ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মমতাজ লতিফ

এসব অপকর্মের জবাব দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এসব অপকর্মের জবাব  দিতে হবে

যে কোন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের শুধু যে নাগরিক অধিকার আছে, তা নয়। এই অধিকারের সঙ্গে সঙ্গেই রয়েছে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কথাটি পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং তাদের অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত দেশের মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোকে দুনিয়ার, দেশের নাগরিকদের অধিকার বিষয়ে যতটা হুমকি-ধমকি দিতে দেখা যায়। আশ্চর্য এই যে, এইসব দায়িত্ব-কর্তব্যজ্ঞানহীন, অপরের ন্যূনতম অধিকার সম্পর্কে উদাসীন সমাজের খল ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে মিডিয়াসহ সংস্থাসমূহ কি ঘৃণ্য দরদে আপ্লুত হয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে- খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের আড়ালে জামায়াতের জঙ্গীরা পেট্রোলবোমা ছুড়ে নিরীহ চালক-হেলপার, বাসযাত্রীদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে উন্নয়ন ধ্বংস করতে উন্মত্ত। বার্ন ইউনিটে জ্বলন্ত মানুষ ও তাদের মৃত্যুতে তাদের স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদের বড় বড় চিত্র প্রকাশ করার মধ্যেই বড় কিছু মিডিয়া দায়িত্ব শেষ করে! অন্যদিকে, বাঙালী জাতি বিদ্বেষী খালেদার বাড়ির বিদ্যুত লাইন কাটার ওপর ডেইলি স্টার ফলাও হেডিং করে খালেদা কি কি অধিকারÑ ডিশ-কেবল ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। এতে খালেদা নিজেও মনে করবে তার নির্দেশে দেশময় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকেÑ নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর, চালক-যাত্রীদের আজ একমাস যাবত যাদের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল না, যাদের আয়ু ছিল, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা অন্য কোন রাজনীতি করত না, তাদের হত্যা তার জন্য করা এমন কোন বড় অপরাধ নয়। খালেদা জিয়া ২০১৩তে, এই ২০১৫তে মিলে প্রায় দেড় শ’ নিরীহ দরিদ্র খেটেখাওয়া মানুষকে তার দলের ক্যাডার ও তার ’৭১-এর পরম মিত্র জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার দিয়ে হত্যার যে প্রক্রিয়া তা এক কথায় হিটলারের গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যার বর্বর প্রক্রিয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নিষ্ঠুর নয়। খালেদা-তারেকের এই হত্যাযজ্ঞকে এক কথায় গণহত্যা নামে অভিহিত করতে হবে। সামরিক নেতা জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের লাশের সারি তৈরি করেছিল তেমনি ওরা খালেদা-তারেকও বাঙালী কৃষক-শ্রমিক-শিক্ষক-ছাত্র-নারী-পুরুষের লাশের সারি তৈরি করে চলেছে; মানুষ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করছে- কেন কৃষক-শ্রমিক-চালক-শিক্ষক-ছাত্র মিলে লাখো জনতা কোন এখনও ২০ দলীয় জোটের নেতাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এ দেশের মানুষ দেয়ালে পিঠ ঠেকলে সব কিছুই করতে পারে। অতীতে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো, মানবাধিকার নিয়ে খল মিডিয়া নায়কেরা সরকারের সমালোচনা করছে কোন দুঃসাহসে? পশ্চিমা সরকারী প্রতিনিধিরা এবং রাষ্ট্রদূতেরা কিভাবে প্রটোকল ভেঙ্গে একটি বর্বরতম হত্যাকা- চালিয়ে যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে দেখা করে? তার দুর্নীতিগ্রস্ত পুত্রের মৃত্যুতে শোক বইতে শোকবাণী লেখে? আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূত কি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোন দেশের সরকার বা বিরোধী দল ছাড়া অন্য কোন দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করার অনুমতি পাবে? উপরন্তু, খালেদা পুত্র দুর্নীতির বিচারের রায়ে দ-িত, তার মৃত্যুতে শোক জানাতে কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কি পারে? এর চাইতে মানবাধিকার নিয়ে স্ববিরোধিতার বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে? এর সহজ অর্থÑ খালেদা-তারেক-কোকো যত হত্যাকা-, যত পরিমাণ দুর্নীতি করুক না কেন, সেসব আদালতে প্রমাণ হোক না কেন, পশ্চিমা ও দেশী মানবাধিকারের প্রবক্তারা মানবাধিকার লুণ্ঠনকে গ্রাহ্যই করে না। বিশ শতকের প্রথম পর্যায়ে মার্কস, লেনিন, এ্যাঙ্গেলস্, স্ট্যালিন ভারতসহ দেশে দেশে সর্বহারার, কৃষক-শ্রমিকের অর্থনৈতিক মুক্তি, ধনী-দরিদ্রের অসাম্য, বৈষম্য মুক্তির জন্য মহান এক রাজনীতির চর্চা শুরু ও বিকশিত হয়েছিল! সত্যি যদি বলতেই হয়, তাহলে বাস্তবতা হচ্ছে- বাংলাদেশে যখন দরিদ্র মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষ সচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করছে, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস পেতে শুরু করেছে, দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে তখনই বাঙালীর প্রকৃত শত্রু, বাঙালীর উন্নয়নের শত্রু, বাঙালী-দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর শত্রু খালেদা ও তার পুত্র তারেক যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে এদের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে নেমেছে! এই লড়াইয়ে তাদের দু’জনের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে এবং তারা পুরো পরিবার যে পাকিস্তানের গুপ্তচর তাও উদ্ঘাটিত হয়েছে। এখন আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বাঙালীর