ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীঘরে বাংলাদেশী সাংবাদিক পিয়ার

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শ্রীঘরে বাংলাদেশী সাংবাদিক পিয়ার

ফজলুল বারী, সিডনি থেকে ॥ বিমানের ঘুমন্ত সহযাত্রী বিদেশিনী তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে সিডনিতে গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশী সাংবাদিক রহমান পিয়ারকে বৃহস্পতিবার আদালত থেকে সিডনির সিলভানিয়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তার পাসপোর্ট। বৃহস্পতিবার কোর্টে হাজির করার পর কোন জিম্মাদার না পাওয়া যাওয়াতে তার জামিনের আবেদন করা হয়নি। জিম্মাদার জোগাড় হওয়া সাপেক্ষে সোমবার তার জামিনের আবেদন করা হতে পারে। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার আইনে সাধারণত এ ধরনের অভিযোগের কোন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জামিন হয়। কিন্তু তার প্রতি পুলিশের নজরদারি থাকে। জামিনদারকে হতে হবে একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অথবা স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস সম্পন্ন। জামিনদারকে একই সঙ্গে দিতে হবে ২ হাজার ডলারের বন্ড। জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পরবর্তী কোর্টের প্রসিডিংকস সমূহে নিয়মিত হাজির করাটা জামিনদারের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্তু এই ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে পারবে না। সিডনির প্রভাবশালী কমিউনিটি লিডার সিরাজুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, তিনি তার পরিচিত একজন আইনজীবী পিটার কেনেডিকে নিয়ে বাংলাদেশী সাংবাদিকের খোঁজ নিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে দেখেন আগে থেকেই তার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের লিগ্যাল এইড বিভাগ থেকে মাইক ব্লেডওয়েলকে মামলার বিবাদী পক্ষের জন্য আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কোর্ট থেকে তাদের জানানো হয় জামিনদার পাওয়া না যায় নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী জামিনের আবেদন করেননি। এর জন্যে কোর্ট গ্রেফতারকৃত রহমান পিয়ারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি আবার আগামী সোমবার উঠতে পারে। জামিনদার পাওয়া গেলে জামিনের আবেদনের শুনানি সেদিনই হতে পারে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উৎসব কভার করতে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে বুধবার এই সাংবাদিক সিডনি এসে নেমে গ্রেফতারের শিকার হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে মেয়েটি করেছে সে কোরিয়ান তাইকোয়ান্দো খেলার দলের খেলোয়াড়। কোরিয়ান তাইকোয়ান্দো দলটি একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে সিডনি আসছিল। বিমানে দলটির কোচও ছিলেন। ওই বিমানে সিডনি আসা আরও কয়েক সাংবাদিক ঘটনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন। বিমানের মাঝখানের চার আসনের আসনে বাংলাদেশের তিন সাংবাদিকসহ ওই মেয়েটি বসেছিলেন পাশাপাশি। বিমানের ভেতরে হৈচৈ শুনে তাদের ঘুম ভাগে। তারা দেখতে পান তাইকোয়ান্দা দলটির কোচ পিয়ারের আসনের দিকে হাত উচিয়ে অভিযোগ করছেন। এ সময় হতভম্ব পিয়ারও অভিযোগটি কার বিরুদ্ধে তা জানতে বুঝতে আশপাশে তাকাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বিমানের ক্যাপ্টেন এসে পিয়ারের সঙ্গে এবং আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। সিডনি এয়ারপোর্ট অথরিটিকে অভিযোগটি অফিসিয়ালি জানিয়েছেন বিমানের ক্যাপ্টেন। ফ্লাইটটি সিডনি এসে নামার পর যাত্রীরা যার যার লাগেজ বক্স থেকে নামিয়ে গোছগাছ করছিলেন। এমন সময় বিমানে সিকিউরিটি চেক হবে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বিমানে কপ তথা পুলিশ আসছে এ ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের বলা হয় যার যার আসনে বসে যেতে। পুলিশ বিমানে ঢুকলে ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা পিয়ারকে শনাক্ত করলে পুলিশ তার সঙ্গে এবং আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বলতে পিয়ারকে আলাদা করে ফেলে। তার জিনিসপত্রও সব আলাদা সরিয়ে নেয়। এরপর বাংলাদেশ দলের সাংবাদিকদের আলাদা আলাদা ঘটনা সম্পর্কে কে কী জানেন তা জানার চেষ্টা করেন। সহযাত্রী সাংবাদিকরা তখনও ভাবতে পারেনি ঘটনা এতদূর গড়িয়ে গেছে অথবা যাচ্ছে। হতভম্ব অনেক সাংবাদিক পিয়ারকে নিয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘ সময় বিমান বন্দরে অপেক্ষায় বসে থাকেন। কারণ তারা যারা পিয়ারকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন জানতেন, অভিযোগের সঙ্গে তাকে মেলাতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ থেকে আসা সব সাংবাদিক সিডনি এসে বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দেশের দলের ম্যাচ উপলক্ষে সিডনির ব্ল্যাকটাউনের ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস পার্কের মাঠে-প্রেসবক্সে ছিলেন। আর তাদের সঙ্গে আসা এক সাংবাদিককে বৃহস্পতিবার জেলখানায় পাঠানো হয়েছে শুনে তারা মুষড়ে পড়েন। জানতে চান তার সর্বশেষ খোঁজ-খবর। কিন্তু তার পাসপোর্ট জব্দ হয়েছে, জামিনের জন্যেও চেষ্টাও হয়নি, এসব শুনে তাদের হতাশ দেখায়। এসব বিষয়ে এক প্রবাসী আইনজীবীর বক্তব্য জানতে চাইলে বলেন, অভিযোগ যখন গঠন হয়ে গেছে, পরবর্তী কার্যক্রমও চলবে এদেশের প্রচলিত আইনের ধারায়। আইনের ব্যত্যয় কিছু এখানে হবে না।
×