ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসির ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে শিবিরকর্মী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এসএসসির ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে শিবিরকর্মী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসির আসল প্রশ্নপত্রের মত ভুয়া প্রশ্নপত্র বানিয়ে বিক্রি করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত প্রতারক ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী। টাকা রোজগারের পাশাপাশি সরকারকে বিতর্কিত করতে প্রায় দেড়বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ এমন প্রতারণা করে আসছিল। এ কাজে তাকে মদদ দিয়ে আসছিল জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার। গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ মনিটরিং সেলের তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির অভিযানে রাজধানী থেকে গ্রেফতারকৃত আসাদুজ্জামান নূর সাকিব ওরফে রিয়াজল ইসলাম লিটনকে (২২) গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে সাকিবকে ধরা হয়েছে। সাকিব খুবই চতুর। সাঁড়াশি অভিযানের ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে শেষ পর্যন্ত রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন হাজীক্যাম্প সংলগ্ন পুরাতন মোল্লারটেকের ২৬২ নম্বর নিজ বাড়ি থেকে সাকিবকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। তার বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থানা এলাকায়। মহাখালী সরকারী তিতুমীর কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শ্রেণীর প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী। তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃত সাকিবের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সদ্য সমাপ্ত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্র্রশ্নের হুবহু নকল প্রশ্নপত্রের একাধিক কপি। যদিও আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে উদ্ধারকৃত ভুয়া প্রশ্নপত্রের কোন মিল নেই। তবে প্রশ্নপত্রের আকার, রংসহ অন্যান্য অনেক কিছুই আসল প্রশ্নপত্রের মতো। এছাড়া শুক্রবার (আজ) ইংরেজী পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্রও উদ্ধার হয়েছে। প্রত্যেক বিষয়ের একেকটি প্রশ্নপত্র সে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ইতোমধ্যেই সে ৩৫ হাজার টাকার প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছে। আরও অনেকেই কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও দিয়েছিল। ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আরও জানান, সাকিব ভুয়া প্রশ্নপত্রের ফটোকপি বিক্রি করত। আবার ফেসবুকের মাধ্যমেও প্রতারণা করে আসছিল। রেজাউল ইসলাম লিটন ছদ্মনামে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই এ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমে পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা প্রশ্নপত্র চেয়ে পাঠাতো। টাকা লেনদেনের পর ফটোকপি বা পেনড্রাইভে প্রশ্নপত্রের কপি দিত। বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতো। সাকিব এসএসসি, এইচএসসি ও এমবিবিএস পরীক্ষাসহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তার সঙ্গে বেশকিছু কোচিং সেন্টারের যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতেই কোন বিশেষ গোষ্ঠী এসব করাচ্ছিল কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিবির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, সাকিব জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের হয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজটি করে আসছিল। ওইসব কোচিং সেন্টারের হয়ে ইতোপূর্বেও সে বেশকিছু পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোচিং সেন্টারগুলো তাদের ছাত্রছাত্রীদের সে অনুযায়ী পড়াশুনা করায়। এতে করে কোচিং সেন্টারের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। আর এতে করে কোচিং সেন্টারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিক কারণেই ওইসব কোচিং সেন্টারে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এমন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো লাখ লাখ টাকা আয় করে। ইতোমধ্যেই আগামী বছরের এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সাকিবের ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে। বিভিন্ন সময় সাকিব এসএসসি, এমবিবিএস, জেএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার আসল প্রশ্নপত্রও ফাঁস করেছে। সাকিবের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ আছে। তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েক দফায় জরুরী বৈঠক হয়েছে।
×