ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার যুবদল নেতার পেট্রোলবোমা কারখানার সন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এবার যুবদল নেতার পেট্রোলবোমা কারখানার সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের পর এবার রাজধানীতেই যুবদলের ককটেল ও পেট্রোলবোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পেল পুলিশ। বোমা তৈরির কারখানার প্রধান কারিগর যুবদল নেতা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বোমাবাজ মহিউদ্দিন পেশাদার বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহকারী। প্রতিটি ককটেল ৫শ’ টাকায় নিজ দলীয় বোমাবাজদের কাছে বিক্রি করত। অবরোধ ডাকার পর রাজধানীর তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলানগর থানা এলাকায় প্রত্যেকটি নাশকতায় যেসব বোমা, ককটেল ও পেট্রোলবোমা ব্যবহৃত হয়েছে, তার সবই মহিউদ্দিনের তৈরি। গ্রেফতারকৃত মহিউদ্দিন হালনাগাদ শতাধিক বোমা তৈরি করে সরবরাহ করেছে। যতদিন অবরোধ চলবে, ততদিন মহিউদ্দিনের বোমা তৈরি করে সরবরাহের কথা ছিল। শেরেবাংলানগর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেলের নির্দেশ ও আর্থিক সহায়তায় মহিউদ্দিন বোমা তৈরির কারখানাটি স্থাপন করেছিল। রবিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের পেছনে কাজীপাড়ার গার্ডেন রোডের ১৬/৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কারখানা থেকে বোমা তৈরির সময় যুবদল নেতা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। মহিউদ্দিনের বোমা তৈরির নিজস্ব কারখানা থেকে উদ্ধার হয় ৪টি ককটেল, ২টি পেট্রোলবোমা, পেট্রোলবোমা তৈরির জন্য মজুদকৃত পেট্রোল, ককটেলে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ স্পিøন্টার, গানপাউডারসহ ও বোমা তৈরির নানা ধরনের সরঞ্জাম। গ্রেফতারকৃত মহিউদ্দিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানা এলাকায়। মহিউদ্দিনকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আজ তাকে ঢাকার সিএএএম আদালতে সোর্পদ করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্রে জানা গেছে, মহিউদ্দিন দুই বছর ধরে তেজগাঁও থানা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পড়াশুনা তেমন হয়নি। পড়াশুনা না হওয়ায় বখে যায়। এরপর আস্তে আস্তে প্রথমে ছাত্রদল এরপর যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সক্রিয় রাজনীতি করার সুবাদে মহিউদ্দিন ককটেল বানানো শিখে। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে মহিউদ্দিন দলের পক্ষে বোমাবাজি করেছে। বোমাবাজির পাশাপাশি নাশকতা চালাতে বাণিজ্যিকভাবে বোমা তৈরি করে। প্রায় একবছর ধরে মহিউদ্দিন দক্ষ বোমা তৈরিকারক হিসেবে দলের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যায়। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়। চলমান অবরোধ-হরতালে রাজধানীতে বোমাবাজি ও নাশকতা চালাতে যুবদলের তরফ থেকে বোমা তৈরিকারক হিসেবে মহিউদ্দিনের ডাক পড়ে। শেরেবাংলানগর থানার যুবদল দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন চলমান অবরোধ-হরতালে নাশকতা চালানোর জন্য ককটেল ও পেট্রোলবোমা বানাতে মহিউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়। মহিউদ্দিন দায়িত্ব পেয়ে ওই বাসায় বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করে। তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলানগর থানায় অবরোধ চলাকালে নাশকতা চালাতে ব্যবহৃত ককটেল ও পেট্রোলবোমা মহিউদ্দিনের তৈরি। প্রতিটি ককটেল তৈরি করে সরবরাহ করলে মহিউদ্দিনকে ৫শ’ টাকা করে দিত শেরেবাংলানগর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল। মহিউদ্দিন শতাধিক ককটেল নিজ হাতে তৈরি করে সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেছে। ককটেল হামলায় মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড কম। তাই ককটেলের পরিবর্তে পেট্রোলবোমা তৈরির অর্ডার আসে দলের তরফ থেকে। নির্দেশ মোতাবেক মহিউদ্দিন পেট্রোলবোমা তৈরি করছিল। ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার করতেই পেট্রোলবোমা যুবদল নেতা মোজাম্মেলের নির্দেশে মহিউদ্দিন পেট্রোলবোমা তৈরির কাজ করছিল। পেট্রোলবোমার প্রধান উপকরণ পেট্রোল বা অকটেন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন পাম্প থেকে। প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী মডেল থানাধীন মহাখালী টিবি গেট এলাকার চ-ব্লকের ১৩৩/১ নম্বর আমিনুল ইসলাম ভিলা নামের পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় ছাত্র শিবিরের বোমা তৈরির কারখানা আবিষ্কৃৃত হয়। ওই কারখানা থেকে উদ্ধার হয় ১৩০টি শক্তিশালী তাজা বোমা, পেট্রোলবোমা তৈরির জন্য মজুদ রাখা দুই লিটার পেট্রোল, ১০ কেজি পাথরের কুঁচি, এক কেজি গান পাউডার, ১২টি নতুন স্কচটেপ, ৩ কেজি প্যারেক, ৩ বান্ডেল তুলা, ৪৮টি বোমার তৈরির কৌটা, জর্দা, ১২টি ম্যাগাজিন, জিহাদী বই, ২৭টি খাঁকিখাম ও চাঁদা প্রদানকারী জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী এবং অর্থদাতাদের নাম সংবলিত ছোট বড় চারটি রেজিস্টার। রেজিস্টারে কারখানায় বোমা তৈরির জন্য জামায়াত-শিবিরের কে কত টাকা মাসিক ও সাপ্তাহিক বা দৈনিক চাঁদা দিত তাদের নামসহ তালিকা পাওয়া যায়।
×