ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প

যাঁরা আজ ‘পেট্রোলবোমাই সকল ক্ষমতার উৎস’ নির্ধারণ করে মানবতাবিরোধী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছেন, তাঁরা স্রেফ ক্ষমতার জন্যই এটা করছেন, তা নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে আরও ষড়যন্ত্র, নানা কার্যকারণ। গত ৪৪ বছর ধরে যে গোপন ও প্রকাশ্য তৎপরতা চলে আসছে, তার বাস্তবায়নের চূড়ান্ত লক্ষ্যে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। তাই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিনাশ সাধনের মাধ্যমে একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে দেয়া ও প্রতিশোধ নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ধর্মের নামে ‘সব মুসলমান ভাই ভাই’Ñ এই জজবা তুলে তারা অতীতের চরম পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নিতে তৎপর দিকে দিকে। ধারণা করা হয়েছিল, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম আযমের স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ স্থবির হয়ে গেছে, যা পুনরুদ্ধারে তিনি ১৯৭২ সাল থেকে তৎপরতা চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। নাশকতামূলক তৎপরতায় সিদ্ধহস্ত হিসেবে খ্যাতরা তাদের পুরো শ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ব্যয় করছে মৃত সেই উপনিবেশ রাজ্য ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারে।’ বাঙালী জাতি ও তার স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র বিরোধিতা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। ধর্মকে বর্ম করে তারা তাদের লক্ষ্যকে সম্প্রসারিত করে আসছে পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে। দীর্ঘসময় ধরে যত তৎপরতাই চালিয়েছে, তা একটা জায়গায় এসে মুখ থুবড়ে পড়লেও তা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে ক্রমশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে আশ্রয় করে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারে সাজাপ্রাপ্ত। একজনের ফাঁসি হয়েছে। বাকিরা শাস্তির অপেক্ষায়। তাদের অবর্তমানে এ প্রকল্প এখন জামায়াত-বিএনপির সমন্বয়ে চলছে। একাত্তরের ধারায় তারা হত্যাযজ্ঞে নেমেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি। একাত্তরের হানাদাররা প্রথমেই তাদের হত্যা ও আক্রমণের লক্ষ্য করেছিল সাধারণ জনগণকে। তাই ঢাকার বস্তিগুলো পুড়িয়ে দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল। একুশ শতকে এসে হানাদারদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও তাদের উত্তরসূরিরাও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ক্রমশ তা অন্যস্তরেও যে উন্নীত হবে, তার প্রমাণ তারা ২০১৩ সালেও দিয়েছে। এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে। একাত্তরে পেশাজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিকরা গণহত্যার শিকার হয়েছেন। এবারও যে হবেন না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ পরিস্থিতি ক্রমশ সেদিকেই টেনে নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের নাম ভাঁড়িয়ে পরাজিত শক্তিগুলো সন্ত্রাস, নাশকতা, সহিংসতা, পৈশাচিকতা চালিয়ে যাচ্ছে একতরফাভাবে। যেমনটা একাত্তরের গোড়ায় পাকিস্তানী হানাদাররা নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছিল। ২৫ মার্চ বস্তি, ছাত্রাবাসসহ আবাসিক এলাকাগুলোতে গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। দাউ দাউ আগুনে সেদিন ঘুমন্ত মানুষরা পুড়ে অঙ্গার হয়েছিল। যারা ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিল তাদের মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছিল। নারী-পুরুষ, শিশুর বাছবিছার ছিল না। সবাইকে গণহারে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। একালেও এসে দেখা যায়, সেই শক্তি নতুন উদ্যমে নানা কলাকৌশলের মাধ্যমে সমাজে অবস্থান নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীও তাদের মারণবান থেকে রেহাই পায় না। একাত্তরের মতোই চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধ। একাত্তরের মতো একালেও ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারী, ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু এবং দরিদ্র মানুষকে আক্রমণ করে জঙ্গীবাদ পরিচালিত হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, তা ধ্বংস করে দিতে যুদ্ধে পরাজিত শক্তিরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে একুশ শতকে এসে। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ‘দি ওয়ার ইজ নট ওভার।’ যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। ১৯৭১ সালে পুরো বাঙালী জাতিই ছিল আক্রমণের লক্ষ্য। শুধু কতিপয় দোসর, দালালই ছিল তাদের সহযোগী। সেদিন বাঙালীর ওপর পাকিস্তানীদের গণহত্যার বিরুদ্ধে গোড়াতে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়নি। তেমন সাড়াও মেলেনি পাকিস্তানীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে বরং মার্কিন, চীন, আরব দেশগুলো সমর্থন দিয়েছিল। প্রতিবেশী ভারত এবং পরে রাশিয়া ছাড়া আর কোন প্রভাবশালী দেশ গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। আজকেও বিশ্ববিবেক গোড়াতে নিশ্চুপ থাকলেও ক্রমান্বয়ে তারা এই মানুষ হত্যার নিন্দা জানাচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ক যে সংগঠনগুলো ২০১৩ সালের ৫ মে মৌলবাদীদের নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কাজকে সমর্থন করেছিল, তারাও আজ মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করছে না; বরং হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে। সাধারণ নিরীহ মানুষ বার্ন ইউনিটে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তাদের পাশে গিয়েও দাঁড়ায় না মানবাধিকার নামক সংগঠনগুলো। এক সংগঠন তো বলেই বসেছে, পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত নয় বলে বক্তব্যও রেখেছে। এর অর্থ খুন করা যাবে কিন্তু খুনীকে আটকানো যাবে না। পরাজিত শক্তির প্রতি সহমর্মী মানবাধিকার সংগঠনগুলো মূলত মানুষের অধিকার পরিপন্থী কাজই করে আসছে। মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে। দেখা গেছে, একাত্তরে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে দিল্লী হাইকমিশন থেকে ইসলামাবাদে গিয়ে ভাল পোস্টিং পেয়েছিলেন যে বাঙালী আমলা, তাঁর গাড়িতে জানুয়ারি মাসে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং তাঁকে গুলির ঘটনা নিয়ে বহির্বিশ্ব সরব হয়ে উঠেছিল। বেগম জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টাটি বাংলাদেশবিরোধী আদি হতেই। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে দগ্ধ করে হত্যায় বহির্বিশ্ব তেমন সরব নয়। ঘোষণা দিয়ে একাত্তরে হানাদাররা নেমেছিল গণহত্যায়। আজকেও ইয়াহিয়া, টিক্কা, নিয়াজির সহযোগী ও উত্তরসূরিরা সম্মিলিত হয়ে ঘোষণা দিয়ে, নির্দেশ দিয়ে ভাড়াটে ও দলীয় সন্ত্রাসী এবং জঙ্গীদের কাজে লাগিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যা, সম্পদহানি করার পাশাপাশি সবকিছু অচল, স্থবির করে দেয়া, জনজীবন বিপর্যস্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে এবং এর মাত্রা ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছে। একাত্তরে ঢাকায় পাকিস্তানীরা বাঙালী নিধনে একতরফা গণহত্যায় মেতেছিল। তারপর ক্রমান্বয়ে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়। এমনকি দুর্গম, প্রত্যন্ত গ্রামেও গণহত্যা ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হানাদাররা; বাঙালি হত্যার নেশায় তারা মত্ত হয়ে পড়েছিল। হেন অপকর্ম নেই তারা করেনি। আজকেও দেখা যায়, ঢাকা শহরে তারা সন্ত্রাস, সহিংসতা, পৈশাচিকতা শুরু করে। এখন তা ক্রমান্বয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যা চলছে। একাত্তরে নির্দেশ আসত পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে, এখন আসে লন্ডন হতে এবং তা সরাসরি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনুসারীর কাছেও। তাকে মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। দলসহ নির্দেশদাতাকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে ঘাতককে। সেই টোপে অনেকেই মোহগ্রস্ত হয়ে একতরফা সহিংসতা তথা চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তান তথা আইএসআইয়ের নির্দেশে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের দল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানকেন্দ্রিক এই দলটির একাত্তর এবং একাত্তরপরবর্তী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। মানবতাবিরোধী অপরাধে এই দলটির শীর্ষপদ দখলকারীরা বিচারে দ-প্রাপ্ত হয়ে এখন শাস্তির অপেক্ষায়। ফাঁসি কার্যকর করার আগে এই নেতাদের মুক্ত করার একটাই পথ তাদের কাছে, আর তা হচ্ছে অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে ক্ষমতা থেকে যে কোনভাবেই নামিয়ে ক্ষমতা দখল। পেট্রোলবোমা বানানো ও তা নিক্ষেপের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলটিতে পাকিস্তানপন্থী জঙ্গীদের ব্যাপক অবস্থান রয়েছে। এরাই এখন মানুষ হত্যার কাজটি সুনিপুণভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামিক স্টেটস (আইএস) নামক জঙ্গী সংগঠনটি বাংলাদেশেও তৎপর রয়েছে। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদের সশস্ত্র জঙ্গীরা আইএস নামক সংগঠনে ভিড় জমিয়েছে। বাংলাদেশে আইএসের সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা তৎপর। এমন একটি গোপন বৈঠককালে আইএসের বাংলাদেশের সমন্বয়কসহ চারজনকে গত মাসে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে লিফলেট ও ল্যাপটপও পাওয়া যায়। নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর আলামতও মিলেছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আইএসের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের তৎপরতা নতুন কোন ঘটনা নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এদের তৎপরতা চালানোর অনুমোদন দেয়া হয়। এরা সরকারী দলের হয়ে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়েছে। যেমনটা করেছে ২০১৩, ২০১৪ সালেও। