ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান লড়াই

ইতিহাস বদলাতে মরিয়া পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইতিহাস বদলাতে মরিয়া পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চার বছরের অপেক্ষা শেষে আবারও শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের লড়াই। শনিবার শুরু ১১তম আসরের দ্বিতীয় দিনেই মাঠে নামবে ভারত-পাকিস্তান। এ্যাডিলেডে এশিয়ার অন্যতম এই দুই পরাশক্তির লড়াই দেখতে ক্রিকেট বিশ্বও মুখিয়ে আছে। কেননা ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই অতিরিক্ত বিনোদন। যার উত্তেজনার সীমানা মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে যায়। এই ম্যাচের আগে পাকিস্তানের সব খেলোয়াড়ের মুখেই প্রথম যে কথাটি উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো, ‘আমরা জিততে চাই।’ এর পেছনের গল্পটাও অনেকের জানা। ১৯৯২ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই টুর্নামেন্টে সর্বপ্রথম মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরু করেছিল ভারত। প্রথমটিসহ বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে ভারতের বিপক্ষে সবই পরাজয় দেখেছে পাকিস্তান। কিন্তু এবার সেই ধারা ভাঙ্গতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা। অতীত ইতিহাস বদলাতে উন্মুখ হয়ে আছেন মিসবাহ-আফ্রিদিরা। এ বিষয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক বলেন, ‘ইতিহাস বদলাতে আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব। আমি জানি না অতীতের সব ম্যাচেই কেন আমরা হেরেছি। তবে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রত্যাশার চাপ নিতে খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হয়েছে।’ ক্রিকেটে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে সবসময়ই পরে ব্যাট করে হারের মুখ দেখেছে পাকিস্তান। শুধু ২০০৩ সালে সেঞ্চুরিয়ানে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্যে পরে ব্যাট করেছিল ভারত। আর এটাকেই অস্ত্র হিসেবে নিতে চান পাকিস্তানের অল রাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। তার মতে, ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম শুরুর বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। আর মোহালির সেই সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ডুবেছিল আফ্রিদির পাকিস্তান। তবে এবার মিসবাহ-উল-হকের মতো আফ্রিদিও বিশ্বাস করেন অতীতের ইতিহাস পরিবর্তন হবে। এ বিষয়ে অলরাউন্ডার আফ্রিদি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে অতীতের সব রেকর্ড এবার পরিবর্তিত হবে। আমরা এবার এই ম্যাচটি জিতে তা প্রমাণ করব। আমরা যদি জিততে পারি তবে বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতে নিজেদের প্রমাণ করতে পারব। দলের সব খেলোয়াড়রাই ভারতের বিপক্ষে জেতার জন্য মুখিয়ে আছে।’ শুধু একদিনের ম্যাচেই নয়। ভারতের বিপক্ষে টি২০ বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের ফলাফল এক। চারবারের মোকাবেলায় সবসময়ই সঙ্গী হয়েছে জয় না পাওয়ার হতাশা। যার মধ্যে দুটি ছিল ২০০৭ সালে (একটি গ্রুপ পর্বে, অন্যটি ফাইনাল)। এরপরের দুটি ছিল ২০১২ এবং ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কোন ইভেন্টে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বশেষ জয়টা ছিল ২০০৯ সালে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল পাকিস্তান। তাই দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইউনুস খান মনে করেন ভারতের বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফিরে আসার জন্য রবিবারের ম্যাচটাই পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে আদর্শ সময়। এ বিষয়ে তার অভিমত হলো, ‘আমরা প্রথম ম্যাচেই ভারতের মুখোমুখি হচ্ছি। তাই আমি মনে করি, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হিসেবে তাদের বিপক্ষে যদি আমরা জিততে পারি তাহলে আমাদের শুরুটা দারুণ হবে।’ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইউনুস খানের মতো তরুণদের প্রত্যাশাটাও একইরকম। পাকিস্তানের তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার মোহাম্মদ ইরফান। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার। সাত ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণ পেসারের ভারতের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও সেরাটা দিয়ে দলকে জেতাতে আশাবাদী তিনি। তার ওপর দলের প্রত্যাশা সম্পর্কেও তিনি বেশ অবগত। আর ভারতের বিপক্ষে নিজের অতীত পারফর্মেন্সই এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে ইরফানকে, ‘আমার কাছ থেকে দল কী চায় তা আমি জানি। ভারতের বিপক্ষে আগেও আমি ভাল করেছি। তাই এবারও ভাল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমি।’ এছাড়া ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ভাবছেন না শোয়েব মাকসুদ-ওহাব রিয়াজরাও। পাকিস্তানের তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় শোয়েব মাকসুদ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে ম্যাচ জয় করা। নিজে একটি সেঞ্চুরি তুলে নেয়া।’ বিশ্বকাপের মূল মঞ্চের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সোমবারের অনুশীলন ম্যাচে ৯৩ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেন মাকসুদ। এই ইনিংসের পরে নিজের ভাল খেলার ব্যাপারে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন তিনি। মাকসুদের পাশাপাশি সোহেল খান, ওহাব রিয়াজের মতো তরুণরাও ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে মরিয়া। আর সেক্ষেত্রে সকলেই যদি নিজেদের জায়গায় ভাল পারফর্মেন্স উপহার দিতে পারে তবে অতীত পরিসংখ্যান নিশ্চিত হার মানবে। তবে ভারতও যে ছেড়ে কথা বলবে না ক্রিকেটবোদ্ধাদের সেটাও বেশ ভাল জানা।
×