স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেলটি ছিল বসন্তের দখিনা বাতাসমাখা। চারপাশে দৃশ্যমান বৃক্ষরাজির সবুজ-শ্যামল পত্রপল্লব। সেই সঙ্গে বিশাল প্রান্তরে বিরাজমান প্রকৃতির পালাবদলের খেলা। এমন মায়াময় পরিবেশে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে শোনা গেল গানের সুর। রক্ত শিমুল রক্ত পলাশ দিল ডাক সুনীল ভোরে- এমন সুরাশ্রিত চরণের সঙ্গে পরিবেশিত হলো নৃত্য। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সংযোগে উপস্থাপন করলেন তাল নৃত্যালয় সংগঠনের শিল্পীরা। আর ভাষাশহীদদের নিবেদিত এমন মধুর পরিবেশনা চলছে ও চলবে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই মঞ্চে চলছে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজিত উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উৎসবে প্রতিদিনের আয়োজনে দলীয় নৃত্য, পথনাটক ও মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী। খোলা আকাশের নিচে স্থাপিত মঞ্চে প্রতিদিনই বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত চলা এ উৎসবকে ঘিরে রয়েছে দর্শক-শ্রোতার বিশেষ কৌতূহল। রবিবার ছিল উৎসবের পঞ্চদশতম দিন। নৃত্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানসূচী। এরপর পথনাটক নিয়ে মঞ্চে আসে নাট্যযোদ্ধা। উপস্থাপন করে আটই ফাল্গুন শীর্ষক নাটক। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপটে নির্মিত প্রযোজনাটিতে উঠে আসে ঐতিহাসিক সেই দিনটির চিত্র। সেই সঙ্গে বর্ণিত হয় বর্তমান শহীদ মিনারের অবস্থানগত তাৎপর্যের কথা। কাহিনীর ভেতর দিয়ে উঠে আসেন ভাষাশহীদ জব্বার। নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয় বর্ণমালার সঙ্গে। জাগিয়ে তোলে বাংলাভাষার প্রতি ভালোবাসা। পথনাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।
সন্ধ্যায় ছিল মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী। মঞ্চস্থ হয় দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদের নাটক নাগর আলীর কিচ্ছা। একইসঙ্গে রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ম. আ. সালাম।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এ উৎসব। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হবে আয়োজন। বিকেলে থাকবে নৃত্য ও পথনাটকের প্রদর্শনী। আর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত হয় নাটকের প্রদর্শনী। আজ সোমবার মঞ্চস্থ হবে প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজনা আওরঙ্গজেব। মুহিত চট্টোপাধ্যায়ের রচনা থেকে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কবিতাপাঠ ॥ সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে রবিবার অনুষ্ঠিত হলো গালুমগিরি সংঘ-বাংলাদেশের নিয়মিত আয়োজন কবির কবিতাপাঠ। বৈকালিক এ আয়োজনে কবিতাপাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধের পর আত্মপ্রকাশ করা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের কবি ও সত্তরের অন্যতম কণ্ঠস্বর সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। এটিই ছিল তাঁর প্রথম একক কবিতাপাঠের আসর। অনুষ্ঠানে কবির কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসাদ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন গালুমগিরি সংঘের সমন্বয়ক শিমুল সালাহ্উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠের পাশাপাশি তাঁর প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলো হলো ‘রবিঠাকুরের প্রাইভেসি’, ‘যুদ্ধশিশুর জীবনযুদ্ধ’ ও ‘খুনি নূর চৌধুরী’। মোড়ক উন্মোচনে আলোচকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন লেখক ও স্থপতি শাকুর মজিদ এবং কবি নাসির আহমেদসহ সাহিত্যভুবনের বিশিষ্টজনরা। আলোচনায় আসাদ চৌধুরী বলেন, সাহিত্য হচ্ছে অনিশ্চিত এক গন্তব্যের পথে যাত্রা। কবির লেখনীতে সব সময় ভাল কবিতা বেরিয়ে আসবে এমনটা হয় না। কোন বিশেষ মুহূর্তকে ঘিরে সৃষ্টি হয় কালজয়ী বা সমৃদ্ধ কবিতা। বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে স্বপ্নের মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ হয় একটি কবিতা। আর চমক দেয়া কোন কবির কাজ নয়; পাঠককে অভিভূত করা হচ্ছে কবির প্রকৃত কাজ। আর সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল সে কাজটিই সঠিকভাবে করছেন।
অনুষ্ঠানে কবি তাঁর কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত কবিতাপাঠ করেন। সেই কথা বলেন নিজের যাপিতজীবন ও কবিতাযাপন নিয়ে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: