ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউক্রেন চুক্তিতে বিজয়ী পুতিন

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইউক্রেন চুক্তিতে বিজয়ী পুতিন

ইউক্রেনীয় অস্ত্রবিরতি চুক্তি থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনই সবচেয়ে বড় বিজয়ী রূপে অবির্ভূত হয়েছেন বলে মনে হয়। এ চুক্তির ফলে রাশিয়া কেবল পাশ্চাত্যের বাড়তি নিষেধাজ্ঞার হাত থেকেই বেঁচে যায়নি, ইউক্রেনকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহও এড়াতে পেরেছে। রাশিয়া, ইউক্রেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতারা বৃহস্পতিবার বেলারুশে দীর্ঘ আলোচনার ওপর ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে অস্ত্রবিরতি ঘটাতে ঐ চুক্তি সই করেন। এ অস্ত্রবিরতি শনিবার মধ্যরাত থেকে পূর্ব ইউক্রেনে কার্যকর হওয়ার কথা, যদিও বিবদমান উভয় পক্ষ ইউক্রেন সরকার ও রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান রয়ে গেছে। বিদ্রোহীরাও চুক্তিতে সই করে। বৃহস্পতিবারও সরকারী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। ঐ অঞ্চলে প্রায় এক বছর ধরে চলমান লড়াইয়ে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়। ইউরোপীয় নেতারা মিনস্কে বৃহস্পতিবার ক্রমবর্ধমান ইউক্রেনীয় লড়াই প্রশমনের শেষ চেষ্টা হিসেবে ঐ শান্তিচুক্তি সমর্থন করেন। চুক্তি সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ চলার মধ্যে পুতিনই সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন বলে মনে হয়। যুদ্ধ উসকে দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে পশ্চিমাদের আলোচনা তিনি স্পষ্টত নিষ্ক্রিয় করে দেন। দীর্ঘ আলোচনার পর ইউক্রেনীয় ও বিদ্রোহী নেতার ঐ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হন এবং ইউক্রেন বিদ্রোহী অধিকৃত ভূখ-গুলোকে আরও স্বশাসন দেয়ার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণে স্বীকৃত হয়। কিন্তু ইউক্রেন জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতারা চুক্তি যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। যখন সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত অনুরূপ এক চুক্তি দ্রুত ভেঙ্গে পড়েছিল, তখন এ চুক্তিটি কিভাবে সফল হবে তা স্পষ্ট নয়। কাজেই পুতিনই এমন এক লড়াই বন্ধের চেষ্টায় জয় দাবি করতে পারেন যে লড়াইয়ে জড়িত থাকার কথা তিনি সব সময়েই অস্বীকার করে এসেছেন। ইউক্রেন বিদ্রোহী অধিকৃত ভূখ-কে নতুন স্বায়ত্তশাসন দেয়ার চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেই চেষ্টা হবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে জটিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে ইউক্রেনের প্রয়াস নিয়ে সৃষ্ট রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে ক্রেমলিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। পুতিন তেমন কিছু দেয়ার প্রস্তাব করেননি, কিন্তু তিনি অন্তত এখনকার মতো ইইউর আরও জোরালো নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কিয়েভের সেনাবাহিনীর জন্য মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা দূর করেছেন। ১০ মাসের ইউক্রেনীয় লড়াইয়ে অন্তত ৫ হাজার ৪শ’ লোক নিহত হয় এবং ১০ লাখেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয় বলে জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে জানানো হয়। এ সংঘর্ষ রাশিয়া ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার উত্তেজনাকে ঠা-া লড়াইয়ের পর্যায়ে নিয়ে যায়। মার্চ মাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল ছিল এক পৃথক উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা এবং সেটি চলতি সপ্তাহের আলোচনায় স্থান পায়নি। নেতৃবৃন্দ কূটনৈতিক ও লড়াইরত যোদ্ধাÑ সবাই একমত হয় যে অস্ত্র বিরতি বিরাট বাধার মুখে পড়বে। ভারি অস্ত্রশস্ত্র রণাঙ্গন থেকে অন্তত ৩০ মাইল দূরে সরিয়ে নিতে হবে চুক্তির এ শর্ত পালন নিশ্চিত করার সামান্য উপায়ই রয়েছে। আর ইউক্রেনের দখলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন দেবালৎসেভের মর্যাদা নিয়েও মতৈক্য হয়নি । সেখানে সম্ভবত প্রায় ৮ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্যকে বিদ্রোহীরা ঘিরে রেখেছে। জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মেরকেল এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, মিনস্ক চুক্তির প্রতি সম্মাান দেখানো হলেই কেবল রাশিয়ার উপর ইতোপূর্বে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু জার্মান নেতা মেরকেল সতর্ক করেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য স্বাক্ষরিত ঐ চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করা হলে ইইউ রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তবে চুক্তিটিতে অস্ত্র অপসারণ ও বন্দী বিনিময়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বড় বড় ইস্যুর মীমাংসা করার কাজটি বাকি রয়েছে। তিনি জানান, সম্মত অস্ত্র বিরতির প্রতি সম্মান দেখানো না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার তালিকা তৈরি করতে ইইউ নেতারা কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। মিনস্কে কষ্টসাধ্য আলোচনার পর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ১৩ দফার ঐ চুক্তি নিয়ে একমত হয়। এর মূল বিষয সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির অনরূপই ছিল। আগের চুক্তিটি কখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবং তা সম্প্রতি ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমান চুক্তিতে বিদ্রোহীরা পুতিনের কঠোর ও দরকষাকষির ফলে ভূখ- ও স্বায়ত্তশাসন নিয়ে সুযোগ সুবিধা লাভ করে। অস্ত্রবিরতি ও ইউক্রেন ভূখ- থেকে সব বিদেশী সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র প্রত্যাহার করা ছাড়াও সরকার ও বিদ্রোহীরা স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়। কিয়েভ পূর্বাঞ্চলের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিতে রাজি হয়। Ñওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি।
×