ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ‘আম-আদমি পার্টি’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের ‘আম-আদমি পার্টি’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে

আমার এই লেখাটি যখন পাঠকের হাতে পৌঁছাবে ততক্ষণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন আর ঘটনা পার করে এসেছি। বাংলাদেশের বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দেশের মানুষ পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালবাসা দিবস, মানে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করেছেন। প্রতি বছরের মতো এই দিনও তরুণ তরুণীরা বেশ ঘটা করে দিনটি পালন করেছে। এই দুটি দিন উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বেশ জমকালো অনুষ্ঠান হয়েছে যা সরাসরি দেশের মানুষ কয়েকটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের কল্যাণে দেখতে পেয়েছে। বেগম জিয়া যেদিন হতে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মানুষ পোড়ানোর মচ্ছব শুরু করেছেন ততদিন পর্যন্ত স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা সপ্তাহের কর্মদিবসে তাদের বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। হরতালের দিন পেট্রোলবোমা হতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কর্তৃপক্ষ স্কুল কলেজ বন্ধ রেখেছে। তাদের জন্য পয়লা ফাল্গুনের দিন, শুক্রবারেও ক্লাস হয়েছে। বেগম জিয়ার কারণে সময় মতো আমাদের বাচ্চারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাদেরও এখন শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা দিতে হয়, স্কুল কলেজে যেতে হয়। আমার বাসার সামনে একটি মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র আছে। পরীক্ষার কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে গলিসম রাস্তায় এক ফুল বিক্রেতা বসে ফুল বিক্রি করছে। বেলা বারোটায় পরীক্ষা শেষ হলো। অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে সেই ফুল বিক্রেতার কাছ হতে একটি রজনীগন্ধা বা গোলাপ ফুল কিনে বাড়ি ফিরেছে। অভিভাবকরাও তা কিনে দিতে কোন কার্পণ্য করেননি। এটাই আমার বাংলাদেশ। শত বাধা বিপত্তির মধ্যে এই দেশের মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে। বেগম জিয়া গত ৩৯ দিন ধরে দেশের মানুষকে ঘরে বন্দী করে রাখার ঘোষণা করেছিলেন কারণ তার ক্ষমতা চাই। সাধারণ মানুষ তাতে খুব বেশি কর্ণপাত না করে ঘর হতে বের হয়ে এসেছেন। কষ্ট হচ্ছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের। তাতে বেগম জিয়ার কর্ণপাত করার সময় নেই। তিনি তো আর গরিব চাষাভুষার জন্য রাজনীতি করেন না। গুলশান বারিধারার এলিট শ্রেণীর সঙ্গে তার যত কাজ কারবার। ল-নে এখন তাঁর সদর দফতর। এর মধ্যে তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো অর্থপাচারের দ- মাথায় নিয়ে কুয়ালালামপুরে মৃত্যুবরণ করেছে। পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকায় কবর দিয়ে কুলখানির আগেই আবার কুয়ালালামপুরে ফিরে গেছেন কারণ বেগম জিয়ার দুই নাতনির পরীক্ষা। বেগম জিয়া ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে চলে না যাওয়া পর্যন্ত দেশের বিরুদ্ধে তার চলমান যুদ্ধ থামবে না। অবশ্য তিনি বলেছেন তার এই যুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ। এই সব হচ্ছে রাজনৈতিক ভাষা। এদেশের মানুষের তা বুঝতে কষ্ট হয় না। যুদ্ধেও মূল কারণ জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা আর নিজের ও বড় ছেলে তারেক রহমানকে দুর্নীতির মামলা হতে রেহাই দেয়া। বেগম জিয়ার যুদ্ধের জোশে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সুপ্রীমকোর্ট বারের এক সময়ের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৩ ফেব্রুয়ারির পর শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় থাকছেন না। কয়েকজনের কাছে জানতে চাই ১৩ তারিখের মাজেজা কী? তাদের কয়েকজন জানালেন ১৪ তারিখ তো বিশ্ব ভালবাসা দিবস। পেট্রোলবোমা না মেরে সাধারণ মানুষকে ফুল দিয়ে শেখ হাসিনার পতন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাবেন বলে এই দিনটিকে জয়নাল অবেদিন বেছে নিয়েছিলেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা তাদের সেই সুযোগ দিতে রাজি নন। বিএনপি-জামায়াত জোট না চাইলেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর সঙ্গে আছে ১৪ তারিখ হতে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের ডামাডোল। সার্বিক বিচারে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে জয়নাল আবেদীন সাহেবদের শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করার জন্য আরও দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ হতেও বেশ কয়েকাটি অগ্রহণযোগ্য কাজ করা হয়েছে। বেগম জিয়ার অফিস কাম রেসিডেন্সে বিদ্যুৎ, ডিস লাইন, মোবাইল ফোন যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা মোটেও উচিত হয়নি। পরে অবশ্য বিদ্যুৎ ও মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। বাকিগুলোও পুনর্¯’াপিত হলে ভাল হয়। শুনেছি এদেশের আর দশজন মহিলার মতো তিনিও সন্ধ্যায় বেশ আরাম করে ভারতের জি-বাংলা আর স্টার জলসার মহিলাদের ষড়যন্ত্রসর্বস্ব বাংলা সিরিয়াল উপভোগ করেন। এ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা সরকারের মোটেও উচিত হয়নি। ইন্টারনেট আর মোবাইল সংযোগ চালু থাকলে সরকারের কোন ক্ষতি নেই। বর্তমানে সারাবিশ্বের অনেক দেশেই সব টেলিফোন কল ও ইন্টারনেটে আড়ি পাতার সফ্টওয়ার পাওয়া যায়। জানা মতে বাংলাদেশেরও তা আছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তা অপরিহার্য। বেগম জিয়া কার সঙ্গে কী কথা বললেন তা মুহূর্তেই জানা সম্ভব। ইতোমধ্যে তাঁর এবং তারেক রহমানের একাধিক টেলিফোন সংলাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। নাশকতা চালাতে বেগম জিয়ার নির্দেশ সংবলিত আলাপচারিতার টেপ এখন সহজলভ্য। বুধবার হতে নাকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেগম জিয়ার আবাসস্থলে অবস্থানরত অর্ধশত দলীয় নেতাকর্মী ও কর্মচারীদের খাবার নিতে বাধা দিচ্ছে। এতে বেগম জিয়াসহ সকলের কষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে তারা পাকিস্তান হতে সরবরাহকৃত খেজুর ও খোরমা আর বাংলাদেশের মুড়ি দিয়ে তাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করছেন। এরই মধ্যে গত ৭ তারিখ দেশ ও জনগণ নিয়ে সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকেন এমন কিছু সুশীল ব্যক্তি এক সঙ্গে হয়েছিলেন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে। নিজেদের তারা দিল্লীর কেজরিওয়ালের ‘আম-আদমি পার্টি’ মনে করেন। অনেক চিন্তা ভাবনা আর সলাপরামর্শ করে ঠিক করলেন দেশের এই অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেতে হলে দুই নেত্রীর মধ্যে আলাপ আলোচনার প্রয়োজন। উদ্যোগ নিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এই উদ্বিগ্ন নাগরিকরা পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ মারাকে কদাচিৎ জোরালোভাবে নিন্দা জানান অথবা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ মানুষকে সমবেদনা জানানোর প্রয়োজন মনে করেন। উদ্বিগ্নদের একজন আবার রাতের একটি জনপ্রিয় টকশোতে গিয়ে বলেন, এই পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস কে করছে তার কোন প্রমাণ যেহেতু তার কাছে নেই তা হলে ধরে নিতে হবে তা সরকারই করছে। বলেন, পেট্রোলবোমা কারা মারে তা আদালত নির্ধারণ করবে। তিনি আবার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টাও ছিলেন। টিভির টকশো প্রযোজকদের কাছে বেশ সমাদৃত। টিভির টকশোর বদৌলতে প্রতিরাতে কত ভুয়া ব্যারিস্টার আর স্বঘোষিত সংবিধান বিশেষজ্ঞের বাণী যে দেশবাসীকে শুনতে হয় তার কোন হিসাব নেই। এমন একজন ‘সংবিধান বিশেষজ্ঞ’কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। জানা গেল তিনি একজন আয়কর আইনজীবী। বেগম জিয়ার খেদমতে আছেন। তো এই সব উদ্বিগ্ন নাগরিকরা উল্লিখিত তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দেয়ার জন্য একটি অভিন্ন পত্র তৈরি করলেন। মনে হতে পারে দেশের বর্তমান চলমান চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য তিনজনই সমানভাবে দায়ী। জানা গেল বঙ্গভবন সেই পত্র গ্রহণ করতে সময় দিতে অপারগতা জানিয়ে দিয়েছে। সরকারী দল এই উদ্যোক্তাদের তুমুল সমালোচনা করে বলেছে দেশে যখন জামায়াত-বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস চলছে এই সব পরামর্শ গ্রহণ করার কোন অবকাশ নেই। বেগম জিয়া তার বক্তব্য আবার বিদেশী গণমাধ্যম এএফপির মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। দেশের গণমাধ্যমের ওপর তার আবার তেমন খুব আস্থা নেই। তিনি বলেছেন আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে তারপর মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আবার এই সব ডামাডোলের মধ্যে এই কথিত সংলাপের উদ্যোগ থেকে দলবদ্ধ নাগরিকরা ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বাদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের একজন। সরকারী দল যখন এই সুশীলদের এইসব কর্মকা-কে তুমুল সমালোচনা করা শুরু করল তখন উদ্যোক্তাদের একজন ড. কামাল হোসেন সমালোচকদের ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে এক হাত নিলেন। ড. কামাল হোসেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও সফল আইনজীবী। তাঁর রাজনৈতিক সকল অর্জন বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে। যে মুহূর্তে তিনি তাঁর বাইরে চলে গিয়েছেন সেই মুহূর্তে তিনি রাজনৈতিকভাবে হিরো হতে জিরো হয়েছেন। মান্না এক সময়ের ডাকসাইটে ছাত্র নেতা। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি ছিলেন। গুছিয়ে তাঁর বক্তব্য ভালভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। বেশ সজ্জন। সমাজতন্ত্রের মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সমাজতন্ত্রকে শুভ বিদায় জানিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে বগুড়া-২ আসন হতে নৌকা মার্কায় প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপির রেজাউল করিম ডিনার কাছে ৪৭৮১৯ ভোট পেয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। ডিনা পেয়েছিলেন ১,১৬,৮০৬ ভোট। প্রীতিভাজন মান্না অনেক দিন ধরে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ‘নাগরিক ঐক্য’ নামের একটি রাজনৈতিক দলেরও গোড়াপত্তন করেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সব সময় বেশ উদ্বিগ্ন। বলেন, পেট্রোলবোমা আর ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা দুটিই একই জিনিস। পেট্রোলবোমায় সরকারের হাত থাকতে পারে। নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য শনিবার দু’ঘণ্টা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থান করার কথা আছে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তম। বন্ধু মুনতাসীর মামুন নাম দিয়েছেন ব্রিজ উত্তম কাদের সিদ্দিকী। টাঙ্গাইলে ব্রিজ করবেন বলে সরকার হতে প্রচুর অর্থ নিয়েছিলেন। দেশ ও জনগণের চিন্তায় ব্রিজ করার আর সময় হয়নি। এলাকার মানুষ অপেক্ষায় আছেন। দেশের চলমান অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে মতিঝিলে শয্যা পেতেছেন। তাঁর ভক্তরা গিয়ে তাঁর শয্যায় বসে সেলফি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। ফিরে আসি নাগরিক বা সুশীলদের কথায়। ২০০৭ সালের নির্বাচনের বেশ আগে গুলশানের এক অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে সমবেত হয়েছিলেন অনেক কুলিন সুশীল। উদ্যোক্তা সিপিডি। সঙ্গে ছিল দুটি জনপ্রিয় দৈনিক আর একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল। বলা যেতে পারে মিডিয়া পার্টনার। সকলে সম্মিলিত কণ্ঠে বললেন ২০০৭-এর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সব দলকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দিতে হবে। এটি তাঁদের আন্দোলন। নামকরণ করা হলো ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’। যোগ দিয়েছিলেন আমাদের নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস আর প্রফেসর রেহমান সোবহানের মতো বিজ্ঞজনেরা। চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। ড. ইউনূসের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইল কোন একটি সংসদীয় এলাকায় কোন দলই আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি ‘যোগ্য প্রার্থী’ না দেয় তা হলে কী করবেন? তিনি উত্তরে চটজলদি জানালেন সেখানে আমরা আমাদের প্রার্থী দেব। এই প্রসঙ্গে প্রফেসর রেহমান সোবহানের মন্তব্য ওটি ‘ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত মত’। যখন সকল দলের রাজনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধ তখন তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘নাগরিক শক্তি’ নামের একটি রাজনৈতিক দল। সংক্ষেপে ‘নাশ’। তেমন একটা সাড়া না