ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা আর নেই

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সহকারী প্রেস সচিব ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খন্দকার আমিনুল হক বাদশা আর নেই (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী প্রখ্যাত সাংবাদিক খন্দকার আমিনুল হক মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায় লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি নিউমোনিয়াজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি সপরিবারে লন্ডনে থাকতেন। খবর বাসস’র। তাঁর মৃত্যুতে ঢাকার সাংবাদিক সমাজে গভীর শোক নেমে আসে। মরহুমের ছোট ভাই খন্দকার রাশিদুল হক নবা জানান, বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী তার মরদেহ নিয়ে দেশে আসবেন। পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ঢাকা অথবা কুষ্টিয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। আমিনুল হক বাদশা ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পাকিস্তানী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সময় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে বিভিন্ন সময় তিনি কারাভোগ করেছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। আমিনুল হক বাদশা মুজিবনগরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন। তিনি মুজিবনগর বাংলাদেশ মিশনের বহির্প্রচার বিভাগের পরিচালক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে যেসব ছাত্রনেতা মঞ্চে ছিলেন তাদের একজন খন্দকার আমিনুল হক বাদশা। ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে সামরিক শাসনের কারণে তিনি লন্ডনে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি ভারত, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি এটিএন বাংলার যুক্তরাজ্য শাখায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। আমিনুল হক বাদশা সাংবাদিকতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হৃদয়ে বিষাদ সিন্ধু, স্মৃতির পাতায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এক শোক বাণীতে রাষ্ট্রপতি প্রয়াতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকে স্বাধীনতা পূর্বকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তার সাংগঠনিক ক্ষমতা তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ সংগঠককে হারাল। রাষ্ট্রপতি আমিনুল হক বাদশার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক নাগরিককে হারাল। প্রধানমন্ত্রী আমিনুল হক বাদশার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া বাদশার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন। তাঁর মৃত্যুতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। উদীচী যুক্তরাজ্য সংসদের উপদেষ্টাম-লীর অন্যতম সদস্য আমিনুল হক বাদশার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। মঙ্গলবার এক শোক বার্তায় উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময় থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন এবং সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আমিনুল হক বাদশা।
×