মনে থাকার কথা নয় বলেই মনে করি। তবে, এখন সময় এসেছে এদের এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের এবং এইসব মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের আইন নির্দেশিত দ- ছাড়াও আরও কিছু দ-ের কথা আইনবিদ, এ্যাটর্নি, সাংসদরা বিবেচনা করতে পারেন। যেমন, যারা জাতির ধ্বংসে উন্মত্তÑ প্রথমেই তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। কেননা, এরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি, এরা বাঙালীর কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন কোন ক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটুক তা একদম চায়নি। কেননা, এরা যাদের হুকুম দাস তারা এটি চায় না। শুধু তাই নয়, তারা এদের বাংলাদেশ ধ্বংসের কাজেই নিয়োজিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা এদেশের নয়, তারা মানসিকভাবে পাকিস্তানের নাগরিক। তারা পাকিস্তানেই চলে যাক। তারা বিনা কারণে, ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে যে বর্বরতম পন্থায় নিরীহ-নিরপরাধ বাঙালী চালক-হেলপার, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, পেশাজীবী হত্যা করছে, অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম নারী-পুরুষ-তরুণ-কিশোর-শিশু হত্যা করেছে, সব নিহত-আহত-দগ্ধ মানুষের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ব্যয়সহ পুনর্বাসনের জন্য খালেদা-তারেক ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাই হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। সরকার এদের ক্ষতিপূরণ কেন দেবে? বরং হত্যাকারীরাই নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য-এমন আইনই হতে হবে। এবং সেই আইন অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। খালেদা জিয়া কোন হিসাবেই এক টাকা মূল্যের কোন সম্পদ এখন রাখতে পারে না। কেননা, তারা দীর্ঘ চল্লিশ বছরে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে। সরকারী দান গ্রহণের তার আর কোন অধিকারও নেই, প্রয়োজনও নেই। বিএনপির রাজনৈতিক দলের অফিস গুলশান-বনানী থেকে সরিয়ে নিতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কূটনীতিকপাড়ার মধ্যে বা এর কাছে কোন রাজনৈতিক দলের অফিস রাখা নিষিদ্ধ করতে হবে। এখানে বিএনপির অফিস থাকার ফলে কূটনীতিকদের দেখা যায় প্রটোকল ভেঙ্গে কারণে-অকারণে বর্তমান বিরোধী নেত্রীকে এক রকম অসম্মান করে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করছেন, যা একেবারেই কূটনৈতিক বা অন্য কোন শিষ্টাচারে গ্রহণযোগ্য নয়। পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলো আমেরিকান পুলিশের নিরপরাধ কালো মানুষ হত্যা বা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় বার বার আফগানিস্তানে নিরপরাধ বেসামরিক নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার ঘটনাকে কখনও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে সমালোচনা করেনি। কিন্তু বাংলাদেশে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নিহত হলেও তারা মহা হৈচৈ শুরু করে! কেন এই দ্বৈত ভূমিকা তারা পালন করে তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। জনগণের মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে- যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়গ্রহণকারী খালেদা পুত্র তারেকের বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি-বিরোধী এত অপকর্ম ও অপরাধের ওপর কি কোন বিধিনিষেধ নেই? আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম যা রাজনৈতিক আশ্রয়গ্রহণকারীকে মেনে চলতে হয়, তারেক কি সেসব বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে যুক্তরাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যা খুশি অপরাধ করতে সক্ষম? যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়দাতা! বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, খুনের পরিকল্পক ও দুর্নীতিগ্রস্ত তারেক যা খুশি বক্তব্য দিচ্ছে, বাংলাদেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে। জনগণ এই ভেবে শঙ্কিত যে, যেসব দেশ মানবাধিকারের বিষয়ে বড় বড় বক্তব্য রাখে, তারা যদি বিদেশ থেকে অপরাধীদের দেশ ধ্বংস করার প্রচেষ্টার প্রতি নির্লিপ্ত থাকে, তাহলে এই দগ্ধ, নিহত, নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুর মানবাধিকারের কথা কে বলবে? বিদেশে বসেও খুনী যদি এমন মারণযজ্ঞ পরিচালনা করতে পারে, দূরে থেকেও দেশের মানুষ তার রোষানল থেকে যদি বাঁচতে না পারে, তাহলে এই দুরাত্মা বিশ্ব-অপরাধীর হাত থেকে কখনও কোনভাবে রক্ষা পাবে না? খালেদা ও তারেক এ পর্যন্ত যা যা করেছে তাতে তারা আজ বিদেশের নাগরিক হলে অবশ্যই তাদের জেলে যেতে হতো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বোমা হামলাকারীদের যেমন দেখামাত্র গুলি করার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিরপরাধ নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে তেমনি এইসব বোমা তৈরিকারী, হুকুমদাতা, অর্থপ্রদানকারী এবং বোমা হামলাকারীরও সব নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার প্রত্যাহার করতে হবে। সে যে-ই হোক প্রয়োজনে দেশ থেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। যদি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করে মৃত্যুদ- কার্যকর করে হলেও দেশবাসীকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা যদি না করা হয় তাহলে উত্তরপ্রজন্মের কাছে আমাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
×