মেলাতে তিন মাসের মাথায় দল গুটিয়ে নিলেন। ২০০৭ সালের নির্বাচনকে নিজের মতো করার জন্য বেগম জিয়ার সে কী আপ্রাণ চেষ্টা। বাদ সাধলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অন্য সমমনা দলগুলো। বিদগ্ধ নাগরিকরা তখন অনেকটা লাজোয়াব। এলো সেনা সমর্থিত এক এগারোর সরকার। নাগরিকদের অনেকেই নতুন স্যুট পরে ছুটলেন ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হতে। তখন একেকজনের চেহারায় নূরানী ঝলক। যাদের ভাগ্যে উপদেষ্টা হওয়া জুটল না তাঁদের কেউ কেউ সান্ত¡না পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে পাড়ি জমালেন বিদেশে। যারা রয়ে গেলেন তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন জনগণকে এটা বুঝাতে এই দেশে রাজনীতিবিদদের দিয়ে কিছু হবে না। ভাল যদি কিছু হয় তা হলে তা হবে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে। জন্ম হলো ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার। যত নষ্টের মূল এই দুই নেত্রী। এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে পারলে দেশের সব সমস্যার সমাধান। আসলে এটি ছিল ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা। শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে হবে। ২১ আগস্ট চেষ্টা করা হয়েছিল। নেতাকর্মীরা নিজের জীবন দিয়ে তাঁকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ্র ইচ্ছা তেমনই ছিল। এবার আর তাঁর রক্ষা নেই। একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিক (বর্তমানে প্রয়াত) কৃপাপ্রার্থী সুশীল আর সেনা বাহিনীর মাঝে দূতিয়ালি শুরু করে দিলেন। তিনি ঠিকই জানেন ক্ষমতার শিকড় কোথায়। না কোন কিছুই ছক অনুযায়ী হলো না। ২০০৮-এর ছাত্র-শিক্ষক জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সব কিছু ভেস্তে গেল। তারপরের ইতিহাস সকলের জানা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মিডিয়া পার্টনারদের একজন কর্মকর্তা এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁর টিভিকে অনেকে বলেন দিগন্ত টিভির বিকল্প। ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। জাসাসের একজন সক্রিয় সমর্থককেও এবার এই পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে (মরণোত্তর)। আওয়ামী লীগের সমস্যা হচ্ছে এত কিছুর পরও তারা শত্রু মিত্র চিনতে সব সময় ভুল করেন এবং তার জন্য সব সময় চড়া মূল্য দিতে হয়। বিএনপি এই কাজটি কখনও করবে না। দেশে দীর্ঘ সময় ধরে বেগম জিয়া ঘোষিত যে যুদ্ধ চলছে তা সরকার পুরোপুরি বন্ধ করতে সফল হয়নি। করতে হলে সরকারের হাতে যত রকমের আইনী অস্ত্র আছে তা শক্তভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমার বন্ধু আলম আওয়ামী লীগের একজন বড় সমর্থক। তবে সরকারের ওপর ভীষণ বিরক্ত। বলেন, আওয়ামী লীগকে কোথাও তো দেখা যায় না। একা শেখ হাসিনা বা সরকারের পক্ষে সব কিছু সামাল দেয়া তো সম্ভব নয়। সত্তরে বঙ্গবন্ধুর কাছে তো সরকার ছিল না। ছিল আওয়ামী লীগ। কোথায় সেই দল? বলেন, রাত নয়টার পর হাইওয়েতে গাড়ি চালানো বন্ধ না করে প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেখানে সেনা বাহিনী নামানো যেতে পারে। সে আরও বলে বুঝতে পারি না বিএনপির নতুন বিন লাদেন তাদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিনকে কেন এখনও লাদেনি কায়দায় হরতাল ঘোষণা করতে দেয়া হয়? আর কেনই বা গণমাধ্যম তা প্রচার করে? তার মতে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যদি একাধিক জনসভা করে জামায়াত-বিএনপি আর তথাকথিত সুশীলদের বদমতলব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে পারেন তা হলে জাতির অনেক লাভ। সব শেষে একটি সরল জিজ্ঞাস্য। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কতজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন? জবাব দিতে পারলেন না তো। ১৬২ জন। ১৬টি আসনে কোন প্রার্থীই ছিল না। বিশ্বাস হয় না? নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে দেখুন অথবা বইমেলায় পাওয়া গেলে এএসএম শামছুল আরেফিনের বিশাল গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের নির্বাচন-১৯৭০-২০০১’-এর একটি কপি সংগ্রহ করতে পারেন। যাঁরা রাতে টকশো অথবা লেখালেখি করেন তাঁদের কাজে লাগবে। সকলকে বসন্ত ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক।
×