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জঙ্গীবাদের নতুন ছক গড়ে ওঠায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে, আইএসের সঙ্গে এখানকার জঙ্গীরা নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের তৎপরতা তো প্রমাণিত। গত বছর এই সংগঠনের ১৪ জঙ্গী সদস্য ধরা পড়েছিল। ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছিল বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইবনে হামদান ওরফে সামিউন। তিনি এসেছিলেন আইএসের জন্য জিহাদি ‘রিক্রুট’ করতে। ১০০ জন জিহাদিকে সিরিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তার। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫টি জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, জাগ্রত মুসলিম জনতা, হরকাতুল জিহাদ, শাহাদাতই আল হিকমা ও হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হয়। আরও অন্তত ৩৭টি ছোট ছোট জঙ্গী সংগঠন সক্রিয়। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর কৌশলে পরিবর্তন এলেও তৎপরতা থেমে নেই। এই জঙ্গীবাদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক দলের মদদ। এরা ব্যবহৃত হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসিদ্ধির কাজে। সামনে বিএনপি, আড়ালে জামায়াত তাদের শেল্টার দেয়। এটি ‘ওপেনসিক্রেট’। বিএনপি চায় তাদের মর্জিমাফিক গণতন্ত্রের নামে আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া, এ জন্য তাদের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে জঙ্গী ও জামায়াতকে। জামায়াতও গণতন্ত্র চাই বললেও তাদের আসল উদ্দেশ্য বিএনপির মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের মুক্ত করা। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যÑ পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার করে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গঠন করা। তাই বিএনপিকে তারা প্রায় করায়ত্ত করে ফেলেছে এবং জামায়াতের কর্মসূচী পালনে বাধ্য করছে। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে অকার্যকর করে পাকিস্তানের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তোলার প্রয়াস গঠনে জামায়াত সহযোগী হিসেবে পেয়েছে বিএনপিকে। তাই দেখা যাচ্ছে, ধ্বংসাত্মক তৎপরতা যত তীব্র আন্দোলন তত তীব্র নয় এবং তা জনসম্পৃক্তহীন। স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বিএনপিকে সামনে রেখে আড়ালে একটি জঙ্গীশক্তি ভয়ঙ্করভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে। আর সে অপশক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্মশত্রু জামায়াত। আফগান, ইরাক, পাকিস্তান থেকে ধ্বংসাত্মক কাজে প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে জামায়াত পরিকল্পিতভাবে রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলছে, বাসে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করছে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যÑ পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হতে উদ্ধার করে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ধ্বনি তোলে একটি কনফেডারেশন গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। এ কাজে তারা পাকিস্তানের মদদ পেয়ে আসছে। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতায় ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন সক্রিয়। জঙ্গী তৎপরতাই শুধু নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য জালটাকা বাজারে ছাড়ছে হাইকমিশনের কর্তারা। কূটনৈতিক সুবিধা নিয়ে তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। হাইকমিশন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার জন্য দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শাখার আমির গোলাম আযম লাহোরে গঠন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি। তার নেতৃত্বে পাকিস্তানের বাঙালী ও বিহারী অধ্যুষিত স্থানে মিছিল সমাবেশসহ অন্যান্য কর্মসূচী পালন করা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো একই লক্ষ্যে জামায়াতকে অর্থায়ন করে। গোলাম আযম পুনরুদ্ধার প্রকল্প কার্যকর করতে মুসলিম দেশগুলোসহ ইউরোপ সফর করেন। প্রচুর অর্থও সংগ্রহ করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে আসার পরও তিনি তাঁর এই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর অবর্তমানে জামায়াত-বিএনপি আজ একীভূত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধে মত্ত। জনগণ নির্বিকার থাকায় সুযোগটা বেড়েছে তাদের।
×