ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

কূটনীতিকপাড়া থেকে দলের অফিস সরানোর তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কূটনীতিকপাড়া থেকে দলের অফিস সরানোর তাগিদ

তৌহিদুর রহমান ॥ রাজধানীর গুলশান-বনানীর কূটনৈতিক জোন থেকে রাজনৈতিক দলের অফিস সরিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তাঁরা সরকারকে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে কোন রাজনৈতিক দলের অফিস থাকা উচিত নয়। তবে এ বিষয়ে সরকার খুব দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলমান হরতাল অবরোধ চলাকালে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় রাজনৈতিক দলের অফিস থাকায় নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বিদেশী কূটনীতিকরা অভিযোগ করেছেন, যে কোন দেশের কূটনৈতিক এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা প্রয়োজন। কূটনৈতিক এলাকায় শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে সেখান থেকে রাজনৈতিক দলের অফিস সরিয়ে নেয়ার তাগিদও দেন তারা। ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল অবরোধ চলাকালে সম্প্রতি কানাডা দূতাবাসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এছাড়া ঢাকার একটি দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তার বেডরুমের সামনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ এসেছে। কূটনীতিকরা মনে করেন, কূটনৈতিক জোনে রাজনৈতিক অফিস থাকার কারণে তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, কূটনৈতিক এলাকায় যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কানাডা হাইকমিশনের সামনে বোমা বিস্ফোরণের পরে গুলশান-বনানী এলাকা থেকে রাজনৈতিক অফিস সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন দূতাবাসের মতামত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি দূতাবাস এ বিষয়ে মতামতও দিয়েছে। দূতাবাসগুলো রাজধানীর কূটনৈতিক জোন থেকে দ্রুত রাজনৈতিক অফিস সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে সকল দূতাবাসের মতামত নেয়া হবে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, হাইকমিশন, মিশন, কনস্যুলেট ও কূটনীতিকদের আবাসস্থলকে কূটনৈতিক জোন হিসেবে ধরা হয়। এসব এলাকায় যেন কোন রাজনৈতিক দলের অফিস না থাকে তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর ফলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক অফিস ছাড়াও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন শাখা সংগঠনের অফিস সরিয়ে দেয়া হতে পারে। রাজধানীর কূটনৈতিক জোন থেকে রাজনৈতিক অফিস সরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক চাপ অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কোন কারণে উত্তপ্ত হলেই বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। আর তখনই বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে ওই এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের অফিস সরিয়ে দেয়ার। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পর সবাই বেমালুম ভুলে যান বিষয়টি। তাই বরাবরই ধামাচাপা পড়ে যায় ইস্যুটি। কিন্তু এবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার রাজনৈতিক অফিসে অবস্থান নিয়ে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সরকারের টনক নড়েছে। আবারও ফের আলোচনায় উঠে এসেছে দলীয় অফিস সরিয়ে নেয়ার ইস্যুটি। এরই মধ্যে প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে সরকারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে, কূটনৈতিক জোন থেকে রাজনৈতিক দলের অফিস যেন সরিয়ে নেয়া হয়। সূত্র জানায়, কূটনৈতিক জোনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অফিস হয়ে উঠেছে সর্বমহলের মাথাব্যথার কারণ। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের অফিস সরিয়ে নেয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছিল। এসব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড় নিত্যকার ঘটনা। যেহেতু তিনি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় অফিসে যানই না, তাই নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে অগত্যা গুলশানেই ছুটে যান। এর ফলে তার অফিসে ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড় যেমন জমে যায়, তেমনি মিছিল-সেøাগানের শব্দও শোনা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া গত ৩ জানুয়ারি থেকে তার অফিসে লাগাতার অবস্থান নিয়ে হরতাল-অবরোধের মতো বড় কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকরাও চাইছেন, কূটনৈতিক জোন থেকে সকল রাজনৈতিক দলের অফিস সরিয়ে নেয়া হোক। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর কূটনৈতিক জোন থেকে রাজনৈতিক অফিস সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই মূল ভূমিকা পালন করবে। কেননা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান বিশ্বের সকল দেশেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তাই কূটনৈতিক জোনে সাধারণত কোন রাজনৈতিক অফিস থাকা কোন দেশই অনুমোদন করে না। কেননা রাজনৈতিক অফিস থাকলেই সেখানে অস্থিরতা তৈরির ঝুঁকি থাকে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক জোন থেকেও রাজনৈতিক অফিস সরিয়ে নেয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
×