ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত খাত শ্রম আইনের বাইরে থাকছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিদ্যুত খাত শ্রম আইনের বাইরে থাকছে

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত খাতকে শ্রম আইনের বাইরে রাখার বিধান সংযোজন করে বিদ্যুত আইন-২০১৫-এর সংশোধনের খসড়া জমা দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শ্রমিক সংগঠনের নামে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্যই নতুন বিধান সংযোজন হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, এতে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষমতা খর্ব হবে। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাবে। আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এমন ধারা সংযোজন করা যায় না। সরকার ব্যাপকভাবে বিদ্যুত খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে শতাব্দীর পুরাতন বিদ্যুত আইনকে যুগোপযোগী করা। ব্রিটিশ সরকারের সময় ১৯১০ সালে প্রণীত পুরাতন আইন দিয়েই এখনও বিদ্যুত খাত চলছে। গত সরকারের সময় বিদ্যুত আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখনও তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষে পাওয়ারসেল আইনটির খসড়া সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগে জমা দিয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুত আইনের বিষয়ে মতামত দিতে বিদ্যুত বিভাগে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় বৈঠকটি পিছিয়ে আগামী ৪ মার্চ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, কোম্পানিগুলোর উপরের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই)’ করা হয়েছে। এখনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বিভিন্ন মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কোন কোম্পানি ওই মাপকাঠিতে ন্যুনতম নম্বর না পেলে তাকে মাসুল দিতে হয়। কিন্তু শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখনও কোন কার্যকর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে বিদ্যুত বিভাগ মনে করছেন। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোকে এক ধরনের হুমকি হিসেবেও দেখছে বিদ্যুত বিভাগ। যে কারণে নতুন আইনে বিদ্যুত খাতকে শ্রম আইনের বাইরে রাখার বিধান সংযোজন করা হয়েছে। জানতে চাইলে আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, এতে শ্রমিকের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হবে বলে আমরা মনে করি না। শ্রম আইনে বলা রয়েছে যে আইনই বলবৎ থাকুক না কেন শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় শ্রম আইনই প্রযোজ্য হবে। তাহলে কেন এই ব্যবস্থা, জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলো কিছু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে আমরা তা বন্ধের চেষ্টা করছি। এতে বৃহত্তর অর্থে শ্রমিকদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জানা যায়, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিদ্যুত খাতের সংস্কারে কর্পোরাইজেশন অব বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নামে একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দেয়। এছাড়া গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত বিভাগে বৈঠক করার সময় পিডিবিকে পেট্রোবাংলার ন্যায় কর্পোরেশনে রূপান্তরের নির্দেশ দেন। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে লোকসান কমাতে পিডিবি’র রূপান্তর জরুরী হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর লোকশান দিয়ে যাচ্ছে তারা। বেশি দামে বিদ্যুত কিনে কমদামে বিদ্যুত বিক্রি করার পাশাপাশি সিস্টেম লস বৃদ্ধি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে নানা রকম দুর্নীতি এবং অনিয়ম বাসা বেঁধেছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে পাঁচটি বিদ্যুত বিতরণী কোম্পানির পাশাপাশি নতুন তিনটি বিতরণী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগ মিলে নতুন বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ নিয়ে সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং চট্টগ্রাম এলাকা নিয়ে সাউথ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠন করা হবে। অর্থাৎ বিতরণ কার্যক্রমকে পিডিবির আওতামুক্ত করা হবে। ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে আলাদা কোম্পানি এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জর পিডিবির বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হবে। যদিও পিডিবি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কোনক্রমেই পিডিবিকে আর ভাংতে দিতে চায় না তারা। পিডিবির শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জহিরুল হক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, কেউ চাইলেও শ্রমিকদের অধিকার হরণ করতে পারবে না। শ্রম আইনে শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেয়া হয়েছে। তা চাইলেই কেড়ে নেয়া সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন যেসব সংগঠনে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে সেগুলো তুলনামূলকভাবে ভাল চলছে। পিডিবির সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কোনক্রমেই পিডিবিকে ভাংতে দেব না। সরকারের কাছে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে এমন কিছু করা হবে না।
×