ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এ পরাজয় হার নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এ পরাজয় হার নয়

সব পরাজয়ই হেরে যাওয়ার গ্লানি বয়ে আনে না। এ কথাটিই প্রমাণ করল বাংলাদেশের ফুটবলাররা। রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে পর্দা নামল ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের। ফাইনালে মালয়েশিয়ার কাছে ৩-২ গোলে পরাজিত হয় লাল-সবুজ জার্সি পরা স্বাগতিক বাংলাদেশ। অনেক ভাল খেলেও জয়ী হতে পারল না তারা। টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচে দেখা হয়েছিল বাংলা-মালয় দলের। ফাইনালেও দেখা হলো আবার। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের পিছু ছাড়ে না। ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তে জানা যায়, ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না শ্রীলঙ্কা ম্যাচের জয়ের নায়ক মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। অন্যদিকে ম্যাচের ৭ মিনিটের মধ্যে আসে আরেক দুঃসংবাদ। চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন সেমিফাইনালের সেরা খেলোয়াড় উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। এই দুই সেরা খেলোয়াড়ের অভাবটা মাঠে অনুভব করে পুরো দল। তারপরও এ দুই তারকাকে ছাড়া দুর্দান্ত লড়াই করে মামুনুল, শহীদুল, এমিলি, জামালেরা। প্রথমার্ধে দ্রুতই স্বাগতিকরা হজম করে দুই গোল। তবে বিরতির পর চমৎকার ঘুরে দাঁড়ায় তারা। অল্প সময়ের মধ্যেই দুটি গোল পরিশোধ করে ব্যবধান মেটায়। লড়াই চলতে থাকে জয়ের। কিন্তু খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর বর্ধিত সময়ে বাংলাদেশের জালে গোল জড়ানোর খানিক পরেই বেজে ওঠে রেফারির শেষ বাঁশি। সেই সঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। পাঁচ বছর আগে ঠিক এই ৮ ফেব্রুয়ারি আনন্দে উদ্বেলিত ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। আফগানিস্তানকে হারিয়ে ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসের ফাইনালে স্বর্ণপদক জেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় ফুটবল দল। সেটা কোন ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। এখানেই শেষ নয়, শেষ নয় জয়ের তালিকা। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ লাল দল। সেটা ছিল ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি, ১৯৯৯ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ২০০৩ সালে সাফ গেমস শিরোপা জেতার গৌরব আছে বাংলাদেশের। এছাড়া ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ জাতীয় দল। এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটিও ছিল ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। ফলে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল ‘বেঙ্গল টাইগার্স’খ্যাত দলটির কাছে। কিন্তু সেই সুযোগও রয়ে গেল অধরা। ফাইনালে মালয়েশিয়া অনূর্ধ-২৩ দলের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে ঘরে ফিরতে হয়। দলের সঙ্গে সঙ্গে কাঁদেন স্টেডিয়াম ভর্তি অগুনতি দর্শক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে রানার্সআপের ট্রফিটি নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি অর্জন করে নেন বাংলার জামাল ভূঁইয়া। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের ডাচ্ কোচ লোডভিড ডি ক্রুইফের কণ্ঠে ছিল আক্ষেপের সুর, ‘পুরো ৯০ মিনিট দুর্দান্ত খেলেও শেষ মুহূর্তের গোলে এভাবে হার মেনে নেয়া যায় না। এটা অনেক কষ্টের। কেবল ফুটবলারদের জন্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্যও এটা বড় কষ্টের। ৩-০ গোলে হারলে এতটা কষ্ট পেতাম না।’ তবে পরাজয় মানেই হেরে যাওয়া নয়। খেলা শেষে সবাই একমত, বাংলাদেশ আসলে হারেনি। খেলোয়াড়রা মন জয় করেছেন সবার, যা দেশের ফুটবলের ভবিষ্যত আরও এগিয়ে চলার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট দেশের মাটিতে আরো বেশি আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে করে উৎসাহী হবে খেলোয়াড়-দর্শকেরা। অগ্রগতি হবে দেশের ফুটবল অঙ্গনের। একই সঙ্গে ফিরে আসবে ফুটবলের হারানো গৌরব।
×