ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৪ স্লুইস গেট আটকেও সেচ পরিচালন সম্ভব হচ্ছে না

তিস্তায় ধু ধু বালুচর

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তিস্তায় ধু ধু বালুচর

তাহমিন হক ববি, তিস্তা ব্যারাজ থেকে ॥ হিমালয়ের চো লামু হ্রদ থেকে তিস্তার উৎপত্তি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৫শ’ ফুট উচ্চতায় এ নদীর উৎস। বিগত বছরের চেয়ে এবার পাহাড়ী পানির ঢলও কমে গেছে তিস্তায়। এ কারণে উজানের ভারতে গজলডোবায়ও পানি কমেছে। সেখান থেকে ভারতের অংশের তিস্তার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদী শুকিয়ে গেছে। তিস্তা এখন শুধু মাত্র পা ভেজা পানিতে চলছে। ফলে নদীর পানি প্রবাহের পরিমাপের কিউসেক যন্ত্রটি আর কাজ করছে না। পানি প্রবাহ এখন কত চলছে সে হিসাব এখন আর নেই। গত তিন দিন থেকে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে সেচ প্রদানে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে ৯শ’ হেক্টরে সেচ প্রদান করতে পেরেছে। কিন্তু দিন দিন পানি সঙ্কটে এখন সেচ পাচ্ছে মাত্র ৩শ’ হেক্টর আবাদী জমি। এর মধ্যে উজানের পানি প্রবাহ পাওয়া না গেলে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়তে পারে বলে কৃষকরা মনে করছেন। এদিকে কৃষকরা সেচের পানির দাবিতে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডে ধর্ণা দিলেও নদীর দিকে তাকিয়ে নিজেরাই মাথা নত করে ফিরে আসছেন। এখন সেচ নির্ভর বোরো আবাদে কৃষকরা বাধ্য হয়ে সেচ যন্ত্র ব্যবহারে নেমে পড়তে বাধ্য হয়েছেন। শনিবার তিস্তা নদীর উজানে বাংলাদেশ অংশে সরেজমিনে দেখা যায়, নদী এখন ক্ষীণ ধারায় বইছে। নদী আর নদী নেই। সেই নদী ঠেকেছে এক কোণে গিয়ে নালার মতো। উজান থেকে যে চুয়ানো পানি আসছে তা পা ভেজা পানি। তিস্তা ব্যারাজের উজানে যখন এই পরিস্থিতি তখন নদীর ভাটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বালিয়ারী। রোদ্রের আলোর ছটায় চিকচিক করছে। তিস্তা পারের ঝাড়শিঙ্গের চরের মাঝি আছির উদ্দিন(৬০) তার অভিজ্ঞতার আলোকে বললেন গত ৩১ বছরে নদীর পানি শূন্যতার এমন চিত্র এর আগে কোন দিন দেখিনি। আবার বাইশপুকুর চরের জেলে রহিম উদ্দিন বলেন কি আর বলব সবিতো নিজ চোখে দেখছেন। তারপরেও যদি বলতে বলেন তাহলে বলতে হয় নদী আছে প্রবাহ নাই, আমরা জেলে আছি কিন্তু মাছ নাই। নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে উজানের যেটুকু চুয়ানো পানি পাওয়া যাচ্ছে তা তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি কপাট বন্ধ করে ব্যারাজের সামনে পানি জমিয়ে তা কোন রকমে সেচ প্রকল্পের জলধারে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীর নাব্য এতটাই নিচে যে মাঝে মধ্যে জলাধার পানি টানতে পারছে না। উল্টো জলধারের পানি নদীতেই যেন ফিরে আসছে! তিস্তা ব্যারাজ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার এলাকার প্রধান ক্যানেলে যৎসামান্য পানি দেখা যায়। সেই পানি কৃষকরা পাইপের মাধ্যমে কোন রকমে বোরো আবাদের জন্য জমিতে নিয়ে যাচ্ছে। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলি টিটুএসওয়ানটি সেচ ক্যানেলের পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ক্যানেলে পানি আসছে না। বোরো আবাদে চরম সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েছে।
×