ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. কামাল হোসেনদের সেমিনারে অভিমত

খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে দ্রুত সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলেছেন, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সহিংস কর্মসূচী বন্ধ করা জরুরী। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো। শুধু নির্বাচনেই নয় সকল দলসমূহকে এক করে জাতীয় সংলাপের মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের উপায় বের করারও তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপের তারিখ ঘোষণার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকেও সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প পরামর্শ তাদের। শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে ‘জাতীয় সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব মত দেন। দু’পর্বে বিভক্ত এই আয়োজনে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন। সংলাপের পরিবেশ নেই- ড. কামাল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে সংলাপের কোন পরিবেশ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। পেট্রোলবোমা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- আর নয়। সাধারণ মানুষ চায় এসব সমস্যার সমাধান দ্রুত হোক। তৃণমূল থেকে সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে- আকবর আলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, দেশের সঙ্কট সমাধানে সিভিল সমাজের কিছু করার আছে। কিন্তু তারা কিছু করছে না। এখন তারা না করলেও আমাদের কিছু একটা করতে হবে। আমি আশাবাদী, যে জাতি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছে তারা পথ হারাবে না। তৃণমূল থেকে সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমানে দেশে যা চলছে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম এটা তাদের জন্য কেবল মানসিক যন্ত্রণাই না। এটা শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও অনেক ভয়াবহ। বল সরকারের কোর্টে রয়েছে- রব বল সরকারের কোর্টে এ কথা উল্লেখ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সমস্যা সমাধানে সরকারকে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। আ স ম রব বলেন, বর্তমান সঙ্কটের জন্য সরকার দায়ী। পেট্রোলবোমা মেরে, গুলি করে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান হবে না। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, সংলাপ দুই দলের মধ্যে কেন, সব দলকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ করতে হবে। সহিংস পরিস্থিতি চলতে থাকলে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দেবে- এম কে রহমান এমন মন্তব্য করে সাবেক অতিরিক্ত এ্যার্টনি জেনারেল এম কে রহমান দ্বিতীয় অধিবেশনে বলেন, এদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু পেট্র্র্র্রোলবোমায় মানুষ হত্যা, জ্বালাও পোড়াও হয়নি। আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা এখনই বন্ধ করতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ‘কল’ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে কল (আহ্বান) জানাতে হবে। সংলাপ বা নির্বাচনেই এ পরিস্থিতির সমাধান হবে না- শামসুল হুদা এ কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, দেশের বতর্মান পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু একটা নির্বাচন দিয়ে এর সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি সমাধান দাবি করেন তিনি। শামসুল হুদা বলেন, সংলাপ ও সহিংসতা বন্ধে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। দলীয় বুদ্ধিজীবী দিয়ে সংলাপ হবে না- ড. আনোয়ার বর্তমান সঙ্কট নিরসনে সিভিল সোসাইটির বিতর্কের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩-৫ সদস্যের কমিটি করে পরোক্ষ সংলাপের মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান সমস্যা সমাধানে আ’লীগ, বিএনপি, জামায়াত ঘরানার সিভিল সোসাইটি দিয়ে সংলাপ সম্ভব নয়। দেশের বির্তকিত নয় এমন সিভিল সোসাইটির সদস্যের কমিটি করে নিরপেক্ষ সংলাপ হতে পারে। এ কমিটি বড় দুইটি দলের কাছে সংলাপ প্রস্তাব নিয়ে যাবেন। ডাকসুর সাবেক জিএস ডাঃ মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমান সঙ্কট সমাধান ও সংলাপের জন্য খালেদা জিয়াকে এ মুহূর্তে কর্মসূচী প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘হত্যা’ বন্ধ করতে হবে। সকল রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। দীর্ঘদিন নয়, ছয় মাসের মধ্যে সংলাপ শেষ করতে হবে। এ ছয় মাসের মধ্যে কোন কর্মসূচী দেয়া হবে না বলে সরকার ও বিএনপি ঐকমত্যে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কটের জন্ম হয়। এ সঙ্কটই বর্তমান সহিংসতার মূল কারণ বলে মত দিয়েছেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ২০ দলের সংলাপের কথা বলছি না। জাতীয় সংলাপের কথা বলছি। রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান করছি এই সংলাপের ব্যবস্থা করার জন্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বর্তমান সময়ে পুলিশের বক্তব্য রাজনীতিবিদরা দিচ্ছে। আর রাজনীতিবিদদের বক্তব্য দিচ্ছে পুলিশ। এমন একটা অবস্থা মনে হচ্ছে যে, পুলিশ আর রাজনীতিবিদরা একাকার হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। পরিবহন ব্যবস্থার দুর্গতির জন্য গ্রামের কৃষক বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের পণ্য পরিবহনের অভাবে বিক্রি করতে পারছে না। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর অব এম এ মান্নান বলেন, বর্তমানের সঙ্কট ১৯৯৬ সালের অবস্থার মতো হয়েছে। তবে ডাইমেনশনের পরিবর্তন হয়েছে। আগে এই রকম হরতাল ছিল না। সেটা হয়েছে। আর নতুন করে যুক্ত হয়েছে পেট্রোলবোমা। বর্তমান সঙ্কটের একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। কারণ, আমরা দেখেছি যারাই ক্ষমতায় যায়, তারাই ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গ্রামের কয়েকটি স্কুলে মহিলারা বলেছেন, আমাদের হাতেও ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা এত শক্তিশালী যে কোন সরকারকে অনেক নিচে নিয়ে নামিয়ে দিতে পারে। আমরা সুযোগের অপেক্ষায় আছি, সময় মতো সব দেখিয়ে দেব। ড. শাহদীন মালিকের সঞ্চালনায় ও এম হাফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে গোলটেবিলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, প্রযুক্তিবিদ হাবিবুল্লাহ করিম, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, মোস্তফা মহসিন মন্টু, আবদুল মালেক রতন, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।
×