ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আয়

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আয়

প্রতিযোগিতার দৌড়ে বাংলাদেশের তৈরি তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জাম ও উপকরণ বিদেশের বাজারে বড় ধরনের জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে সফটওয়্যার রফতানি করে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে দেশ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশ আসবে তথ্যপ্রযুক্তির খাত হতে। প্রতিবছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি বাড়বে। দেশে এখন প্রতিবছর ১০ হাজারের বেশি আইটি স্নাতক বের হচ্ছে। সরকার চাইছে আইটি খাতে ১০ লাখ পেশাদার মানবসম্পদ তৈরি করতে। এর মাধ্যমেই বছরপ্রতি এক বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কম্পিউটার কিংবা টেলিযোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ, গ্রহণ, প্রেরণ, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিই তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফর্মেশন টেকনোলজি তথা আইটি। বর্তমান যুগে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব ও ব্যবহার ব্যাপক। তথ্যপ্রযুক্তিতে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং ইন্টারনেট, ডাটাবেস ইত্যাদি সংযুক্ত। দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজারের মতো সাইট ও ই-কমার্স ওয়েবপেজ রয়েছে। যার মাধ্যমে গত বছর ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে আয় হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে ৯শ’ থেকে এক হাজার কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি করছেন। এই শিল্পে কর্মরত রয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। আগামী বছরের শেষ নাগাদ সফটওয়্যার শিল্পে এক লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করবেন। সারাদেশে ৫৩ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজেই সরকারী সব সেবা নিতে পারছেন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভূমি রেকর্ড, পরীক্ষার ফলাফল, সরকারী বিভিন্ন ফরম, মোবাইল ব্যাংকিং, জীবন বীমা, ইংরেজী শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরামর্শ ডিজিটাল হয়েছে। দেশের বর্তমানে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রচ- আগ্রহী। আইটি ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের হার বাড়ছে দ্রুত। ১০ হাজারের বেশি আইটি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে প্রতিবছর। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দেশের ১২টি স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ মেলায় জনগণের অংশগ্রহণ আশাবাদ সঞ্চার করে। প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজন আরও বিনিয়োগ। বেসরকারী উদ্যোক্তাদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। যদিও দেশে তথ্য ও প্রযুক্তির জন্য ব্যক্তিগত খাত থেকে বিনিয়োগ গড়ে ওঠেনি। মেলায় তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যে, সারাদেশে স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টারগুলো জনগণকে প্রণোদনা প্রদান করে যাচ্ছে। ফলে এ খাতে ক্রমশ জনসম্পৃক্ততা গড়ে উঠছে। গত বছর ফ্রি-ল্যান্সারদের মাধ্যমে দেশে ২ কোটি ডলার এসেছে। এ বছর তা ৪ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে সফটওয়্যারের চাহিদা বাড়লেও সরকারের তেমন কোন পৃষ্ঠপোষকতা থাকছে না। যখনই সরকার সফটওয়্যার কিনছে তখনই দেখা যাচ্ছে, তা বিদেশী কোম্পানির উৎপাদিত। দেশীয় কোন কোম্পানি তাতে ঠাঁই পাচ্ছে না। মেধাভিত্তিক এ শিল্পটি সংরক্ষণ করা না গেলে শিল্পের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়। ডিজিটাল মেলায় প্রধানমন্ত্রীর আইটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ইন্টারনেট গ্রাহক দেশের শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশ হয়েছে। মোবাইল গ্রাহক ২০ মিলিয়ন থেকে ১২০ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। প্রযুক্তি খাতের আরও উন্নতি ও বিকাশের সুবিধার্থে কর অবকাশ সীমা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক দূর এগিয়েছে। ‘রূপকল্প-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বড় বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনশক্তি এ খাতে দক্ষতার পরিচয় দেবেÑ এমন প্রত্যাশা জাগে তাদের বর্তমান প্রাগ্রসর কার্যক্রমে।
×