ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আয়কর প্রদান পদ্ধতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আয়কর প্রদান পদ্ধতি

আয়করের গুরুত্ব বোঝাতে অর্থমন্ত্রীর একটি কথাই যথেষ্ট। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। তা না হলে বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’ এখন বিবেচ্য হলো, করদাতার সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো সম্ভব। চলতি মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- কোন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা পরে বাড়ানো হয়ে থাকে। অথচ বিগত দুই বছরে লক্ষ্যমাত্রা না বাড়িয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। এই সতর্ক পদক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেরই আরেক প্রতিফলন। রাজস্ব আদায়ের হারে নিম্নগামিতার পেছনে ঘন ঘন কর্মকর্তা রদবদল, কিছু কর্মকর্তার অসাধুতার কারণ তো রয়েছেই। তবে এর অন্যতম কারণ নতুন করদাতার সংখ্যা আশানুরূপভাবে বর্ধিত না হওয়া এবং কর ফাঁকি, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আয়কর প্রদানে বাংলাদেশের মানুষের অনীহা একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। এ অনীহার জন্য দায়ী আয়কর ব্যবস্থা। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও কম দায়ী নয়। সুনাগরিকরাও আয়কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিতে অস্বস্তি, বলা ভাল আতঙ্ক বোধ করেন। যে কারণে দেশে আয়করদাতার সংখ্যা সত্যিকার অর্থে কম। সাধারণভাবে মনে করা হয়, আয়করদানের যোগ্য ব্যক্তিদের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ আয়করদাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। পদ্ধতিগত জটিলতা ও আয়কর বিভাগের হয়রানির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই করদাতাদের পকেট থেকে আয়কর খাতে যে অর্থ ব্যয় হয় তা ভোগ করে আয়কর আইনজীবী ও কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমান সরকারের আমলে আয়কর ব্যবস্থায় গতি আনতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও পদ্ধতিগত জটিলতা রয়েই গেছে। আয়কর মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা একবার বলেছিলেন, আয়কর রিটার্ন ফরমের অনেক কিছু তিনিও ভাল বোঝেন না। এ কারণে তাকেও মধ্যস্বত্বভোগী কর আইনজীবীদের শরণাপন্ন হতে হয়। অনেক সময় কর আইনজীবীরা কাগজপত্র ঠিক করতে কর অফিসের বাড়তি খরচের দোহাই দেন। সরকারের মন্ত্রী মর্যাদার একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার দৃষ্টিতে কর প্রদানের পদ্ধতি কঠিন হলে সাধারণ করদাতাদের অবস্থা কি দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। ২০০৮ সালে দেশে প্রথম আয়কর দিবস পালন শুরু হওয়ার পর বহু করদাতা কর বিষয়ে সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আয়করের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে আয়করদাতার সংখ্যাও। শুধু আয়কর বাড়ালেই চলবে না, সরকারকে কারদাতাদের জন্যও কিছু একটা করতে হবে। তারা যেমন সরকারকে কর দেবে, সরকারেরও কর্তব্য তাদের কিছু একটা ফেরত দেয়া। এটা হতে পারে কোন বিশেষ পুরস্কার বা প্রণোদনা। কর দিয়ে সরকারকে এগিয়ে নেয়া যেমন করদাতাদের দায়িত্ব, তেমনি করদাতাদের প্রতিও সরকারের কিছু করণীয় আছে। তাতে করদাতারা উদ্বুদ্ধ হবেন। স্বীকার করতে হবে, নাগরিকদের মধ্যে আয়কর দেয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও কর প্রদানের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে এখনও কেন ভীতি কাজ করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আয়কর বাড়ানোর জন্য এনবিআর ও আয়করদাতার মধ্যে আস্থা এবং বিশ্বাসের সম্পর্ক জরুরী। ভয়ভীতি দেখিয়ে আয়কর আদায়ের চেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয় না। আমরা মনে করি কর প্রদান পদ্ধতি আরও সহজ ও যুগোপযোগী করা হলে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। বলাবাহুল্য, দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য তা হবে ইতিবাচক।
×