ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্ত করো ভয়

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মুক্ত করো ভয়

বোতলবন্দী যে দৈত্যকে ছেড়ে দিয়ে দেশজুড়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, তার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ খুঁজেও পাবেন না, যারা ছিপি খুলেছেন। পেট্রোলবোমা আর আগুনের দাউ দাউ লেলিহান শিখা তাদের কাছ থেকে বেশি দূরে নয়, যারা এ সবের মদদ ও অর্থদাতা। এই দৈত্যের জন্য তাদেরও খেসারত দিতে হবে, যারা রিমোট কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রণ করছেন দৈত্যকে। এই দৈত্য ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে তার নির্দেশদাতাকেও নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হবে না। ইতিহাস তা-ই বলে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) মতো বিএনপি-জামায়াত জোট বাসে পেট্রোলবোমা মেরে, লঞ্চে আগুন দিয়ে, ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলছে। নির্বিচারে আগুনে পুড়িয়ে মারছে মানুষ, যা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশজুড়ে যা চলছে, তা বিএনপি-জামায়াত জোটের কাম্য হলেও দেশবাসীর কাছে সম্পূর্ণ বিষাক্ত ও অমানবিক আচরণ। যাদের স্বার্থ নিহিত রয়েছে অথবা জেদ নিয়ে আছে, তাদের কানে যুক্তি ঢোকে না। নিজের নাক কেটে জাতির অগ্রগতি ভঙ্গ করার কাজটি তারা সচেতনভাবেই করে চলেছে। দেশের অগ্রগতির রথকে রুখে দিতে সর্বাত্মক নাশকতায় তারা লিপ্ত। তাদের নৃশংসতার কারণে দেশের সবাই ক্ষতির শিকার। কেউই যেহেতু রক্ষা পাচ্ছেন না, তাই ২০ দলের অবস্থানটা দাঁড়িয়েছে পুরো দেশবাসীর ওপর। জনগণের বিরুদ্ধে তারা একতরফা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা হয়ত ভাবতেও পারছে না, জনগণ তাদের উচিত শিক্ষা দেবেন। যাকে বলা হয়, দাঁতভাঙ্গা জবাব। জনগণের পিঠ ক্রমশ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই দেশজুড়ে নাগরিকদের নানা স্তরের ও পেশার মানুষরা ক্রমশ রাজপথে নেমে আসছেন। তাদের প্রতিরোধে বলীয়ান হয়ে ওঠার মধ্যেই রয়েছে ঘাতকদের বিনাশ। যারা এ সব নৃশংস দুষ্কর্ম করছে, তাদের ভরসা যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যেতে পারলে পুষিয়ে নেবে কড়ায় গ-ায় সবকিছু। কিন্তু যাঁরা স্বজনহারা, যাঁরা অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন, তাঁদের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্নই থেকে যাবে। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার যে পথ তারা অবলম্বন করছে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীদের লেলিয়ে দিয়ে তাতে দেশকে জঙ্গীদের অভয়ারণ্য করে তোলায় সচেষ্ট। তারা ভুলে যান একাত্তর সালে বাঙালী জাতি হানাদার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেছে বহু রক্ত ঝরিয়ে এবং প্রাণদানে। রাজনৈতিক দল যদি তার রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে দেশবাসীকে সশস্ত্র পন্থায় জিম্মি করে রাখে এবং নির্মম পদ্ধতিতে হত্যা করে, তবে তার পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকা অসম্ভব। এর পরিণাম একদিন গণরোষে তারা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। রাজনীতির নীতিগত আদর্শ হলো মানুষ যেখানে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, সেখানে তাকে আপন অধিকারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। কার্যত হচ্ছে তার উল্টো। মানুষ কতখানি পশুবৎ আচরণ করতে পারে, তার নতুন নতুন পথ নিত্য উন্মুক্ত হচ্ছে। এমন উদ্দামতা, বর্বরতা দেশে আগে কখনও দেখা যায়নি। বাসে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করার এ নৃশংস