ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মার দুর্গম বালুচরে সোনা ফলছে, সবুজের সমারোহ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পদ্মার দুর্গম বালুচরে সোনা ফলছে, সবুজের সমারোহ

তৌহিদ আক্তার পান্না ॥ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরবর্তী চরাঞ্চল। দুর্গম এলাকা। আগে সাধারণ মানুষের পায়ের ধুলো তেমন একটা পড়তো না। কিন্তু প্রত্যন্ত চরের এ দুর্গম অঞ্চলেই সম্প্রতি নীরবে ঘটে গেছে কৃষিবিপ্লব। দুর্গম ওই চরে এখন সবুজের ফসলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। মাত্র কয়েক বছর আগেও যেখানে ছিল গহীন কাশবন কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে পুরো অঞ্চলের চেহারাই যেন পাল্টে গেছে। ঈশ্বরদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চারটিতে ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম অর্থকরী ফসল। ১০টি দুর্গম চরাঞ্চলে সোনা ফলিয়েছেন এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। পাকশ’তে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত শত বছরের পুরনো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণে সাড়া, পাকশী, লক্ষ্মীকু-া ও সাহাপুর ইউনিয়নের অবস্থান। এসব ইউনিয়নের অনেক অংশজুড়ে রয়েছে পদ্মা নদী। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগেছে বালুচর। এসব চরে কৃষকরা এখন ফলাচ্ছে নানারকম ফসল। এর মধ্যে আছে খেসারি, মরিচ, পিঁয়াজ, বাদাম, তিল, কাউন, চিনা, আখ ও ধান। একদা উত্তাল পদ্মার চরে এখন সবুজের সমারোহ। ড্রেজিং না করার কারণে স্বাধীনতার পর থেকে পলি জমে খরস্রোতা সেই নদী এখন নালায় পরিণত হয়েছে। জমি-জমা খুইয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর জেগে ওঠা ওইসব জমিতে শুরু করেছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ । পাকশীর রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রহিম মিয়া (৭০) জানান, ১৯৬০ সালের দিকে এ অঞ্চলে অন্তত ২০টি গ্রাম ছিল। যেখানে হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ১৯৬৪ সালে হঠাৎ সেই গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এলাকার ২০টি গ্রামের হাজার হাজার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গবাদিপশুসহ কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তীতে পদ্মা নদীর বাহির চর পূর্ব বাহিরচর ঈদগাহ পাড়া, রূপপুর প্রভৃতি এলাকার এ ধ্বসে পড়া অঞ্চলটি চরাকৃতি হয়ে নদীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়। এসব গ্রামের বেঁচে থাকা মানুষজন ধীরে ধীরে চরে গিয়ে তাদের ভিটেমাটি ও জমি খুঁজে খুঁজে বের করে। কিন্তু আজ অবধি কেউ ওইসব জমিতে ঘর করার সাহস পায়নি। কারণ একদিকে আবারও ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা অন্যদিকে চরটির অবস্থান নদীর মাঝখানে হওয়ায় জায়গাটি দুর্গম। পাকশী এলাকায় পদ্মা নদীর বিচ্ছিন্ন চর জেগে ওঠার পর থেকে চরের হাজার হাজার একর জমিতে ধীরে ধীর একজন দু’জন করে চাষাবাদ শুরু করে। এখন সেই আবাদী কৃষকেরা সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ চরে আবাদ করে স্বাবলম্বী কৃষকের সংখ্যা এখন শত শত। শুধুমাত্র এ চরে আবাদ করে লাখ লাখ টাকার মানুষ বনে গেছেন এমন কৃষকের সংখ্যাও কম নয়। এ চরে আবাদ করা কৃষক ও শ্রমিকরা জানান, কয়েক বছর আগেও এ চরে ছিল গহীন কাশবন। দুর্গম কাশের বনে মানুষ যেতে চাইলে বড় বড় নৌকা ভর্তি দলবদ্ধ মানুষ ঢাক-ঢোল, লাঠি-সড়কি ও অস্ত্র নিয়ে যেতো। এখন সময় বদলে গেছে। এ চরে গহীন কাশবনের বদলে ধান, পাট, আখ, ফুলকপি, গাজরসহ সবধরনের সব্জি, বিভিন্ন জাতের কুল, রবি শস্য ইত্যাদি আবাদ হচ্ছে। হাজার হাজার দিনমজুর নিয়মিত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এ চরে। চরের মানুষ নৌকা পারাপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করে এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সামান্য হলেও চাঙ্গা করছেন তারা, অথচ এ চরের অনেক জমির মালিকরা এখনও ফিরে পায়নি তাদের প্রকৃত মালিকরা। চরের হাজার হাজার একর জমি জেগে উঠার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী লোকজন ক্ষমতার দাপটে চরের জমি দখল করেছেন। যা দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও জমির প্রকৃত মালিকগণ।
×