ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নেত্রকোনার ননি-তাহেরের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ ২

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নেত্রকোনার ননি-তাহেরের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ ২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি (৬২) ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের (৬৪) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি হবে না সে বিষয়ে আদেশের জন্য ২ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ প্রদান করেন। আদেশের জন্য রবিবার দিন নির্ধারিত থাকলেও ট্রাইব্যুনাল ২ মার্চ পুনর্নির্ধারণ করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। তদন্ত সংস্থা দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। তারা চারটি অভিযোগ দাখিল করলেও প্রসিকিউশন তা যাচাই-বাছাই করে আরও দুটি অভিযোগ বাড়িয়ে মোট ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেন। ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা চারটি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ একাত্তরের ১৭ আগস্ট সকাল এগারোটার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এরপর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০/৪৫০টি দোকান ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৪ অক্টোবর ১৯৭১, বেলা আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডস্থ জিউর আখড়ার সামনের রাস্তা থেকে আসামিরা কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপরহরণ করে। এরপর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তার পাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে বারোটার দিকে আসামিরা বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রামে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। চার্জ-৪ : রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননি ও অন্যান্য রাজাকার শহরের মোক্তার পাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানসিক নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ সকাল এগারোটার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এরপর লক্ষ্মীগঞ্জ ও মোক্তার পাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদের নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ মোট ১৬ মামলার বিচার হয়েছে। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে মোট আটটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আর তদন্ত সংস্থা ২১ মামলার তদন্ত করছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
×