অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাতিষ্ঠানিক ও কৌশলী বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) টানা গত আট কার্যদিবসে সূচকের উর্ধগতি দিয়ে লেনদেন বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে টানা পতনে বেশ কিছু বড় মূলধনী কোম্পানির দর লোভনীয় পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সূচকের পতন কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। তবে শক্ত মৌলভিত্তি সম্পন্ন ও উৎপাদনমুখী কোম্পানিগুলোর প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার হাত বদল হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হিংসাত্মক কর্মসূচীর মাঝেও শেয়ার দর কমে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাজারে এক ধরনের শেয়ার ক্রয়ের চাপ বেড়েছে। এছাড়া হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচীগুলো এখন ভোতা অস্ত্রে পরিণত হওয়ায় আতঙ্ক কিছুটা কমেছে বিনিয়োগকারীদের মন থেকে। যার কারণে আগের চাইতে বিনিয়োগকারীদেরও কিছুটা আস্থাশীলতা ফিরে পেতে দেখা গেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত আট কার্যদিবস ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ২২৩ পয়েন্ট। মূলত সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর শেষ হওয়ার পরে বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও লভ্যাংশ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। যার কারণে ওইসব কোম্পানিতেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে গেল সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ ছিল এ খাতে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা। মূলত খাতের নতুন কোম্পানি ইফাদ অটোসের লেনদেনের শুরুতে খাতটিতে কিছুটা চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে।
এছাড়া উৎপাদনশীল খাতের লেনদেনে এগিয়ে ছিল বিদ্যুত-জ্বালানি ও ওষুধ খাত। বিদ্যুত-জ্বালানি খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ ও ওষুধ খাতে এর পরিমাণ ছিল ১৩ শতাংশ। বস্ত্র খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮ শতাংশ। এছাড়া হিসাব বছর শেষ হওয়ায় ব্যাংকিং খাতের লভ্যাংশ কেন্দ্র করেও খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক তৈরি হচ্ছে। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৭ শতাংশ ছিল এ খাতে।
অন্যদিকে বাজার মূলধন বৃদ্ধির দিক থেকে এগিয়ে ছিল সিরামিক খাত। এ খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাতে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেবা-আবাসন ৮ দশমিক শূন্য ৮ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে মোট ৩১৮টি কোম্পানির ৩৮ কোটি ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৯টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়। এর বাজার দর ছিল ১ হাজার ৪৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫২টির, কমেছে ৪৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির। এ সময় আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৫৬ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৪১ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। অন্যদিকে নির্বাচিত সূচক ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৭৯ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১২ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো মধ্যে এগিয়ে ছিল ইফাদ অটোস, মবিল যমুনা বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জ সুরমা, আমরা টেকনোলজিস, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, অগ্নি সিস্টেমস ও এসিআই লিমিটেড।
ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হলোÑ বেক্সিমকো লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বিডিকম অনলাইন, পিপলস লিজিং, সাফকো স্পিনিং, ন্যাশনাল টিউবস, সামিট এ্যালায়েন্স পোর্ট, এ্যাপেক্স টেনারি ও ইন টেক অনলাইন।
অন্যদিকে দর হ্রাসের তালিকায় ছিল : জিএসপি ফিন্যান্স, সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইলস, প্রাইম ফিন্যান্স, জিমিনি সি ফুড, ইফাদ অটোস, শাহজিবাজার পাওয়ার, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-ওয়ান, কে এ্যান্ড কিউ ও রিলায়েন্স।
সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা
বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য বেড়েছে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: