ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক বছরে পাওয়া যাবে ১৪ হাজার ১২ কোটি টাকা

সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আগামী এক বছরে প্রায় ১৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে সংস্থাটি। ৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে ঋণ অনুমোদন দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটিকে সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য সহায়তা হিসেবে দেখছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পাইপলাইন প্রকল্প হিসেবে এই সাতটি প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেক্টর জোহানেস জাট এবং ইআরডির অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম। বৈঠক বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পাইপ লাইনে থাকা ৭টি প্রকল্প এবং চলমান চারটি প্রকল্পের অর্থছাড়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে সংস্থাটির কাছে কোন প্রকল্পের কত মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে এবং কোন সময় এগুলো তাদের বোর্ডে অনুমোদন দেয়া হতে পারে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রকল্প হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত প্রস্তুতিমূলক কাজের অগ্রগতির দিকটিও আলোচনায় এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তাদের সহায়তা ব্যাপক বাড়াচ্ছে। এক সময় মনে করা হতো পদ্মা সেতু নিয়ে তিক্ততার কারণে সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং সরকারের সফল নেগোশিয়েশনের কারণে বিশ্বব্যাংক দিনদিন সহায়তা বাড়িয়েই চলছে। শুধু প্রতিশ্রুতিই নয়, সেই সঙ্গে বাড়াচ্ছে অর্থছাড়ের পরিমাণও। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, যেসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা দিতে যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, বাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিট প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা (২৫ কোটি মার্কিন ডলার)। এ ঋণ প্রস্তাবটি ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন দেয়ার লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-চিটাগাং মাল্টি-মডেল করিডোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৩০ কোটি মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এটি বোর্ড সভায় অনুমোদনের লক্ষ্য রয়েছে। ঘোড়াশাল-৪ ইউনিট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা (২৫ কোটি মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ইউনিট থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। চলতি বছরের ২৪ নবেম্বর এ প্রকল্পের জন্য ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। রিজিওনাল ক্লাইমেট সার্ভিস প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫৬০ কোটি টাকা (৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের লক্ষ্য রয়েছে। রিভার ব্যাংক কানেকটিভিটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (৬০ কোটি মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ থেকে তিস্তা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ফলে নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হতে পারে। রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা (১২ কোটি মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ভোমরা ও তেগামুখসহ তিনটি নতুন স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন দেয়া হতে পারে। সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে প্রায় ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা (১৬ কোটি মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আজম বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। এ সংস্থাটির কাছ যে পরিমাণ সহজ শর্তে ঋণ (ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ) পাওয়া যায়, অন্য কোন দাতা বাংলাদেশকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে না। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি বড় ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
×