ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

প্রকাশিত: ০৩:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

(১৫ ফেব্রুয়ারির পর) এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঐ একদিনের সমাবেশ করতে না দিয়ে গণতন্ত্র ভাংচুর করে ফেলেছে তা বলা কতটা যুক্তিযুক্ত? ঢাকার বাইরে তো বিএনপি-জামায়াতকে সভা করতে বাধা দেয়া হয়নি। হেফাজতও জানিয়েছিল তারা ভায়োলেন্স করবে না। তাদের সভা করতে দেয়ার পর কী হয়েছিল? বিএনপি-জামায়াতের যা ঐতিহ্য তাতে সেরকম ঘটনা ঘটলে কি বিএনপি-জামায়াতের ওপর দায় বর্তাতো? না, বর্তাতো না। কারণ, হেফাজতকে সরিয়ে দেয়ার পরও প্রচারণা চালানো হয়েছে সব ভায়োলেন্সের দায়ই সরকারের। এখনও কিন্তু তাই বলা হচ্ছে। আর নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে দিতে কোন সরকার রাজি হবে? নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যে সব প্রশ্ন ওঠানো হয়েছিল নির্বাচনের পর কিন্তু সেগুলো আর তোলা হয়নি। তোলা হলে শিরীন শারমিন চৌধুরী আর সাবের হোসেন চৌধুরী দুটি আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থার প্রধান নির্বাচিত হতেন না। এই সরল যুক্তিটিও আমরা ভুলে যাই। এরপরও, কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা দেখা করতে গিয়েছিলেন খালেদার সঙ্গে। দেখা করতে দেয়া হয়নি। সেই ঘটনাবলীও সবার জানা। রাজনীতিবিদ প্রথমে মানুষ, তারপর রাজনীতিবিদ। খালেদা জিয়া সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন উল্লাসে জন্মদিন পালন করবেন, তার পুত্র জাতীয় নেতাদের রাজাকার বলবেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড ছোড়া হবে (যাতে অনেকে নিহত ও চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন), দেশকে তালিবানী রাষ্ট্র বানাবার জন্য জঙ্গীবাদকে সমর্থন করবেন, নির্বাচনে যাওয়ার আগে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নাকচ করবেন ও খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে ফেরত পাঠানো হবে এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করা হবেÑ এ সব কিছুই আমাদের মানতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে? ঐ গণতন্ত্রে লাথি মারা বরং জরুরী। ॥ ৩ ॥ আমি আগেই বলেছিÑ এই পক্ষ কিভাবে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে সমাজের সব পর্যায়ে। সমাজের সব পর্যায় থেকে এসব পাকিস্তানীকে এবং তাদের প্রভাবমুক্ত করে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে ফেরা কঠিন। গত প্রায় দেড় মাস অবরোধ চলছে এবং পেট্রোলবোমায় প্রায় শ’খানেক মারা গেছেন, আহতের সংখ্যা প্রায় হাজার। লক্ষণীয়, মানুষের স্বার্থে রাজনীতি হলেও, যারা মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নীতিনির্ধারক কেউ নেই। অর্থনীতি, শিক্ষাক্ষেত্র পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যারা পেট্রোলবোমা ছুড়ছে তারা বিএনপি-জামায়াতকর্মী বা তাদের অর্থে পরিচালিত। হাতেনাতে যারা ধরা পড়েছে তারা তা স্বীকারও করছে। মিডিয়ায় এদের কখনও বিএনপি-জামায়াতকর্মী বলা হয় না বরং বলা হয় দুর্বৃত্ত। কিন্তু, নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করলে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতকর্মী। অর্থাৎ, নাশকতার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত নয়; কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব মিডিয়া প্রথম দিকে দগ্ধদের প্রতিও সমবেদনা দেখায়নি। এখন সামাজিক চাপে পড়ে দগ্ধদের নিয়ে দু’একটি ‘হিউম্যান স্টোরি’ করছে। এসব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সিংহভাগ হাসিনা আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এসব লাইসেন্স বিক্রি করা হয়েছে শোনা যায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের। এবং শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারছেন না বরং তারা মদদ পায় সরকারের কাছ থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকার এলে, কেন এসব ক্ষেত্রে যারা বিশ্বাসযোগ্য নয় তাদের মদদ দেয়া হয়। টেলিভিশন-এফএম রেডিওর ক্ষেত্রে অনেককে যোগ্যতার ভিত্তিতে ওপরে থাকা সত্ত্বেও লাইসেন্স দেয়া হয়নি। লাইসেন্স যারা দেন তারা যদি টাকা না খান তাহলে এমনটি হয় কেন? টিভি ও এফএম লাইসেন্স সব দেশে নির্দিষ্ট কয়েক বছর পর পর নবায়ন করতে হয়। এখানে এই নিয়ম আছে কিনা জানি না। না থাকলে করা উচিত। ‘গত দেড় মাস প্রথম দিকে অধিকাংশ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া স্বাধীনতার নামে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসকে সমর্থন করেছে। পেট্রোলবোমা বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ছুড়ছে জানা সত্ত্বেও কেন তা না বলে দুর্বৃত্ত বলা হবে।’ টকশোতে অবরোধ ও নাশকতা গণতান্ত্রিক অধিকার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে একথা বলার সুযোগ কেন দেয়া হবে। যারা পেট্রোলবোমা সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত বা সমর্থক, যারা যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমর্থক নয় তাদের কেন টকশোতে আনতে হবে। এসব এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। হরতাল করা রাজনৈতিক অধিকার হলেও জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক অধিকার নয়। মালয়েশিয়ার মতো আইন করা উচিত, হরতাল ডাকার অধিকার থাকবে; কিন্তু পালন করা বা না করার অধিকার নাগরিকের। সেখানে বল প্রয়োগ বা কোন ক্ষতি করলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে দল। [বা দলীয় প্রধান]। এবং তা না দিলে তার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হবে। (চলবে)
×