষেত্রে ৬ কোটি, ‘গ’ শ্রেণীর ক্ষেত্রে ৪ কোটি রয়েছে। এছাড়া অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে (গাড়ি কেনা, গাড়ি মেরামত, যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম ক্রয়) মন্ত্রণালয় ৫০ কোটি টাকা, এটা ঠিক থাকবে। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান ২০ লাখ, বিভাগীয় বা আঞ্চলিক কর্মকর্তা ৬ লাখ, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ৪ লাখ, উপজেলা ২ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ক্ষমতা অপরিবর্তিত (৫০ কোটি টাকা) থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উন্নয়ন ও অনুন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যয়ের সীমা অপর্যাপ্ত, এটা বাড়বে। তবে কত হবে তা পরে নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে মাঠ পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হলো- সরকারী ক্রয় কমিটির ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে। তবে তা কত, নির্দিষ্টভাবে বলে দেয়নি মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার সুবিধা হলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌথ সিদ্ধান্ত নিলে সিদ্ধান্তের গুণমত মান বৃদ্ধি পায় এবং ভুল ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা কমে। স্বচ্ছতা জবাদিহিতা আরও বাড়ে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে, মাঠ পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং উন্নয়ন কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ব্যয়ের ক্ষমতার জন্য অর্থ বিভাগের সার্কুলার রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তার কিছু সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে সরকারের কাজ ও বাজেট বেড়েছে। এডিবি অনেক বড় হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটে আর্থিক ব্যয়ের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়।
×