ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একুশে অনুষ্ঠানমালা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একুশে অনুষ্ঠানমালা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা যখন পরিবেশন করছিলেন, তখন উপস্থিত অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একুশে অনুষ্ঠানমালায় দেখা গেছে এই চিত্র। তিন দশকের ধারাবাহিকতায় জোটের আয়োজনে রবিবার বিকেলে জাতির সকল শক্তির আধার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ১৪ দিনব্যাপী একুশে অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক ডাঃ আহমদ রফিক। এই আয়োজনে একুশের শোকাবহ পরিবেশের পাশাপাশি সমবেত সবাই সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রতিক রাজনীতির নামে সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে। এবারের সেøাগান ‘বুকের খুনে যুদ্ধ জারি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’। অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ১৪ দলের আহ্বানে দেশব্যাপী মানববন্ধনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জোট শহীদ মিনার সম্মুখে রাস্তায় মানববন্ধন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপর শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সঙ্গীত। পরে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন উদ্বোধক ভাষাসৈনিক ডাঃ আহমদ রফিক। আলোচনায় অংশ নেন জোটের সাবেক সভাপতি নাট্য ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী ফকির আলমগীর, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ। উদ্বোধনী ঘোষণায় ডাঃ আহমদ রফিক বলেন, ’৫২ ভাষা আন্দোলনে এক বিরাট বিস্ফোরণ হয়েছিল। তখন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছিল বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বহু আন্দোলন সংগঠিত হয়। তখন আমাদের বয়সী ছাত্ররা ঘরে বসে থাকেননি। ভাষার অধিকার আদায়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করি আমরা। সংস্কৃতি একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা সমাজ পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এখনের বাস্তবতায় আমাদের চোখ বন্ধ করে থাকলে চলবে না। গণতন্ত্রের নামে, শান্তিপূর্ণ অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা ছুড়ে যে সন্ত্রাস করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীদের সোচ্চার হওয়া উচিত। আমি মনে করি সংস্কৃতি কর্মীরা স্বার্থান্বেষী নয়। জোটের উচিত হবে সারাদেশে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আজ যেমন সবাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে, আরও আগে এ আসা উচিত ছিল। তাহলে হয়ত এত প্রাণ অকালে চলে যেত না। এর দায় শুধু সরকারের নয়, আমাদের সকলের। আমার আহ্বান, সুস্থ রাজনৈতিক কর্মী, সংস্কৃতি কর্মী সবাই আসুন, আমরা এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথে নামি। আমার বয়স এখন ৮৬, আপনাদের সবার সঙ্গে আমার অসুস্থতা নিয়ে আমিও রাজপথে থাকব। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে একক ও দলীয় পরিবেশনায় ফুটে ওঠে বাঙালীর প্রতিবাদের ভাষা। এ পর্বে স্বরচীত্রের দলীয় আবৃত্তি, স্পন্দনের দলীয় নৃত্য ও সঙ্গীতশিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়নার একক সঙ্গীত পরিবেশনা অনুষ্ঠানের ভিন্ন তাৎপর্য এনে দেয়। সবশেষে পথনাটক পরিবেশন করে পদাতিক নাট্য সংসদ টিএসসি। ‘তাহাদের কথা’ নামের নাটকটির মূল ভাবনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মমিনুল হক। এখানে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা চলবে অনুষ্ঠান। শুরু হবে প্রতিদিন বিকেল ৪টায়। ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান থাকবে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে।
×