ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুকুমের আসামি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা- অতঃপর?

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হুকুমের আসামি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা- অতঃপর?

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি দুর্নীতি মামলার পাশাপাশি পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় হুকুমের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে কিনা, সে প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, মামলাগুলোতে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। দেখা যাক কি হয়। অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রীসহ আইনজীবীগণ বলেছেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, তথ্য উপাত্ত সাপেক্ষে গ্রেফতার করা যেতে পারে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছে। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি ও নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য শীঘ্রই আবেদন করা হবে। এছাড়া ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত, পঞ্চগড় আদালত, যাত্রাবাড়ী, চৌদ্দগ্রাম থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে জননেত্রী পরিষদ সভাপতি এবি সিদ্দিকী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক কে এম নুরুজ্জামান তিনটি মামলা করেছেন। সেখানে খালেদা জিয়াকে দুটি মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে। চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারের জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করে ৭১ জনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের বিএনপি ঘোষিত হরতাল, অবরোধ ও সারাদেশে নাশকতা কর্মকা- পরিচালনা করার অপরাধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমদাতা হিসেবে ১নং আসামি করে ৩ জনের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় বোদা (৩) আমলী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা যেতে পারে। এখানে প্রক্রিয়াটা হলো মামলাগুলো তদন্ত করে যদি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পুলিশ চার্জশীট দিবে। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা যেতে পারে। মামলা করলেই গ্রেফতার করা যাবে না। তবে যদি গ্রেফতারকৃত কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা যেতে পারে। তদন্তে আসতে হবে তিনি হুকুম দিয়েছেন। অর্থাৎ মামলা হলেই গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেফতার করতে হলে সাক্ষ্য-প্রমাণসহ স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দী প্রয়োজন। বর্তমানে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট ২৭ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা। ৫ মামলার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় উচ্চ আদালতে বিচারাধীন দুই রিট আবেদনের রুল শুনানি শুরুর জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এবার নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে এ দুটি মামলার রুল শুনানির জন্য আবেদন করবেন। তিনি জানান, এ দুই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রুল শুনানির জন্য আবেদন প্রস্তুতির কাজ শেষ পর্যায়ে। যে কোন সময় এ আবেদন করা হবে। দুর্নীতি মামলার পাশাপািশ পেট্রোলবোমায় মানুষ মারার হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। এই মুহূর্তে তাকে গ্রেফতার করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ.ম. রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, ধর্তব্য অপরাধ মামলায় যে কোন আসামিকে যে কোন সময়ে গ্রেফতার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আদালতের কোন অনুমতি অনাবশ্যক। বিষয়টি নির্ভর করে সিদ্ধান্তের উপর। তথ্য-উপাত্ত পেলে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাপর উপায়ে অন্যান্য তথ্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। পেট্রোলবোমা মেরে গাড়ি, ট্রেন, বাসে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সমস্ত হত্যাকা-, অগ্নিসংযোগ একজনের নির্দেশেই হচ্ছে। তিনি হলেন বেগম জিয়া। তিনি নির্দেশ দাতা। তিনি অবশ্যই হুকুমের আসামি হবেন। দ-বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় খালেদা জিয়া অভিযুক্ত হবেন। হুকুমের আসামি বা সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকলে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেফতার করার অধিকার রাখেন। কাজেই আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে পারে। যিনি নির্দেশদাতা তিনি অবশ্যই হত্যার জন্য দায়ী হবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই অবরোধ হরতালে যেখানে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেখানে প্রত্যেকটি মামলাতেই বেগম জিয়াকে হুকুমের আসামি হিসেবে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক নজরে ৫ মামলা ঃ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্যাটকো দুর্নীতি ॥ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য গ্যাটকো লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি ॥ বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নাইকো দুর্নীতি ॥ নাইকো রিসোর্স কোম্পানিকে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
×