আচরণ কেউ প্রত্যাশা করে না। যারা এ কাজে জড়িত তাঁরা ভাবছেন, ভারি একটা আন্দোলন হচ্ছে, এই আন্দোলনেই বুঝি সরকারের পতন হবে। হোক ধ্বংস শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, কৃষিক্ষেত্র। গোল্লায় যাক দেশ, ধ্বংস হোক সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানÑ সরকারকে যেভাবেই হোক টেনেহিঁচড়ে নামাতে হবে। এ জন্য ২০ দল মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ জন্য জনসমর্থন তারা পায়নি। বরং জনগণকে নিষ্পেষণ, সন্ত্রস্ত ও সংশয়াচ্ছন্ন করে ক্ষমতা দখল করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা মুখ থুবড়ে পড়বেই জনসম্পৃক্ততা না থাকায়। যারা গা বাঁচিয়ে চলেন, ঝামেলা বুঝে রক্ষা পেতে চান, তাদের জানা সঙ্গতÑ নগর পুড়লে দেবালয় অক্ষত থাকে না। তাই দেখা যায়, পাকিস্তানের মসজিদে সশস্ত্র হামলা করে মানুষ হত্যা করতে। আর পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের বাংলাদেশের মানুষদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে। যারা এ সব কুকর্মে উৎসাহ যোগায়, টিভিতে জ্বলন্ত বাস-ট্রাক আর পোড়া মানুষ দেখে তাদের অন্তর কী বলে, তা তারা স্পষ্ট করে না। বরং তারা এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা যেহেতু আক্রান্ত হচ্ছে না, তাই তারা নির্বিকারভাবেই সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে। দগ্ধ মানুষ দেখে দেখে আর মৃত্যুর খবর শুনে সবাই যেন অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। সমাজকে যেন মরণদশায় পেয়েছেÑ একটা নির্বিকার নির্বিচল ভাব। অসহ্যকে ক্রমাগত সহ্য করে করে মনের ওপর একটা কঠিন আন্তরণ পড়ে যায়Ñ তখন আর কিছুই মনে রেখাপাত করে না। সবই সয়ে সয়ে যায়। ভয়ঙ্করের ভয়ঙ্করতা সুশীল মানুষকে বিচলিত করে না। তাই তারা নির্লিপ্ত নির্বিকার মানুষ হত্যার বিষয়ে। অতএব অবলীলায় বলে ফেলতে পারে, ‘ডঊখখ, ঞঐওঘএঝ ঐঅচচঊঘ, ণঙট কঘঙড অঘউ ঙঘঊ ঘঊঠঊজ ঈঅঘ ঞঊখখ’, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের এই যে নির্লিপ্ত ভাব, এও একটা মস্তবড় দুর্লক্ষণ। জ্ঞানী-গুণীরাই সমাজের প্রধান সহায়সম্বল। তাঁরা যদি অসহায় বোধ করেন, তাহলে সমস্ত সমাজই নিঃসহায় নিঃসম্বল হয়ে পড়তে বাধ্য। রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করে তা পালনের পরিবর্তে ঘাতকের বেশে মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার যে পথ বেছে নিয়েছে ২০ দল ক্ষমতায় আসীন হওয়ার কৌশলে, সে পথ যে আত্মঘাতী, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ, মানুষের ঘৃণা বহনকারী, তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। প্রাসাদে বসে পেট্রোলবোমা মেরে দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশদানকারীরা যদি রাজপথে নামতেন, জনগণের পাশে দাঁড়াতেন, তাহলে উপলব্ধি হতো কত নিচ অবস্থানে তাঁরা আজ। রাজনীতির ময়দান থেকে ছিটকে পড়ে তারা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদকে আশ্রয় করে নিজেদের শাসকে পরিণত করার দিবাস্বপ্নে মশগুল। আর এই নৃশংসতাকে প্রতিহত করার জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো যাদের দায়িত্ব, তারাও নির্বিকার প্রায়। ফলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোমা ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতন ও সংগঠিত করার কাজ থেকে বিরত রয়েছেন, তারাও নির্ভরশীল প্রশাসনিক পদক্ষেপের ওপর। দেশের মানুষ যখন দেখবে কোন রাজনৈতিক দলই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তখন জঙ্গীবাদের দিকে বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য জঙ্গীরা এমনটাই চায়। তাই তারা সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যে