ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কেজরিওয়াল

দিল্লীতে ঝাড়ু ঝড়- আম আদমি পার্টির নিরঙ্কুশ বিজয়

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দিল্লীতে ঝাড়ু ঝড়- আম আদমি পার্টির নিরঙ্কুশ বিজয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গেল বছর ভারতীয় রাজনীতিতে ‘মোদি হাওয়া’ দারুণ কাজ করেছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তা যেন উবে গেল। প্রমাণ দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচন। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই নির্বাচনী ফলে আম আদমি পার্টি-এএপির কাছে নাকানিচুবানি খেল মোদির বিজেপি। বিপুল ভোটের ব্যবধানে ফের দিল্লীর মসনদ দখল করল অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন এএপি। মোট ৭০ আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টির ‘ঝাটা’ প্রতীক ৬৭ আসনে জয় পেয়েছে। অপরদিকে বিজেপির ‘পদ্মফুল’ পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। বিজেপির এই ভরাডুবির পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঔদ্ধত্য ও বিদ্বেষমূলক আচরণকে দায়ী করছেন অনেকেই। তবে এই নির্বাচনে কংগ্রেস একটি আসনও পায়নি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লীর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন ৪৭ বছর বয়সী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর এ ভরাডুবির দায় নেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরন বেদি। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি, এএফপি ও দ্য হিন্দু অনলাইনের। নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর জনগণকে অভিনন্দন জানান কেজরিওয়াল। তার এ জয়কে জনতার বিজয় বলে আখ্যা দেন তিনি। তবে এবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আশ্বাস দিয়েছেন। কেজরিওয়াল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হবে ঘুষ এবং ভিআইপি সংস্কৃতি বন্ধ করা। তিনি বলেন, সত্যিই এবার দিল্লীবাসী নতুন কিছু পাবে। জনগণের সহায়তায় দিল্লীকে আমি এমন করে গড়ে তুলব যাতে ধনী এবং গরিব সবাই গর্ববোধ করতে পারে। এ সময় উৎফুল্লিত জনতা কেজরিওয়ালকে পুষ্পবৃষ্টিতে অভিনন্দিত করে। রাজেশ কুমার নামে এক আম আদমি সমর্থক বলেন, জনগণ যদি মনে করে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি হাওয়া কাজ করেছিল। কিন্তু এ বছর ২০১৫ হবে এএপির। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরপরই দিল্লীতে পরাজয় স্বীকার করে নেয় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি। ফোনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানান মোদি। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাকে সব রকম সহায়তার আশ্বাসও দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাকে চা চক্রে আমন্ত্রণ জানান মোদি। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও কেজরিওয়ালকে তার বিজয়ে অভিনন্দন জানান। রাহুল গান্ধী বলেন, দিল্লীর জনগণ আম আদমি পার্টিকে বেছে নিয়েছে এবং কংগ্রেস জনরায়কে শ্রদ্ধা করে। হেরে যাওয়ার পরে কিরণ বেদি বলেছেন, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মোবারকবাদ দিচ্ছি। তাকে ধন্যবাদ, ফুল মার্কস পেয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।’ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, সিপিএম, ভারতীয় জনতা দল এবং কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ। গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম ভুলে যেও না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এ হার নরেন্দ্র মোদির। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, দিল্লীর ভোট বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে টার্নিং পয়েন্ট। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোন জায়গা নেই। দেশের জন্য এ পরিবর্তন দরকার ছিল। জনতা দলের প্রধান নীতিশ কুমার বলেছেন, দিল্লীতে সঠিক বিচার করেছে জনগণ। ওমর আব্দুল্লাহ লিখেছেন, বিজেপি এবং মোদিকে হারানো সম্ভব নয়- এ ধারণা ভ্রান্ত। দিল্লী যেমন পেরেছে তেমন আমরাও পারব। ওদিকে আগামী শনিবার দিল্লীর রামলীলা ময়দানে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল। ২০১১ সালে এই রামলীলা ময়দানে দুনীতিবিরোধী প্রচারকালেই প্রথমবারের মতো খবরের শিরোনাম হন সাবেক ট্যাক্স অফিসার কেজরিওয়াল। ওইদিন এক রোড শোর মাধ্যমে গাজিয়াবাদের বাড়ি থেকে তিনি রামলিলা ময়দানে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিল্লীর সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সে সময় আম আদমি পার্টি ২৮টি বিজেপি ৩১টি ও কংগ্রেস ৮টি আসনে জিতেছিল। কেজরিওয়াল মাত্র ৪৯ দিন ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি নাগরিকদের উন্নয়নে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আকস্মিক পদত্যাগে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
×