ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতেই এ সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতেই এ সন্ত্রাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৬ সপ্তাহ ধরে টানা অবরোধ-হরতাল ও ভয়াবহ সহিংসতা-নাশকতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রথিতযশা ১৬ অর্থনীতিবিদ। সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছেন, এই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর অশুভ তৎপরতা রয়েছে। এর মূলোৎপাটনের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে সব রায় কার্যকর করা জরুরী। এ অবস্থায় সন্ত্রাস-নাশকতায় যারা লিপ্ত তাদের বোধোদয় না হলে, এসব জনবিরোধী কর্মকা- বন্ধ করতে সরকারকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানান বিশিষ্টজনেরা। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জামান আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে শিক্ষাবিদ-অর্থনীতিবিদেরা বলেন, বিগত ৬ সপ্তাহ ধরে টানা অবরোধ-হরতাল এবং ভয়াবহ সহিংসতা-নাশকতায় সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে, যা চলমান। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পেট্রোলবোমায় ঝলসানো মানুষ অসহ্য কষ্টে কাতরাচ্ছেন। তারা বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শিশু-বয়োবৃদ্ধ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত জীবন অতিবাহিত করছেন। অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষয়-ক্ষতি ঘটছে। শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন সংকটে অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহসহ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষক, বিশেষ করে দরিদ্র কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পেরে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। প্রধান খাদ্যশস্য বোরো ধান রোপণের মৌসুমে উপকরণ সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এ ধানের পরবর্তী উৎপাদন ব্যাপকভাবে বিঘিœত হবে। চলমান সহিংসতায় তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা নিঃশেষ হতে চলেছেন জানিয়ে তারা বলেন, ক্ষুদ্র উৎপাদক ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ী অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। কৃষিশ্রমিকসহ খেটে-খাওয়া মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। কখনও স্বল্প মজুরিতে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। তাদের জীবিকার সব উপায় বিধ্বস্ত প্রায়। আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে, তাকে রাজনীতি বলা যায় না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভয়াবহ সহিংসতা-নাশকতা এভাবে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, পুড়িয়ে মানুষ মারে, দেশের নিরীহ সাধারণ জনগণের মনে গভীর ভীতি সঞ্চার করে, সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপায় ধ্বংস করে এবং অর্থনীতিতে ধস নামানোর লক্ষ্যে নিয়োজিত, তা কোনও অর্থেই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকা- হতে পারে না। এসব নিছক সন্ত্রাস। এ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর অশুভ তৎপরতাও রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর মূলোৎপাটনের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে সব রায় কার্যকর করা জরুরী। এ অবস্থায় সন্ত্রাস-নাশকতায় যারা লিপ্ত তাদের বোধোদয় না হলে, এসব জনবিরোধী কর্মকা- বন্ধ করতে সরকারকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে উদ্ভূত দেশগড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী তাদের কর্মকা- চালানোর সুযোগ পায়। তাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœœ রেখে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাকল্পে সংলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক শক্তির প্রতি আমরা উদ্বাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দান থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছি। সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদেরা বলেন, সব ধরনের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনের মাধ্যমে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশের সুস্থ টেকসই গঠনতান্ত্রিক বিকাশে প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সম্ভাব্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য দেশবাসীর প্রতি মহান একুশকে সামনে রেখে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আবুল বারকাত, অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, ড. মোস্তফা কামাল মুজেরী, অধ্যাপক ড. আব্দুর সাত্তার ম-ল, ড. জায়েদ বখ্ত, খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, অধ্যাপক হান্নানা বেগম, ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক শফিক উজ জামান, অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব আলী, (ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা), ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, এফসিএ (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি), মসিহ্ মালিক চৌধুরী, এফসিএ (সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস, বাংলাদেশ), অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র নাগ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস)।
×