ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ কিলোমিটার জুড়ে ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

১৮ কিলোমিটার জুড়ে ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ লাখো মানুষের কণ্ঠে ছিল নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার দৃপ্ত শপথ। তাঁদের হাতে হাতে ছিল একাত্তরের মতো বর্তমানে অবরোধ-হরতালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নানা ভয়াল-বীভৎস ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। চোখে-মুখে ছিল রাজনীতির নামে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রচ- ঘৃণা-ধিক্কার। এমনিভাবে রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল দল আহূত ‘শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে’র এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ ফুঁসে ওঠা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে শ্যামপুর ব্রিজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার পথে শান্তির পক্ষের লাখো মানুষের উপস্থিতিতে গড়ে ওঠা মানবপ্রাচীর রীতিমতো জনারণ্যে পরিণত হয়। বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষকে সম্পৃক্ত করে মানববন্ধনের মাধ্যমে দেশজুড়ে শান্তির পক্ষে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলে বড় ধরনের শো-ডাউন করে চৌদ্দ দল। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সত্যিই এক অন্যরকম গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল এই মানববন্ধন কর্মসূচীকে ঘিরে। ১৪ দলের পাশাপাশি চিকিৎসক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাগণ, কৃষক-শ্রমিক এমনকি অনেক সাধারণ মানুষকেও এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে শ্যামপুর ব্রিজ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কপথে গড়ে তোলা এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা অবিলম্বে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার এবং চলমান নাশকতা-সহিংসতা দমনে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত যা করছে তা রাজনীতি নয়, এটি সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গীবাদ। খালেদা জিয়া রাজনৈতিক নেত্রী থেকে এখন দানবে পরিণত হয়েছেন, বোমাবাজ-সন্ত্রাসী-খুনীদের নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তাই দানবের সঙ্গে কখনও মানবের সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে না। কোন সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের কাছে আমরা মাথানত করব না। দেশের জনগণ সারাদেশেই জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলে একাত্তরের মতোই খালেদা জিয়া ও ঘাতক জামায়াতকে পরাজিত করবে। জনপ্রতিরোধের মুখে খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবেন। নাশকতা প্রতিরোধে নেতারা নতুন আইন প্রণয়ন, নতুন আদালত এবং নতুন বাহিনী গড়ে তোলাও দাবি জানান। বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলায় একযোগে এই এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। আর রাজধানীতে ১৮ কিলোমিটার পথের ১৪টি পয়েন্টে এই কর্মসূচী আয়োজন করা হয়। গাবতলী থেকে শ্যামপুর- পূর্বনির্ধারিত ১৮ কিলোমিটার এই রুটের বাইরেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ অনেক জায়গাতেই ১৪ দলের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানবপ্রাচীর গড়ে তুলেন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিক বিভিন্ন দলের সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম ও সমমনা সংগঠনগুলোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের পক্ষের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-নারী সংগঠনগুলোর নেতারাও যোগ দেন। সর্বত্র বিকেল ৩টার আগে থেকেই মানুষ রাস্তার দু’পাশে হাতে হাত রেখে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যান। অনেকেই জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, বিএনপি-জামায়াত বিরুদ্ধে সেøাগানে সেøাগানে পুরো ঢাকা মহানগরকে প্রকম্পিত করে তোলেন। আর শান্তির পক্ষে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে এই মানবপ্রাচীরটি জনারণ্যে পরিণত হয়। রাজধানীর গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল হয়ে শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট হয়ে ২৭ নম্বর রোড, ধানম-ি ২৭ নম্বর রোড থেকে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত, রাসেল স্কয়ার, গ্রীন রোড স্কয়ার হয়ে বসুন্ধরা মার্কেট, বসুন্ধরা মার্কেট থেকে সোনারগাঁও হোটেল, সোনারগাঁও হোটেল মোড়, বাংলামটর, রূপসী বাংলা হোটেল হয়ে শাহবাগ মোড়, শাহবাগ মোড় থেকে মৎস্য ভবন, মৎস্য ভবন থেকে কদম ফুল ফোয়ারা, প্রেসক্লাব হয়ে পল্টন মোড়, পল্টন মোড় থেকে নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে গুলিস্তান মোড়, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার (গুলিস্তান সিনেমা মোড়) থেকে পার্কের মধ্য দিয়ে ইত্তেফাক মোড়, ইত্তেফাক মোড় থেকে রাজধানী মার্কেট, রাজধানী মার্কেট থেকে সায়েদাবাদ, সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে শ্যামপুর ব্রিজ পর্যন্ত এই মানবপ্রাচীর গড়ে তোলা হয়। ঢাকা মহানগরীর প্রায় এক শ’টি থানা থেকে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অজস্র মিছিল নির্দিষ্ট করে দেয়া স্থানে এসে গড়ে তোলেন এই মানবপ্রাচীর। কর্মসূচীতে বিপুলসংখ্যক একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহণ এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি করে। মানববন্ধনে ছিল গগনবিদারী অভিন্ন আওয়াজ ‘খুনী খালেদার বিচার চাই, একাত্তরের দোসরদের রক্ষা নাই।’ ঠিক বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সামনে একাত্তরের রণাঙ্গনের কালজয়ী সেøøাগান ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। বিকেল ৪টায় বাঁশি বাজিয়ে কর্মসূচীর সমাপ্তিও টানেন তিনি। মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে সেখানে নগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, আওয়ামী লীগের মাহবুবউল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এম এ আজিজ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, শাহে আলম মুরাদ, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডা. অসীত বরণ রায় প্রমুখ। কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চলমান নাশকতা ও সন্ত্রাস নির্মূল এবং দানবীয় শক্তি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত আরও বড় কর্মসূচী নিয়ে মাঠে থাকবে ১৪ দল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মানুষ হত্যাকারী ও জঙ্গীবাদের নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তার নির্দেশেই সারাদেশে বিএনপি জোটের সন্ত্রাসীরা নিরীহ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, রাজনীতিতে হেরে গিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন পোড়ামাটির নীতি অবলম্বন করছেন, ঠিক যেভাবে হানাদার বাহিনী একাত্তর সালে এই নীতি অবলম্বন করেছিল। মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, রক্তপিপাসু খালেদা জিয়ার আর কত রক্ত হলে, আর কত মায়ের কোল খালি করলে তাঁর তৃষ্ণা মিটবে জানি না। পৃথিবীতে যেভাবে সন্ত্রাস দমন করা হয়, বাংলাদেশও তেমনিভাবে কঠোরহস্তে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস দমন করা হবে।
×