কৌশল নিয়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গীগোষ্ঠী তৎপরতা চালিয়ে দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সমকক্ষে নিয়ে যেতে চায়, তারা তাদের নৃশংস ও সহিংস কর্মকা- থেকে বিরত হবেÑ এমনটা ভাবা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। কারণ তাদের পৃষ্ঠপোষকরা আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ-অস্ত্র, শক্তিবলে বলীয়ান। সরকার শুধু প্রশাসন দিয়ে আপাতত সন্ত্রাসীদের নির্মল করতে পারলেও তাদের গডফাদার ও গডমাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে, তারা আবার গজিয়ে উঠবে। এরাই মূলত এ দেশের গণশত্রু আজ। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অনিবার্য হয়ে উঠলেও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজটি যাদের, সেই রাজনৈতিক দল যদি কেবল চিৎকার চেঁচামেচিতে নিজেদের আবদ্ধ রাখে, তবে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যেতে বেশি সময় নেবে না। যে অনল খালেদা-জামায়াত ছড়িয়ে দিয়েছে, তার নৃশংস দাবদাহে সাধারণ মানুষ মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ছে। তাদের যন্ত্রণা হয়ত আজ কারও উপলব্ধি হচ্ছে না; কিন্তু ঘাতক জঙ্গীরা যখন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর বেছে বেছে হামলা চালাবেÑ তখন অনুতাপ, অনুশোচনা আর আহাজারিতে গাছের পাতাও নড়বে না। এই পেট্রোলবোমার অগ্নিদহন সকলকে পুড়িয়ে মারবে। রেহাই তারাও পাবেন না, যাঁরা তাদের ব্যবহার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে কৌশল পরিবর্তন করে আসছে জঙ্গীরা, অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। তাই ১০-১১ বছরের স্কুলছাত্রদের অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার করছে খালেদার জঙ্গীগোষ্ঠী। নারায়ণগঞ্জে কোমলমতি শিশুদের স্কুলব্যাগে করে অস্ত্র পাচার করার ঘটনাটি ধরা পড়ার পর আতঙ্ক তীব্র হয়েছে জনমানসে। শিশুদের এভাবে ব্যবহার করে আসছে আল কায়েদা, তালেবানসহ অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো। আফগান, কাশ্মীরসহ অন্যান্য দেশে প্রশিক্ষিত বাঙালী জঙ্গীরা বিএনপি-জামায়াতের পতাকার নিচে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে ক্রমশ মানুষখেকো হয়ে উঠছে। প্রচলিত আছে, যে বাঘ একবার মানুষের মাংসের স্বাদ পায়, এরপর থেকে তার জিহ্বায় অন্য কোন প্রাণীর মাংস তেঁতো মনে হয়। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যার যে সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে পেট্রোলবোমা মেরে, আগামীতে তারা যে ভারি অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? ইতোমধ্যে তারা রাজশাহীতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বোমাহামলা চালিয়েছে। প্রকারান্তরে তারা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যে হামলা করবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবেন? কারণ জঙ্গীবাদের যে ধর্ম, ধ্বংস করার সেই পথ ধরে তারা সবকিছুকে তাদের হামলার মুখোমুখি দাঁড় করাবে। দেশে সন্ত্রাসী তৎপরতাকে লঘুভাবে বিচার করছে যারা, তারা হয়ত বুঝতে পারছে না, ঘাতকেরা তাদের রেহাই দেবে না। যেমন দেয়নি একাত্তরে। পরাজয়ের পূর্ব মুহূর্তে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি জামায়াত ও আলবদররা। তবে বিদেশী কূটনীতিকরা উপলব্ধি করতে পারছেন বলেই তারা উল্লেখ করেছেন, বিএনপি-জামায়াতের বহাল রাখা চলমান সহিংসতা গভীর বেদনাদায়ক। সহিংসতা সত্যিই যে গণতন্ত্রবিরোধী, তা জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। বাস্তবতা হলো এই যে, দেশজুড়ে যে নাশকতা চলছে তাতে ইন্ধন বা