ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে উন্মাদনার শুরু

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে উন্মাদনার শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই দলের দুই রকম চ্যালেঞ্জ। ২৩ বছর আগে সেমিফাইনালে এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। সেবার পাকরাই শিরোপা ঘরে এনেছিল আয়োজক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটি থেকে। এবার কিউইদের প্রথম পরীক্ষা এশিয়ার আরেক পরাশক্তি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে গত দুইবারের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে গত দুই আসরেই শেষ চার থেকে বিদায় নেয়া কিউই শিবির। লঙ্কানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিজেদের ফিরে পাওয়া। কারণ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছে তারা বড় ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ড সফরে আগে ভাগে আসলেও স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সামর্থ্য প্রমাণের চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য। স্বাগতিক হওয়া এবং প্রস্তুতি ম্যাচেও দারুণ খেলা নিউজিল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ প্রত্যাশার চাপ কাটিয়ে জয় দিয়ে শুভসূচনা করা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টায় (শনিবার ভোরে) ম্যাচটি শুরু হবে। আর এবার ১১তম বিশ্বকাপের উন্মাদনাটাও শুরু হয়ে যাবে এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে। আর অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার। অনেক আগেই অংশগ্রহণকারী দলগুলো এবারের আয়োজক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে ওঠা এবং উইকেটের গতি-প্রকৃতি বুঝে ওঠার জন্য অনুশীলন করেছে দীর্ঘদিন। আইসিসির অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। তবে লঙ্কানদের জন্য অন্য যে কোন দলের চেয়ে বাড়তি সুবিধার বিষয় হচ্ছে ইতোমধ্যেই তারা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিছুদিন আগেই ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পেরেছে। সেদিক থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ ও উইকেটের পরিস্থিতির সম্যক ধারণাটা অনেক বেশিই পেয়েছে তারা। যদিও সিরিজে তেমন সুবিধা করতে পারেনি লঙ্কানরা। ওয়ানডে সিরিজে হেরেছে ৪-২ ব্যবধানে। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটিই হয়েছিল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই ম্যাচে তুমুল লড়াইয়ের পর অবশ্য স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড জিতে গিয়েছিল ৩ উইকেটে। এবার সেখানেই লড়াই। ২৩ বছর পর আবারও দু’দল বিশ্বকাপ মঞ্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মুখোমুখি। ১৯৯২ সালের গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যামিল্টনে মুখোমুখি হয়েছিল লঙ্কানরা। সেবার ৬ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির। তবে পরের বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নিজেদের অন্য এক অবস্থানে নিয়ে গেছে লঙ্কানরা। এবার বিশ্বকাপেরও অন্যতম ফেবারিট শ্রীলঙ্কা দল ২০০৭ ও ২০১১ সালে ফাইনাল খেলেছিল। সেদিক থেকে বিশ্বকাপের আগের পারফর্মেন্স খুব বেশি বিবেচ্য নয়। কারণ বিশ্বকাপের রং, রূপ, আমেজ সম্পূর্ণই ভিন্ন রকমের। তাছাড়া এতদিন দলের হয়ে খেলতে পারেননি অন্যতম পেস স্তম্ভ লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি এ ম্যাচ থেকেই ফিরবেন। এবার নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই ফেবারিট লঙ্কানদের। হ্যাগলি ওভালে ২৩ বছর আগে বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ হয়নি। সেবার ক্রাইস্টচার্চের ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে দুটি ম্যাচ হয়েছিল। সেদিক থেকে এবারই হ্যাগলি ওভালের বিশ্বকাপ অভিষেক হতে যাচ্ছে। গত বছর জানুয়ারিতে স্কটল্যান্ড-কানাডা ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা এ মাঠে নিউজিল্যান্ডও মাত্র একটিই ম্যাচ খেলেছে গত ১১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। উভয় দলের একমাত্র টেস্ট দিয়ে টেস্ট ভেন্যু হিসেবেও গত ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু এ মাঠের। তাই এ ম্যাচে উভয় দলের জন্যই কিছুটা অপরিচিত এ মাঠটি। সবমিলিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা এ ভেন্যুর ধারণক্ষমতা ২০ হাজার। যার সিংহভাগ দর্শকই যে নিউজিল্যান্ড শিবিরকে অকুণ্ঠ সমর্থন জোগাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ম্যাচটিকে অবশ্যই স্মরণীয় করে রাখতে উন্মুখ থাকবে স্বাগতিক কিউই শিবির। সম্প্রতি দলটি আছে ফর্মেরে তুঙ্গে। সফরকারী লঙ্কানদের ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দেয়ার পর প্রস্তুতি ম্যাচে শিরোপার ফেবারিট শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকেও নাস্তানাবুদ করে দারুণ আত্মবিশ্বাসী এখন ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির। ২৩ বছর আগে যা হয়নি সেটাই এখন প্রথম ম্যাচেই জিতে অভিযানটা শুরু করতে চায় স্বাগতিকরা। এবার কোনভাবেই শিরোপা হাতছাড়া করা যাবে না। সে জন্য দারুণ এক শুরু প্রয়োজন। দলের ক্রিকেটাররাও আছেন দারুণ ফর্মে। এখানেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়েছে। তাই নিউজিল্যান্ডবাসী এখন অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন নিজ দেশের ভালভাবে শুরুর। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ মুখোমুখি হয়েছে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ৬টিতেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আর তিনটিতে জয় আছে কিউইদের। আর সবমিলিয়ে ৮৯ ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করে নিউজিল্যান্ড এগিয়ে আছে জয়ের দিক থেকে। তাদের ৪১ জয়ের বিপরীতে লঙ্কানদের জয় ৪০। আর দেশের মাটিতে লঙ্কানদের চেয়ে আরও এগিয়ে কিউই শিবির। ৩৪ ম্যাচের মধ্যে ২১টিতেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। তবে এসব পরিসংখ্যানের দিকে নয়, নির্দিষ্ট দিনে স্নায়ুচাপ, বিশ্বকাপের উত্তাপ পাশ কাটিয়ে যে দল জ্বলে উঠতে পারবে জয়ী হবে তারাই। আর আগের দুই আসরে ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে না পারার ক্ষুধা নিয়ে প্রথম ম্যাচেই জয় পেতে উন্মুখ হয়ে নামবে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের দল। অভিজ্ঞ মাহেলা জয়াবর্ধনে তো আগেই বলে রেখেছেন, ‘আমরা হয়ত আগের দুটি বিশ্বকাপ জিততে পারিনি, কিন্তু টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে প্রমাণ করেছি আমরা ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলি। আশা করছি এবার পুরটা পথই পাড়ি দিতে পারব আমরা।’ সে জন্য আজ জিতেই শুরু করতে চাইবে লঙ্কানরা।
×