ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হতে পারে। এই চুক্তি করা হলে প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এতে উভয় দেশই বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার কথা ভাবছে সরকার। এ ছাড়া আগামী ৩১ মার্চ বাংলাদেশ-ভারতের যে বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে তা নবায়ন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দেশটির সঙ্গে কিভাবে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হবে। জানা গেছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থাকলে (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এফটিএ) বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে ১০০ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি নয়াদিল্লীতে বণিকসভা সিআইআইয়ের অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি থাকলে উভয় দেশের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ আর বাংলাদেশে ভারতের রফতানি বৃদ্ধি পাবে ১২৬ শতাংশ। অর্থাৎ এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আর্থিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। বাংলাদেশের রফতানি বাড়লে উত্তর-পূর্ব ভারত রুট হিসেবে ব্যবহার হবে। একই সঙ্গে রফতানি বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের উৎপাদন বাড়বে এবং এর ফলে দারিদ্র্য কমে আসবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আলোকে দেশটির সঙ্গে আমাদের পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। এখনও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হয়নি। তবে ভারতের সঙ্গে যেভাবে বাণিজ্য বাড়ছে তাতে এ ধরনের চুক্তি থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে এখনও বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি দূরীকরণেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়া উচিত। সরকার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এদিকে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাণিজ্যিক বাধা দূরীকরণ, পণ্য রফতানিতে বিএসটিআই সার্টিফিকেট ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, পোশাক রফতানির বাধা দূরীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, পোর্ট সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ, লিলিপুট কিডসওয়্যারের পাওনা দ্রুত ফেরত, বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের উন্নয়ন, কার্গো হ্যান্ডলিং পদ্ধতির উন্নয়ন, প্যাসেঞ্জার এ্যান্ড কার্গোভেহিক্যাল চুক্তি, জুট মার্কেট সম্প্রসারণ বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে ট্রানজিট সুবিধা চাইতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে নেয়া পদক্ষেপগুলোর অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে বর্তমানে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভুটান ও নেপালে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সরাসরি পরিবহন ব্যবস্থা নেই। কারণ নেপালে পণ্য রফতানি করতে হলে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে ভুটানের ক্ষেত্রেও। ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়ার উদ্যোগ নিতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকার পরও ভারতের বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না এদেশের রফতানিকারকরা। শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও গত অর্থবছরে ভারত থেকে রফতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে অনেক। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। তাতে আগের অর্থ বছরের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
×