প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু কিছু প্রচারমাধ্যম। সম্প্রচার নীতিমালা না থাকায় এবং সরকারের বিষয়টিতে গুরুত্ব প্রদান না করায় ক্রমশ এসব প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়ছে। এমনকি পরোক্ষভাবে তারা দেশকে জঙ্গীবাদের ক্ষেত্রে পরিণত করেও তুলছে। এ সব মাধ্যমের স্বত্বাধিকারীদের যে পরিচয় জানা যায়, তাতে এটা অসম্ভব নয় যে, জঙ্গীবাদ তাদের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে। ২০১৩ সালে দুটি প্রচারমাধ্যমে জঙ্গী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা ও নির্দেশনা দিয়েছিল। প্রচারমাধ্যমে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে চিহ্নিতরা রীতিমতো পেট্রোলবোমার পক্ষে এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ছড়াচ্ছে, যা জঙ্গীবাদ বিস্তারের সহায়ক। এরা সচেতনভাবেই এসব করছে। এদের প্রচারিত ফুটেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে জঙ্গী তৎপরতা জনসমক্ষে প্রকাশ করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদারদের দখল করা বেতার টিভিতে যেভাবে গণহত্যাকে সমর্থন করা হতো, আজকেও তারা মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে ঘাতকদের প্রচার ও প্রচারণায় ব্যাপক শ্রম ও সময় ব্যয় করছে। প্রচারমাধ্যম যেভাবে জঙ্গীবাদকে উস্কে দিচ্ছে, তার বিপরীতে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমগুলো সঠিক তথ্য প্রচার করতে পারছে না। ফলে জনগণ বিভ্রান্ত। তারা ঘাতকদের মিথ্যা প্রচারণাকে সত্য বলে ধরে নিচ্ছে। জনগণের বিভ্রান্তি দূর করা না গেলে জঙ্গীবাদের প্রসার হবেÑ এটাই স্বাভাবিক। যে বা যাদের নির্দেশৈ এই হত্যাযজ্ঞ ঘটছে তারা দাবি করছে, তাদের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক নেই। যদি না থাকে, তবে নাশকতা বন্ধ ও নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে বিএনপি কেন এগিয়ে আসছে না? তারা যদি নিষ্কলুষই হবে, তবে বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে না কেন। তারা যদি এ সব নাশকতা না করে, তবে যারা বোমা মারছে, তাদের গ্রেফতারে সরকারকে আল্টিমেটাম দিচ্ছে না কেন? জঙ্গীদের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে বলে দাখিল পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ বহাল রাখার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের কোন ক্ষোভ শোনা যায় না। প্রতিবাদও করে না। এমনকি মানববন্ধনেও দেখা যায়নি মাদ্রাসার ছাত্রদের, কিংবা তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে বাংলাদেশবিরোধী চেতনায় পরিচালিত, তা আজকের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়। ১৯৭১ সালে মাদ্রাসার ছাত্রদের একটা বড় অংশই রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্য হয়ে গণহত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। আজকে তাদের উত্তরসূরিরা সেই পথই, অনুসরণ করেছে যার পরিণাম ভয়াবহ । ২০১৩ সালের ৫ মে তাদের স্বরূপ পরিষ্কার হয়েছিল। দেশে যা ঘটছে তা মূলত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত এবং দুর্নীতির বিচার বন্ধ করার জন্যই। আর এ জন্য মানুষের প্রাণ হরণ করা হচ্ছে। আশার কথা যে, দেশের জনগণ তাদের অস্তিত্বের জন্য ক্রমশ রাস্তায় নামছে। প্রতিবাদী ভাষায় নাশকতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। একদিন জনগণ প্রতিরোধী হয়ে উঠবেই। কারণ ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি’ দুর্বৃত্তরা আজ তা বুঝতে পারছে না। পঁচাত্তর-পরবর্তী যে ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তার শিকড় উপড়ে ফেলার সময় এখন। ভয়কে জয় করতেই হবে। [email protected]
×