ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেরকেল-ওলাঁদ প্রস্তাব নাৎসী নেতাকে খুশি করার মতো, বললেন আমেরিকানরা

শান্তি উদ্যোগ-হিটলার তোষণ!

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শান্তি উদ্যোগ-হিটলার তোষণ!

ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ ক্রমশই দানা বেঁধে উঠেছে বলে মনে হয়। আমেরিকার উর্ধতন নেতারা জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওলাঁদের শান্তি উদ্যোগকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিনের গৃহীত নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারকে তোষণ করার নীতির সঙ্গে তুলনা করলে ঐ মতবিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইনের। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আগত আমেরিকান প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের বিরোধিতা করায় এ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে ‘পরাজিত মনোভাবাপন্ন’ বলে বর্ণনা মনে করা হয়। বৈঠকে ন্যাটোর সামরিক কমান্ডার জেনারেল ফিলিপ ব্রিডলাভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ বিষয়ক সবচেয়ে সিনিয়র কূটনীতিক ভিক্টোরিয়া লুল্যান্ড উপস্থিত ছিলেন। জার্মানির বিল্ট পত্রিকার কাছে ফাঁস করা বিস্তারিত তথ্য থেকে এটা জানা যায়। বৈঠকে মেরকেল ও ওলাঁদের শান্তি উদ্যোগকে ‘মস্কোর হুকুম’ বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। যে হোটেলে ঐ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই এক রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। জানা যায়, মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ঐ উদ্যোগকে ১৯৩৮ সালে চেম্বারলিন ও হিটলারের মধ্যে স্বাক্ষরিত মিউনিখ চুক্তির সঙ্গে তুলনা করেন। এ চুক্তিতে নাৎসী জার্মানিকে সুডেনটেল্যান্ড দখল করতে দেয়া হয়। ম্যাককেইন বলেন, যদি আপনি একনায়কদের সুযোগ দেন তাহলে তারা সব সময় বেশিই নেবে, ইতিহাস আমাদের এ শিক্ষা দেয়। তিনি বলেন, যখন আপনারা তাদের সঙ্গে দেখা করতে বিমানে করে মস্কো যান ঠিক যেমন নেতারা একবার ঐ শহরে গিয়ে ছিলেন তখন তারা তাদের পাশবিক আচরণ থেকে বিরত থাকবে না। এসব কাক্সিক্ষত মন্তব্য এমন সময় প্রকাশিত হলো, যখন বুধবার মিনস্কে এক নতুন শান্তি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে মেরকেল, ওলাঁদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেত্রো পেরোশেঙ্কোর মধ্যে ফোনে কথাবার্তা হয়। ঐ চার নেতা মেরকেল ও ওলাঁদের শান্তি উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বেলারুশের রাজধানীতে এক শীর্ষ সম্মেলনে মুখোমুখি আলোচনায় মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আলোচনায় রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। কিন্তু পুতিন বলেন, যদি নেতারা কয়েকটি বিষয়ে একমত হন, কেবল তা হলেই শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা বুধবার আলোচনায় মিলিত হতে চাইব, যদি ঐ সময়ের মধ্যে আমরা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে আলোচনা করে এসেছি এমন কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে পারি। মিউনিখে আমেরিকানদের বৈঠকে প্রতিনিধিরা শান্তির জন্য নতুন উদ্যোগ সত্ত্বেও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের পথে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। বিল্টের খবরে একথা বলা হয়। জানা যায় জেনারেল ব্রিডলাভ বলেন, ইউক্রেন যাতে রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে, সেই পরিমাণ অস্ত্র আমরা সরবরাহ করতে পারব না। সামরিক কমান্ডার বলেন, কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য ব্যবস্থা যাতে কাজে আসার মতো সময় পায়, সেজন্য সমগ্র সংঘাতের বিস্তৃতি শ্লথ করতে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি পুতিনের জন্য অবশ্যই কঠিন করে তোলার চেষ্টা করব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রবিবার সকালে নিরাপত্তা সম্মেলনে দেয়া তাঁর ভাষণে কোন মতবিরোধ থাকার কথা অস্বীকার করেন। কেরি বলেন, কোন বিভাজন নেই, কোন মতপার্থক্য নেই আমি সবাইকে এ আশ্বাস দিচ্ছি। লোকজন মতবিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে আমি শুনতে পাই। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ, আমরা একসঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যে এ চ্যালেঞ্জের অবসান ঘটবে না, তা নিয়ে আমরা সবাই একমত। কিন্তু জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্কওয়াল্টার স্টেইনমেইয়ার তাঁর ভাষণে ইস্যুটির দিকে দৃষ্টি দেন বলে মনে হয়। তিনি বলেন, যারা আমাদের সন্দেহবাদের পেছনে কাপুরুষতা বা ইতিহাস বিস্মৃতি রয়েছে বলে সন্দেহ করেন, আমি এটিকে তাদের মতো সহজ বলে গণ্য করতে পারি না। তিনি বলেন, যারা এতই নিশ্চিত তাদের এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে হবে যেসব বিকল্প উপায় নিয়ে এখন আলোচনা করা হচ্ছে, সেগুলো কি হাজার হাজার লোকের মৃত্যু রোধ ও উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে? আমরা কি আলাচনায় আর কোন কাজ হবে না এমন পর্যায়ের কাছাকাছি চলে যাইনি? তিনি প্রশ্ন করেন।
×