ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপের শুরুতেই উপ-মহাদেশে টানটান উত্তেজনা

উন্মাদনার ভারত-পাকিস্তান মহারণ আজ

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

উন্মাদনার ভারত-পাকিস্তান মহারণ আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান লড়াইকে তুলনা করা যায় কেবল ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের সঙ্গে। নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই, গোটা বিশ্ব যেখানে দুই ভাগে বিভক্ত! মাঠ-গ্যালারি ছাপিয়ে যে দ্বৈরথের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে, অগণিত ক্রীড়াপাগল মানুষের মনে। ভারত-পাকিস্তান লড়াই তাই বিশ্বকাপের মধ্যে অন্য বিশ্বাকাপ, উন্মাদনার মাঝে অন্য উন্মাদনা। এমনিতে চিরশত্রু দু’-দেশের ম্যাচ ঘিরে থাকে আগুন উত্তাপ, বিশ্বকাপ তাতে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। এ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু সেই ক্রিকেটযুদ্ধ, মাঠ ও টেলিভিশন মিলিয়ে যা দেখতে মুখিয়ে প্রায় দেড় শ’ কোটি দর্শক! এই ম্যাচ দিয়ে ভারত-পাকিস্তান দু’-দলেরই শুরু ১১তম বিশ্বকাপ মিশন। ক্রিকেট প-িতদের মতে, প্রতিটি দলের জন্য প্রথম ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। সুতরাং আজকের লড়াইয়ে জয়ী দল নিশ্চিত করেই মানসিকভাবে এগিয়ে যাবে। প্রশ্নটা যখন মানসিক তখনই উঠে আসে পরিসংখ্যান! ১৯৭৮ থেকে এ পর্যন্ত দু’-দল মোট ১২৬টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ভারতের ৫০টির বিপরীতে পাকিদের জয় ৭২ ম্যাচে, পরিত্যক্ত ৪, সাফল্য ৫৯.০১ ভাগ। তার মানে ওয়ানডেতে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের তুলনায় এগিয়ে মিসবাহ-উল হকের দল। এই তথ্যে পাকিস্তানী ভক্তদের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেইÑ ১৯৯২ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে পাঁচবার মুখোমুখি হয়ে শত্রু দেশের কাছে পাঁচবারই হেরেছে পাকিস্তান! ভারতীয় গ্রেট সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে বর্তমান পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহও তাই একমত, স্নায়ুর চাপ জয় করে যারা সামর্থ্যরে পুরোটা দিতে পারবে শেষ পর্যন্ত তারাই জিতবে। তবে এবার ইতিহাস বদলে দিতে তৈরি তারা। প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও সাম্প্রতিককালে ভারতের দুর্বল পারফর্মেন্সই মিসবাহদের স্বপ্ন দেখাছে। মাত্র একদিন আগে ৯২-এর বিশ্বজয়ী দলের সদস্য ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক মঈন খান বলেছেন, ভারতকে হারানোর এটাই সঠিক সময়। কেন? উত্তরটা সহজ গত আড়াই মাসের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট, ত্রিদেশীয় ওয়ানডে ও প্রস্তুতি মিলিয়ে এক ডজনেরও বেশি ম্যাচ খেলে একটিমাত্র জয় চ্যাম্পিয়নদের, সেটিও সর্বশেষ প্রস্তুতি পুচকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কাছে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে হারের ধাক্কা সামলে উঠেছে পাকিস্তান। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে উজ্জীবিত পাকিরা। ‘জানি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ভারতকে হারাতে পারিনি। কিন্তু এবার সেই ইতিহাস বদলে দিতে চাই। বিরল নজির স্থাপন করতে প্রবল ইচ্ছা, আর ক্ষুধা নিয়েই নামব আমরা। টি২০ বিশ্বকাপ ধরলে শ্রেষ্ঠত্বে এ রকম লড়াইয়ে আমি তিন তিনটি ম্যাচ খেলেছি। ২০০৭-এ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে দুটি এবং গত ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ছিলাম। তার পরও এর পরিষ্কার কোন উত্তর আমার কাছে নেই!’ বিশ্বকাপ এলেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে কেন এই অবস্থা? প্রশ্নের একটা ব্যাখ্যাও দেয়ার চেষ্টা করেন সময়ের বর্ষীয়ান (৪০+) এই তারকা ক্রিকেটার। মিসবাহ বলেন, ‘হয়ত বিশ্বকাপ বলে আমরা স্নায়ুর চাপটা নিতে পারি না। কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হারাই। হয়ত অনেকের মনে এমন বিশ্বাস দাঁড়িয়ে দেখে যে বিশ্বকাপে আমরা কখনই ওদের হারাতে পারব না! তবে এবার অবস্থাটা বদলাবে।’ ১৯৯২ বিশ্বকাপে প্রথম মুখোমুখি হয় দু’-দল। সেবার ভারতের কাছে ৪৩ রানে হারলেও শেষ পর্যন্ত ট্রফি জয় করে ইতিহাস গড়েছিল পাকিস্তান। সেটি এই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই। ১৯৯৬Ñএ ৩৯ রানে, ১৯৯৯ সালে ৪৭ রানে, ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬ উইকেটের পর, সর্বশেষ গতবার (২০১১) সেমিফাইনালে ভারতের কাছে ২৯ রানে হারে শহীদ আফ্রিদির পাকিস্তান। সেই আফ্রিদি আছেন, এবার তিনিই দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। প্রতিশোধটা নিতে তাই সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন ‘বুম বুম’। ব্যাট হাতে ফর্মে আছেন অধিনায়ক মিসবাহ। তবে ব্যাটিংটাই তাদের মূল চিন্তা। বিশেষ করে ভারতীয় লাইনআপের বিচারে পিছিয়ে পাকিরা। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকরের মতে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাই পার্থক্য গড়ে দেবে। যেখানে অগ্রভাগে থাকবে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও অজিঙ্কা রাহানেদের নাম। শেন ওয়ার্নের মতে স্নায়ুর চাপ জয় করতে দায়িত্বটা নিতে হবে সিনিয়রদের। আগুন ম্যাচের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেন ইউনুস খান, মিসবাহ, আফ্রিদি, ধোনি, কোহলিরা। তবে অধিনায়ক ধোনিকে ভাবাচ্ছে বোলিং। ইনজুরির জন্য ইতোমধ্যে ছিটকে গেছেন মূল পেসার ইশান্ত শর্মা। ছন্দে নেই ভুবনেশ্বর কুমার- মোহাম্মদ সামিরা। অস্ট্রেরিয়া সফর ও ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে বোলিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে তাদের। অবশ্য প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল করেছেন উমেশ যাদব-স্টুয়ার্ট বিনিরা। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি ফিট অপর অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা। ‘সত্যি বলতে আমাদের বোলিংটা প্রত্যাশিত নয়। ডেথ ওভারে পেসাররা ভাল করছে না। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা উজ্জীবিত হওয়ার মতো। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ বরে আমাদের কাছে এটির গুরুত্ব আরও বেশি। জয় দিয়ে শুরু করতে ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী। আশা করছি অগণিত ভক্তকে ভাল একটা ম্যাচ উপহার দিতে পারব।’ গত বছর ঢাকায় এশিয়া কাপে সর্বশেষ মুখোমুখি হয় দু’-দল। ভারতের ৮ উইকেটে করা ২৪৫ রান টপকে ১ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় পাকিস্তান। মাত্র ১৮ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করে শেষ মুহূর্তে জয়ের নায়ক আফ্রিদি কিন্তু আছেন আজও!
×