ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিন্দুস্তান টাইমসের বিশ্লেষণ

কেজরিওয়ালের জয়ের নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কেজরিওয়ালের জয়ের নেপথ্যে

দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির (এএপি) বিপুল বিজয় ভারতের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে। নির্বাচনে এএপি কেন বিজয়ী হলো, মোদির হার হলো কিভাবে এবং এই বিজয় কি বোঝাতে চাচ্ছে হিন্দুস্তান টাইমস এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছে। পত্রিকাটির মতে এই বিজয়ের গুরুত্ব ব্যাপক। ভারতের মূল্যস্রোতের রাজনীতিতে শহরে দরিদ্রদের অবস্থায় কোথায়, নরেন্দ্র মোদির কর্তৃত্বে এর কতটুকু প্রভাব পড়বে এবং বৃহত পরিসরে ভারতের রাজনীতিকেই বা এটি কিভাবে প্রভাবিত কেজরিওয়ালের এই বিশাল বিজয় এসব প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। কেজরিওয়ালের জয় আমাদের ভালভাবে মনে করিয়ে দেয় যে, ‘দরিদ্রদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিকল্প’ তুলে ধরার রাজনীতি নির্বাচনী গণতন্ত্রে একটি সফল কৌশল হতে পারে। এএপি সমর্থকদের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিও কিংবা কেজরিওয়ালকে সমর্থনকারী একজন অটোচালকের কথা শুনলে যা আপনাকে নাড়া দেবে তা হলো তাদের কথাবার্তায় কেজরিওয়ালের জন্য তাদের প্রচ- আবেগ, আন্তরিকতা ও প্রতিবাদের সুর ভাষা পায়। সেখানে আরও থাকে এ পর্যন্ত নীরব থাকা শহরে বিদ্রোহের এক আনন্দোচ্ছন অভিব্যক্তি। ক্ষমতার শূন্যগর্ভ প্রদর্শনীর প্রতি আস্থাহীনতার মধ্যে যে বিদ্রোহ মাথা চাড়া দেয় এতদিনে যেন তা ভাষা খুঁজে পেয়েছে। এএপি অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও শহরে দরিদ্র শ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার সময় বিনা পয়সার পানি সরবরাহ বিদ্যুত বিল অর্ধেক করে দেয়া এবং দিল্লী পুলিশ বিভাগে এক ধরনের শৃৃঙ্খলা ও সংযম বলবৎ করে তারা মানুষের মনে সুস্পষ্ট রেখাপাত করেছে। নিম্নবিত্তদের ধারণা এ রকম আগে কখনও ঘটেনি। কেজরিওয়ালও তাঁর সহযোগীরা তাদের তড়িঘড়ি পদত্যাগের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সমর্থকদের দুর্বল কণ্ঠের সমালোচনা করেও বস্তি পুনর্নির্মাণে সাহায্য এবং একদল স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে আইনগত সহায়তাসহ বিভিন্নমুখী সেবা প্রদান করে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের পাশে থেকেছেন। কেজরিওয়াল এক শ্রেণীর মানুষের ক্ষমতা ও প্রাচুর্য ও অপর শ্রেণীর বঞ্চনার মধ্যে সম্পর্ককে স্পষ্ট করেছেন। বিষয়টি পরিষ্কার : জনমানুষের কল্যাণ ব্যক্তিস্বার্থের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। রাজনীতিবিদ, বড় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুত কোম্পানিগুলো মিলে জনগণের কল্যাণ করার সম্পদরাজি লুণ্ঠন করার প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়িত করেছে যা সকলের উপকারে আসতে পারত। বিজেপি, অমিত শাহ ও মোদি বেশকিছু ভুল করেছেন। কেজরিওয়ালের মোকাবেলায় তারা দুই নারী নেত্রীকে বেছে নিয়েছেন। কিরণ বেদীকে কেজরিওয়ালের সক্রিয় কর্মীর পরিচয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। তবে কিরণ পর পর কয়েকটি অনাড়িসুলভ ভুল করে শুরুতেই বিপর্যয় ডেকে আনে না অপরদিকে নির্মলা সীতারামনকে একজন ন্যায়পরায়ণ টেকনোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে তুলে ধরা হয় যিনি কেজরিওয়ালকে প্রতিদিন পাঁচটি প্রশ্ন করতেন। একজন সক্রিয় কর্মী যিনি গণমাধ্যমের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন তাকে প্রশ্ন করার পরিহাস এবং যখন সরকার নিজেকে নিরীক্ষণের বাইরে রেখে গর্ভ অনুভব করতে চাচ্ছে, এই বিষয়গুলো অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি।
×