ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান কার্যালয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠক

সহিংসতা পরিহার করুন ॥ খালেদাকে গিবসন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সহিংসতা পরিহার করুন ॥ খালেদাকে গিবসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনে সহিংসতা পরিহারের জন্য তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। বুধবার বিকেল ৫টায় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে বসে চলমান সঙ্কট নিরসন করার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে রবার্ট গিবসন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাজ্য মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। একই সঙ্গে আন্দোলনে সহিংসতার নিন্দা করে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্য চাইছে এ সম্পর্ক আরও গভীর হোক। তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং এর কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সহিংসতা প্রতিহত করতে সব পক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যেন কর্মের পরিণতির কথা ভাবেন। গিবসন বলেন, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর প্রয়াণে তাঁকে সমবেদনা জানিয়েছি। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ভবিষ্যত স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সংকল্পবদ্ধ। এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালে রবার্ট গিবসন অব্যাহত সহিংসতায় মানুষ হতাহতের ঘটনাকে পীড়াদায়ক এবং দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সহিংসতার ধারা চলে এসেছে তা নিরসনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে সকল দলকে পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আতঙ্কজনক অবস্থা দূর করে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমেই চলমান সহিংসতা দূর হবে বলে যুক্তরাজ্য আশা করে। সবাইকে বৈধ রাজনৈতিক কর্মকা- শান্তিপূর্ণভাবে পালনের অনুমতি দিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বৈঠকে খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। সন্ধ্যা ৪টা ৫৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়িতে করে ভেতরে প্রবেশ করেন রবার্ট গিবসন। গুলশান কার্যালয়ে তাঁকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল। বিকেলে ৫টায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলে এক ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে রবার্ট গিবসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন। ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশান অফিসে অবস্থান করছেন। ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে তিনি ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের ডাক দেন যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এরই মাঝে গত ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যান। এ সময় খালেদা জিয়া মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙ্গে পড়লেও ছেলের মৃত্যুর কারণে আন্দোলন কর্মসূচী প্রত্যাহার করেননি। তবে কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সমবেদনা জানাতে গেলেও তাঁকে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। কোকোর লাশ মালয়েশিয়া থেকে ২৭ জানুয়ারি সরাসরি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে আনা হয়। এ সময় তাঁর লাশ ভেতরে নেয়ার জন্যও প্রধান ফটক খোলা হয়নি। পেছনের পকেট গেট দিয়ে কোকোর লাশ ভেতরে নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার অফিসে কয়েক ঘণ্টা রাখার পর তাঁর লাশ জানাজার জন্য বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নেয়া হয়। এরপর তাঁকে সরাসরি বনানী কবরস্থানে নিয়ে দাফন করা হয়। এর পর পকেট গেট দিয়ে গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না জানাতে যান বিদেশি কূটনীতিকরা। তবে তাঁরা শোক বইতে স্বাক্ষর করলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয়নি। ওই সময় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারও শোকবইতে স্বাক্ষর করেন।
×