ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন অকার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন অকার্যকর

আরাফাত মুন্না ॥ আইন প্রণয়নের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কিছুই করতে পারেনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এখনও পর্যন্ত কমিশনকে পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন করাও সম্ভব হয়নি। নদ-নদী ও পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিতে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি করা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন। তবে এখনও পর্যন্ত আইনটি প্রয়োগে প্রণয়ন করা হয়নি বিধিমালাও। জারি করা হয়নি কোন প্রবিধান। এ অবস্থায় অকার্যকরই রয়েছে নদী রক্ষায় গঠন করা এই কমিশন। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই কমিশন পূর্ণাঙ্গ কাজ শুরু করতে পারবে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গতবছর ৩ আগস্ট মোঃ আতাহারুল ইসলামকে সচিবের মর্যাদায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১২ সালে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব থাকা অবস্থায় অবসরে যান তিনি। আর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় হতে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিব মোঃ আলাউদ্দিনকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই কমিশনের অনুমোদন দেয় জাতীয় সংসদ। এদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি কমিশন আইনের ৫ ধারা অনুসারে দুই জন সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলেন- ড. মোমিনুল হক সরকার, শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ। এদিকে চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কমিশনের জন্য ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অনুমোদন হয়নি অর্গানোগ্রাম (লোকবল কাঠামো)। জানা গেছে, ১৫৩টি পদের জন্য অর্গানোগ্রাম তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কমিশন। পরে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ে সেই অর্গানোগ্রাম কিছু পর্যবেক্ষণসহ ফেরত পাঠায়। তা সংশোধন করে পুনরায় এখন পাঠানো হয়নি। আইনে কমিশনের কার্যাবলির মধ্যে নদীর স্বার্থে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়, অবৈধ দখল ও পুনর্দখল রোধ, নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখা, বিলুপ্ত ও মৃতপ্রায় নদী খনন, নদী রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন, নিয়মিত পরিদর্শন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজে সরকারকে পরামর্শ দেয়াসহ নদী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে যে কোন সুপারিশ করার দায়িত্ব নদী রক্ষা কমিশনকে দেয়া হয়েছে। দেশের খাল, জলাশয় ও সমুদ্র উপকূল দূষণ ও দখলমুক্ত রাখতে সরকারকে সুপারিশ করাও এর কার্যপরিধিতে রাখা হয়েছে। তবে সবই পরামর্শমূলক, নির্বাহী কোন ক্ষমতা দেয়া হয়নি কমিশনকে। কমিশন শুধু সুপারিশ করবে। পরিবেশবাদীদের দাবি ও ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গঠন করা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তবে এতদিনেও কমিশন পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এবং কমিশনের ক্ষমতা শুধু সুপারিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান পরিবেশবাদীরা। তবে যেহেতু কমিশন গঠন হচ্ছে তাই ধীরে ধীরে এর কার্যক্রম শুরু হবে আর নির্বাহী ক্ষমতাও দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নদী, পানি ও পরিবেশসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করবে নদী কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান সচিব পদমর্যাদার হওয়ার কারণে সমন্বয়ে সমস্যা হবে, অন্যরা তা নাও মানতে পারে। সরাসরি কোন কার্যক্রম বান্তবায়নের ক্ষমতা না দিয়ে সুপারিশ করার বিধান রেখে কমিশনের কাছ থেকে তেমন কোন সুফল পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এ কথা সত্য, কমিশন এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে কমিশনের কার্যক্রম থেকে নেই। তিনি আরও বলেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে মধ্যে বিধিমালা ও প্রবিধানমালা প্রণয়ন সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। আর লোকবল কাঠামো অনুমোদন হলে বাজেটের টাকা অর্থবছরের শেষ ভাগে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
×