ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষতি পিছু ছাড়ছে না পোশাক শিল্পের

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ক্ষতি পিছু ছাড়ছে না  পোশাক শিল্পের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রানা প্লাজা ধসের পর থেকে ক্ষতি যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের। পশ্চিমা ক্রেতা জোট এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের রিপোর্টে একদিকে যেমন বন্ধ হচ্ছে পোশাক কারখানা; অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ ও চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বাতিল হচ্ছে ক্রেতাদের পোশাকের অর্ডার। ফলে এ খাতে দিন দিন বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। দেশের তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, হরতাল-অবরোধে পোশাক সাপ্লাই চেইন ধসে পড়েছে। ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়াসহ বিশ্ববাজারে এ শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশে তাঁদের অর্ডার প্লেসমেন্ট ও নেগোসিয়েশনের বিষয়ে কোনো মিটিং করতে পারছেন না। ফলে স্বাভাবিক অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংগঠনটি দাবি করছে, এ মন্দাবস্থার ফলে পোশাক শিল্পের আগামীর সম্ভাবনাগুলো দিন দিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভারতে চলে যাচ্ছে। বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, এক দিন হরতাল বা অবরোধে তৈরি পোশাক শিল্পে অন্তত ২শ’ ১৫ কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়। সে হিসাবে গত ৩২ দিনে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮শ’ ৮০ কোটি টাকা। প্রতিদিন টেক্সটাইল সুতা, বোতাম, জিপার, সুতার কার্টন, এমব্রয়ডারি, ওয়াশিং, ডায়িংসহ বিভিন্ন খাতে যোগানের পরিমাণ প্রায় ২শ’ ৮০ কোটি টাকা, যা এই অস্থিরতার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি সংগঠনটি। নানা কারণে পোশাক মালিকরা তাঁদের কারখানার সঠিক ক্ষতির পরিমাণ জানাতে চাচ্ছেন না। তবে বিজিএমইএ সূত্র বলছে, ২৩টি কারখানার মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৯ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১শ’ ৪৮ কোটি টাকা। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই ২৩ কারখানায় অর্ডার বাতিল হয়েছে ৯২ লাখ ৯২ হাজার ২শ’ ৩৬ ডলার পণ্যের। আর ডিসকাউন্টে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৭শ’ ৩৩ ডলার, এয়ারফ্রেইড বাবদ ক্ষতি সাত লাখ ৮২ হাজার ৯শ’ ৬৫ ডলার, বিলম্বিত জাহাজীকরণে ক্ষতি ৪৪ লাখ ৯২ হাজার ২শ’ ২১ ডলার এবং নাশকতার আগুনে ক্ষতি হয়েছে ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ১শ’ ৪৩ ডলার। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দ্বিতীয় সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি জানান, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পোশাক রপ্তানি, কমে যাচ্ছে অর্ডার। তিনি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। আমরা ব্যবসায়ী, নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই। আমরা এমন জ্বালাও-পোড়াও চাই না। পোশাক মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে চলমান অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে কারখানা মালিকরা তাঁদের পণ্য পরিবহনসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। শ্রমিকদের তৈরি করা পোশাক সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক কারখানায় শ্রমিকদের জানুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধে সংশয় তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশে ব্যবসার পরিধি কমিয়ে আনছেন। ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশের প্রতি নজর দিচ্ছেন তাঁরা। ফলে পোশাক খাত হুমকির মুখে পড়ছে। শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, অস্থিরতার কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে এখন কাজ কমে গেছে। বহু কারখানায় ওভারটাইম কমে গেছে। কোন কোন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইও শুরু হয়েছে। গত এক মাসের অস্থিরতার কারণে প্রায় ২শ’ কারখানা বিপাকে পড়ে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকরা কাজের নিরাপদ পরিবেশ চায়। এমন সহিংসতা চায় না।
×