ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের ফল

বিজেপি ও কংগ্রেসের জন্য নয়টি বার্তা

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিজেপি ও কংগ্রেসের  জন্য নয়টি বার্তা

লোকসভায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন, বিধানসভায় সেটা ঠিক উল্টে গেল। যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বারাণসি লোকসভা কেন্দ্রে হারিয়েছিলেন, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরোক্ষভাবে তাঁর কাছেই হারলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাত্রা যে এতটা ছাড়িয়ে যাবে সেটা বোধহয় আশা করেননি স্বয়ং কেজরিওয়ালও। এদিকে ২০১৩ সালের বিধানসভার ভোটে কংগ্রেসের জমানা শেষ হয় দিল্লীতে। সে সময় এএপিকে সমর্থনে এগিয়ে আসে কংগ্রেসই। কিন্তু ৩৯ দিনের মাথায় কেজরিওয়ালের সরকার পড়ে যায়। তাই ফের ভোট। এবারও প্রার্থী কেজরিওয়াল। এক সময় আন্না হাজারের ঘনিষ্ঠ কেজরিওয়ালের সহযোদ্ধা কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে বিজেপি। আর এবার বিপুল বিজয়। এএপি পেয়েছে ৬৭টি আসন। বিজেপির আসন কমে হয়েছে মাত্র তিনটি আর হিসাবের খাতা খুলতেই পারেনি কংগ্রেস। এখানে বিজেপি ও কংগ্রেসের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা তুলে ধরা হলো : ১. মোদি ঝড়ের নিম্নগতি : অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধির মতো মোদি ঝড় কমছে। যা প্রত্যেক রাজ্য নির্বাচনে দেখা গেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম রাজধানী দিল্লীতে তাদের বড় পরাজয়। বিজেপিকে এখন অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, রাজ্য নির্বাচনে শুধু মোদি ফ্যাক্টরের ওপর তাদের নির্ভর করলে হবে না। ২. দিল্লীতেই এএপির শক্তি : লোকসভা নির্বাচনে এএপির শোচনীয় পরাজয় ও জাতীয় পর্যায়ে বড় শক্তি না হলেও তারা এখনও দিল্লীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচন তাদের আগামী এজেন্ডা হতে পারে। তাই বিজেপিকে পরবর্তী রাজ্য নির্বাচনগুলোতে আত্মপ্রসাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর কংগ্রেসকে অবশ্যই চূড়ান্ত কিছু করতে হবে। ৩. কংগ্রেসের পতন অব্যাহত : বড় বিপর্যয় আসবে এটা সবাই আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু সেই বিপর্যয়টা যে শূন্যে পরিবর্তন হবে সেটা বোঝা গেল ভোটের ফলাফল বেরোনের পর। দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি কংগ্রেস। ইউপিএ জোট সরকারের দ্বিতীয় দফার ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার স্মৃতি ভুলে এই পুরনো দলকে ক্ষমা করে দিতে এখনও প্রস্তুত নয় ভোটাররা। তাই কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে রাহুল গান্ধীকে নতুন করে শুরু করতে হবে। ৪. দলীয় কোন্দল ও ফ্লপ কিরণ বেদি : বিজেপির দলীয় কোন্দলই এর জন্য অনেকটাই দায়ী। মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী কিরণ বেদি প্রজেকশন নিয়ে বিজেপির রাজ্য ইউনিটের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা ছিল। ৫. ক্ষমতাসীন বিরোধী : লোকসভা নির্বাচন ও পরবর্তী রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি তার ক্ষমতাসীন বিরোধী ইমেজ কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু এবার দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ বিজেপি তার সরকারের অন্য সফলতাগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। ৬. মুসলিমরা এখন বিজেপিকে নিয়ে সতর্ক : সবাই জানে বিজেপি ও মুসলিমদের মধ্যে নির্বাচনী আন্তরিক সম্পর্ক নেই। সাক্ষী মহারাজের সাম্প্রতিক উস্কানি এবং ঘর ওয়াপসির মতো কর্মসূচী মুসলিমদের বিজেপি থেকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। ৭. বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন ভিন্ন : এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচন ছিল না। দিল্লীতে এটি ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও এএপির নির্বাচন। নির্বাচন আরও ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে স্থানীয়, বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রবণতা বাড়ছে। ৮. মতামত ও বুথ ফেরত জরিপ সবসময় ভুল নয় : মতামত ও বুথফেরত জরিপ পক্ষে না গেলে তা প্রত্যাখ্যান করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এবারের মতামত জরিপ ও বুথফেরত জরিপের বেশিরভাগেই এএপির জয়ের ব্যাপারে ধারণা করা হয়েছে। তবে জরিপে এএপির এমন জয়ের বিষয়টি আশা করা যায়নি। ৯. অমিত শাহের বিপর্যয় : দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিজেপির প্রধান নির্বাচনী কৌশলপ্রণেতা অমিত শাহের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়। কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করাসহ তার নেয়া সব ধরনের উদ্যোগ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। -টাইমস অব ইন্ডিয়া
×