স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধের নামে দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত নাশকতার প্রতিবাদে এবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারীরা। সোমবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে তারা অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। কর্মসূচীর নামে দেশের গরিব শ্রমিকদের হত্যার অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তারা বলেছেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করুন। অন্যথায় কার্যালয়ের বাইরে নয়, দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিকরা আপনার কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়বে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে শ্রমিক সমাজ কাউকে রাজনীতি করতে দেবে না। পেট্রোলবোমার হামলা চালিয়ে শ্রমিক হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে তার গ্রেফতার দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারীরা। সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগের ব্যানারে কর্মসূচী পালন করা হয়। এক ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচীতে অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন। গত এক মাস ধরে বিএনপির অবরোধ-হরতালের মধ্যে এর আগে পরিবহন শ্রমিক লীগের পাশাপাশি দিনমজুর ও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ওই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান-মানববন্ধন করেছে। অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এতদিন চেয়ারপার্সন অবরুদ্ধ বলে নানা দাবি করলেও রবিবার বিএনপির উদ্যোগেই কার্যালয়ের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। সোমবার ৮৬ নম্বর সড়কে শ্রমিক লীগের ব্যানারে শ্রমিক-কর্মচারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিক কর্মীদের বাস, ট্রাকে করে গুলশান দুই নম্বর এসে সেখান থেকে মিছিল সহকারে গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কে চলে আসেন। পরিস্থিতি সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যালয়ের বাইরে দুটি ব্যারিকেড দিলেও একটি ভেঙ্গে কার্যালয়ের কাছে চলে আসেন কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মচারী। জাতীয় শ্রমিক লীগের এ কর্মসূচীতে ডেসকো শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ টিএ্যান্ডটি শ্রমিক লীগ, পল্লী বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, টিএ্যান্ডটি ইউনিট ফোরাম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগসহ বিভিন্ন শাখা কমিটির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচীতে আসা অনেকের হাতে ছিল জুতা। ছিল হরতাল অবরোধ, নাশকতার বিরুদ্ধে লেখা প্ল্যাকার্ড। তারা ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘অবৈধ হরতাল-অবরোধ মানি না, মানব না, আমার ভাই মরলো কেন, খালেদা জিয়া জবাব দে’ স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানান। ঘেরাও কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আহমেদ ফারুক, ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। নেতারা সারাদেশে বাসে-ট্রেনে পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে বলেন- এখনও সময় আছে, ধ্বংসাত্মক পথ থেকে সরে আসুন। নইলে এর পরিণতি শুভ হবে না। একই সঙ্গে তারা সহিংস রাজনীতির জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ি করে তাকে গ্রেফতার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করুন। জনগণ না হলে আপনার কার্যালয় ছাড়াও বাড়িও ঘেরাও করবে। বার্ন ইউনিটের মৃত্যুর যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা করেন। আপনার ছেলে মেয়ে কেউ থাকলে আপনি বুঝতেন জ্বালাও পোড়াও করলে কেমন লাগে। জনগণের কাতারে নেমে আসুন। জনগণই ঠিক করবে আপনি সরকারী দলে থাকবেন না বিরোধী দলে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের নামে এই জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে কাঁটাতারের বেড়া নয়, লোহার বেড়া দিয়েও খালেদা রক্ষা পাবেন না। শ্রমিক কর্মচারীরাই খালেদাকে কার্যালয় থেকে বের করবে।
ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ মারার বিরুদ্ধে মানুষ যেভাবে ফুঁসে ওঠেছে। সহিংসতার সময় তার কর্মীদের জনগণ যেভাবে ধোলাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করছে। বিক্ষুব্ধ জনতা খালেদার কার্যালয়ের দিকে যাওয়া শুরু করেছে। সেই ভয়েই খালেদা এখন নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যালয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন। তবে ভাল চাইলে এ সহিংসতার রাস্তা থেকে ফিরে আসুন। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় যত শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার দাবি জানান জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মোঃ শামসুল আলম বকুল।
সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বলছি, এখনও সময় আছে, দয়া করে অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিন। এ আহ্বানে সাড়া না দিলে শ্রমিকরা আপনার কার্যালয়ে ঢুকে পড়বে। তখন আপনি তাদের ঠেকাতে পারবেন না। কাঁটাতারের বেড়াও আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা না হলে আপনার বাসভবনও ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন শ্রমিকরা। আপনি (খালেদা জিয়া) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি অগ্নিদগ্ধদের যন্ত্রণা বুঝতে শিখুন। ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে হতাহত হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিক। যানবাহনে পেট্রোলবোমা মারা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।
নেতারা আরও বলেন, চলমান অস্থির রাজনীতি পরিহার করে গঠনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের উৎপাদন বন্ধ রেখে কৃষিপণ্য পরিবহনে ক্ষতি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া কোনও রাজনৈতিক কর্মকা- হতে পারে না। যেটা হচ্ছে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: