ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী

ভারত বা ভিয়েতনাম নয় অভ্যন্তরীণ সমস্যাই গার্মেন্টসে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভারত বা ভিয়েতনাম নয় অভ্যন্তরীণ সমস্যাই গার্মেন্টসে বড় চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আলোচনাসভায় বিশেষজ্ঞগণ বলেন, অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যাই বাধাগ্রস্ত করেছে দেশের তৈরি পোশাক রফতানি। এর মধ্যে রয়েছে জমি, গ্যাস ও বিদ্যুত সঙ্কট, দুর্বল অবকাঠামো আর শ্রমিকের অদক্ষতা। এর সঙ্গে যোগ হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) চেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের রফতানির ওপর ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাব্য প্রভাব’ আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অভিযোগ স্বীকার করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভিয়েতনামের গ্যাস, বিদ্যুত ও জমির সঙ্কট নেই। সেখানে যে কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে এসব সুবিধা দেয়া হয়। এই আলোচনাসভার আয়োজন করে যৌথভাবে বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোস্তফা আবিদ খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এতে আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা জিল্লুল হাই রাজী, বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বিএফটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী ড. মজিবুর রহমান ও শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার প্রমুখ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত বা ভিয়েতনাম নয়; তৈরি পোশাক শিল্পে অভ্যন্তরীণ সমস্যাই বড় চ্যালেঞ্জ। ভিয়েতনামে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে। বাংলাদেশে তেমনটাই থাকে না। এখানে হরতাল কিংবা অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কাজ হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ভিয়েতনামের বড় জুতো প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কারখানা স্থাপন করেছিল। আমরা তাদের জায়গা দিতে পারেনি। জায়গা না পেয়ে তারা ভিয়েতনামে কারখানা স্থাপন করেছিল। আমাদের শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ভিয়েতনাম কিংবা ভারতের জায়গা সমস্যা নেই। ইউরোপের বাজারে ভিয়েতনাম বা ভারত এফটিএ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনাম কিংবা ভারতের এফটিএ সুবিধা আমাদের জন্য বড় সমস্যা নয়। সমস্যা আমাদের নিজেদের মধ্যে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় ইউরোপের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছি। বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কাজ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কোন রাজনৈতিক সমস্যা নয়। এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। কিছু হতাশাগ্রস্ত বুদ্ধিজীবী আছেন যারা এই নাশকতাকারীদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। সন্ত্রাসী আর রাজনীতিবিদ এক কাতারে আসতে পারে না। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ভিন্নতা রয়েছে। তাই ভিয়েতনাম বাংলাদেশের প্রতিযোগী হতে পারে না। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশের পোশাক শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা জিল্লুল হাই রাজি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেড়েছে। ভিয়েতনাম এখন শুধু পোশাক রফতানিতে আগ্রহী নয়, তারা ইউরোপের বাজারে অন্য পণ্য রফতানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশ এই বাজারে পোশাক নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এফটিআইয়ের চেয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা জরুরী। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে বলে মনে করেন তিনি। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভিয়েতনাম বা ভারতের ব্যবসার উন্নয়ন নতুন কোন ঘটনা নয়। কিছু দেশ রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগ সুবিধা পায়; ভিয়েতনাম তার একটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া। তাই এফটিএর চেয়ে বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. মনসুর। এছাড়া বাণিজ্যিক কূটনীতি বাড়ানোর মত দেন তিনি। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া পরিবেশও আরও উন্নত করা দরকার। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে মোস্তফা আবিদ খান ইউরোপের বাজারে ভিয়েতনাম ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ তার মোট রফতানির ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ রফতানি করে। সেখানে ভিয়েতনাম ২২ দশমিক ৩ শতাংশ ও ভারত ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কিছুটা ইউরোপনির্ভর। আবার ভিয়েতনাম ইউরোপের বাজারে রফতানি বৃদ্ধি করতে পারছে না। কারণ দেশটি তাদের রুলস অব অরিজিনের শর্ত সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। এটা করতে পারলে দেশটির রফতানি বেড়ে যাবে। তিনি মনে করেন ভিয়েতনাম ও ভারত এফটিএ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের পোশাক খাত ইউরোপের বাজারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
×