ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টারে র‌্যাবের লিফলেট বিতরণ

বিদেশী দূতাবাসের কাছে পুড়িয়ে মারার চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিদেশী দূতাবাসের কাছে পুড়িয়ে মারার চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ

শংকর কুমার দে ॥ বিদেশী দূতাবাস ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ভয়াবহ সহিংস সন্ত্রাসের নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত এক মাসে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুম-খুনের তালিকা বিদেশী দূতাবাস ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে পাঠিয়েছে বিএনপি। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার বন্ধে, বিদেশী দেশগুলো ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ, জনমত সৃষ্টির উদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অবরোধ ও হরতালের নামে দেশের ভেতরে বিএনপি-জামায়াত পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নৃশংসতা ও নির্মমতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের নানা ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে জনমত গড়ে ওঠতে শুরু করেছে। হেলিকপ্টারে আকাশ থেকে ‘মা কাঁদছে, জ্বলছে দেশ, ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ ইত্যাদি শিরোনামের রঙিন লিফলেট ছেড়েছে সরকারের এলিট ফোর্স অভিহিত র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নৃশংসতার ভয়াবহতা অব্যাহত আছে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধ-হরতালের নামে সারাদেশে বাসে, ট্রাকে, যানবাহনে আগুনে পুড়ে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে অন্তত ৪৭ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ’ নিরীহ নিরপরাধ যানবাহন আরোহী, পথচারী। শুধু গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত গাইবান্ধা ও বরিশালে পৃথক দু’টি পেট্রোলবোমা হামলায় নিহত হয়েছেন ৯ জন। বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ ও হরতালের নামে সহিংস সন্ত্রাসে মারা গেলেন ৭৮ জন। এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কুমিল্লায় একটি নাইট কোচে ছোড়া পেট্রোলবোমায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ২৩ যাত্রী। গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে একটি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ২৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে নূর আলম নামে এক যাত্রী ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই ঘটছে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তারা ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। অবরোধ ও হরতালে সহিংসতার শিকার হয়ে শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৯ জন। চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন আরও অন্তত ৬০ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ৬৪ জন। এসব রোগীর সবাই সাধারণ মানুষ। বিএনপি-জামায়াত অবরোধ ও হরতাল ডেকে পেট্রোলবোমার আগুনে সহিংস সন্ত্রাসের শিকার হয়ে হতাহতদের ঘটনার শেষ কোথায় তার কোন উত্তর কারও জানা নেই। সূত্র জানান, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রথমে দেশের ভেতরে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করা হয়েছে। খোদ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ জন্য দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারকে। এবার তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার, খুন, গুম ও নিখোঁজের অভিযোগ এনে বিদেশী দূতাবাস ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কথিত তালিকা পাঠানো হয়েছে, যা সত্যের সঙ্গে কোন মিল নেই। এমনকি গত ৬ জানুয়ারির পর থেকে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে আগের খুন, গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলোকেও একত্রিত করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে বিদেশী দূতাবাস ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে বিএনপি-জামায়াত সাহায্য ও সহানুভূতি আদায়সহ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সূত্র জানান, বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যাচার, অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানাতে এবং তাদের ভয়াবহ নৃশংসতা, নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার কাহিনীগুলো তুলে ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের ভেতরে ব্যবসায়ী, ছাত্রÑশিক্ষক, দিনমজুরসহ নানা পেশাজীবী সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে সহিংস সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানানো হবে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই আকাশ থেকে হেলিকপ্টারযোগে রঙিন হ্যান্ডবিল ছাড়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংস সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলে আইনী পদক্ষেপ ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে জনমত গঠন, পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদেশী দূতাবাস ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে সঠিক তথ্যচিত্র সম্বলিত বিএনপি-জামায়াতের নির্মম নিষ্ঠুরতার পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ও জীবন্ত দগ্ধ করার বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। র‌্যাবের মমস্পর্শী সেøাগানের লিফলেট ॥ র‌্যাবের সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে রংপুরসহ বিভিন্নস্থানে নাশকতা ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আকাশ থেকে হেলিকপ্টারযোগে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আকাশ থেকে ফেলা রঙিন এ লিফলেটের শিরোনাম হচ্ছে, ‘মা কাঁদছে জ্বলছে দেশ ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ। লিফলেটগুলোতে আছে আগুনে দগ্ধদের ছবি। লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘সারাদেশব্যাপী অবরোধ হরতালে বিপন্ন দেশ, বিবর্ণ মহাকাল, বেওয়ারিশ বোমায় পুড়ছে বাস, পুড়ছে আমার মা, পুড়ছে আমার ভাইবোন, আগুনে দগ্ধ আমার পরিবারের সঙ্গে জ্বলছে জাতির বিবেক। আর পুড়তে দেব না, হতে দেব না কোন ক্ষতি, রুখে দাঁড়াবো, নিরাপদ একটি দেশ গড়বো, এটাই নতুন অবগতি। অপর একটি লিফলেটে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। এছাড়া নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে পুরস্কারের একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে। তাতে ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কারের তালিকা দেয়া আছে। পর্যায়ক্রমে রংপুরের বাইরের বিভাগ ও জেলাগুলোতে র‌্যাবের প্রচারপত্র, লিফলেট ছেড়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে দুর্বৃত্ত, দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত। গত এক মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুনের একটি তালিকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ বিদেশী দূতাবাসে পাঠিয়েছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে তাদের সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে দলটি। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে ঢাকায় আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কাছেও এ তালিকা দেয়া হবে এবং দেখা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় খুন, গুম, নিখোঁজসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো উত্থাপন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিএনপি বিদেশীদের কাছে যেসব অভিযোগ করবে, তার মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে যৌথ অভিযানের নামে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীর গ্রেফতারের পাশাপাশি কথিত বন্দুক যুদ্ধে ‘সাজানো’ নাটকের মাধ্যমে হত্যাকা-ের ঘটনা করেছে। গত ৫ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন নির্বাচনে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ সাদা পোশাকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে বিরোধীদলের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৪৩ জন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকা-ের মধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি, বরিশালে উজিরপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনসাধারণ রয়েছে। পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী করা হবে সরকারকে। সরকারকে দায়ী করে বিদেশী দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠেছে। কারণ তারা আন্তর্জাতিক মহলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে তাদের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারা গেছে অন্তত ৪৭ জন এবং সহিংস সন্ত্রাসে নিহত হয়েছে ৭৮ জন। আহত হয়েছে সহস্রাধিক। সহায় সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ ও জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ও আহত হওয়ার সচিত্র প্রতিবেদনগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যাচার, অপপ্রচারের সমুচিত জবাবসহ তাদের জঙ্গী কায়দায় জীবন্ত দগ্ধের বীভৎস ও মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যচিত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
×