ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদিতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি আরবে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে মঙ্গলবার চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনস্থ প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণ সচিব মোঃ ইফতেখার হায়দার ও সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাদ এই স্মারকে সই করেছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা সহিদুল আলম মজুমদার। দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কর্মী পাঠানোর পথ সুগম হয়ে গেল। এখন প্রতিমাসে ১০ হাজার গৃহকর্মী সৌদি যেতে পারবেন। এই হিসাবে বছরে এক লাখ ২০ হাজার কর্মী সৌদি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। গত সোমবার দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সৌদি মন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার দেশের জন্য একটি সোর্স কান্ট্রি। সব চেয়ে বেশি বাংলাদেশের কর্মী তার দেশে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিযোগের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করবে তা চূড়ান্ত করতে সোমবার সৌদি ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল কর্মব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। ব্যয় কমিয়ে কর্মী নিয়োগের শর্তে প্রতিমাসে ১০ হাজার করে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার আলোকে মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হয় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হবে। তবে যে কোনো অনিয়ম ধরতে সরকারের কড়া নজরদারি রাখার কথা বলেছেন বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একজন কর্মী কত বেতন ভাতা পাবেন তা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। সব শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ন্যূনতম বেতন ১২শ’ থেকে ১৫শ‘ রিয়াল (১ রিয়াল সমান ২১ টাকা)। এর নিচে হলে কর্মী পাঠানো হবে না বৈঠকের এক পর্যায়ে বলা হয়। তখন সৌদি প্রতিনিধিদল প্রস্তাবটি মেনে নেন। বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ থেকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে কর্মী যাবে সৌদি আরবে। বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারকেরাই শতভাগ লোক পাঠাবেন। তবে এখানে কোন প্রকার মধ্যস্বত্বভোগী থাকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশনকৃত কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কোন দালালের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে সৌদিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরব যেতে একজন কর্মীর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। এই খরচের বাইরে কোন খরচ কেউ নিতে পারবেন না। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিনিধিদল নেতা সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কর্মী নিয়োগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে, মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এবং সৌদি আরবে জনশক্তি আমদানিকারকদের একমাত্র সংগঠন সৌদি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট কমিটির (সানারকম) মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। বায়রা সভাপতি মোঃ আবুল বাশার চুক্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মীদের ভিসা, যাতায়াত ও লেভি খরচ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বহন করবে বলেও জানান তিনি। দেশটি পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দু’লাখ গৃহকর্মী ও ড্রাইভার সৌদি আরবে কাজ পাবেন বলে জানিয়েছে সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি-সানারকম। উল্লেখ্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সৌদি আরব। দেশটিতে বর্তমানে সরকারী হিসাবে অনুযায়ী ১২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এই হিসাবে সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। অন্যদিকে, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবন ও জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে সৌদি আবরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী কর্মীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা চালু করেছে। যা আজ (বুধবার) শেষ হচ্ছে বলে জানান জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র। এ সময় আগ্রহীদের পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটো কপি বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তবে, আগ্রহী পুরুষ কর্মীদের বয়স হতে হবে ১৮ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে আর নারী কর্মীদের বয়স হতে হবে ২৪ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড- ২০১৫’ মেলা প্রাঙ্গণের ৬০ নম্বর প্যাভিলয়নে সৌদি আবরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী কর্মীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ রয়েছে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ মেলার পরেও চলবে বলে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
×