ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর প্রকাশনা

মোরসালিন মিজান ॥ বহুকাল ধরেই বইমেলার প্রধান বিক্রি উপন্যাস। সব সময়ই থাকে গল্প কবিতা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তবে এসবের বাইরেও আছে বিচিত্র লেখালেখি। নানা বিষয়ের ওপর লিখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয় বিবেচনায় খুব সহজেই বইগুলোকে আলাদা করা যায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিনে মেলা ঘুরে এমন অনেক বই খুঁজে বের করা গেল। শীর্ষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও বিষয় ভিত্তিক বই প্রকাশ করেছে। বহুল আলোচিত সমালোচিত কালো টাকার ওপর বই প্রকাশ করেছে পালক পাবলিশার্স। শিরোনামÑ কালো টাকার সন্ধানে। নামই বলে দেয়, কালো টাকার নানা দিক নিয়ে লেখা। বিষয়ের ওপর সাধারণ লেখালেখি আছে হয়ত। তবে সাংবাদিক কাওসার রহমান এখানে যারপর নাই অনুসন্ধানী। তাঁর সিরিজ প্রতিবেদন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বইতে কালো টাকার উৎস সন্ধান, উৎপাদনের কৌশল, সমাজ ও রাষ্ট্রে কালো টাকার প্রভাবসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেছেন লেখক। রঞ্জন সেন লিখেছেন জিএসপি নিয়ে। গার্মেন্টস সেক্টরে বহুল আলোচিত জিএসপি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বেলায় এ সুবিধা স্থগিত করার পর আলোচনাটি আরও জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ের ওপর ঐতিহ্য প্রকাশিত বইয়ের শিরোনামÑ মার্কিন জিএসপি অর্থনীতি না রাজনীতি। বইতে আমেরিকার বহুল আলোচিত জিএসপি সুবিধা স্থগিতের কারণ অনুসন্ধানসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ের প্রাসঙ্গিক আলোচনা যুক্ত হয়েছে। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় এসেছে ‘সাকিব আল হাসান : আপন চোখে ভিন্ন চোখে’। লিখেছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। বিষয় সাকিব বলেই বইটি নিয়ে বিপুল আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। একেবারে সাধারণ পাঠকও বইটির খবর জানেন। বইতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে বাংলাদেশের ‘হিরো’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাকিবকে নিয়ে কোটি বাঙালীর মতো লেখকও গর্ব করেছেন। কীভাবে, কবে সাকিব নায়ক হয়ে ওঠলেন? সাকিব কে নিয়ে মাঝে মাঝেই বিতর্ক। কেন এমন বিতর্ক? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। মানুষের মনোজগতের নানা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখেছেন মোহিত কামাল। নিয়মিতই লিখছেন। এবারও একাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে তাঁর বই। ইতিহাস, ভ্রমণ ইত্যাদি নিয়মিত বিষয়। তবে লেখায় বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়েছে। অনিন্দ্য থেকে এসেছে ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। বইতে ভাষা আন্দোলন ও ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিচারে এর সাফল্য, অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব এবং প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির রাজনৈতিক সামাজিক কারণ ও পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। বিষয়ের ওপর যথেষ্ট লিখেছেন আহমদ রফিক। তবে এ বইতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা। ফলে অল্প সময় পাঠে মূল সূত্রগুলোর পরিচয় পাওয়া সম্ভব হবে। উৎস থেকে এসেছে হাসনাইন সাজ্জাদীর ‘বিজ্ঞান কবিতার রূপরেখা’। মোটামুটি গবেষণা গ্রন্থ। লেখকের মতে, উপমা উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পে বিজ্ঞানমনষ্কতা বিজ্ঞান কবিতার বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞান যুগে বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি এবং ভাব, ভাষা ও শিল্পের নানা আঙ্গিক নিয়ে রূপরেখা তৈরি করেছেন লেখক। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে মোস্তফা সেলিমের বই ‘ভারত নেপাল ভুটান ভ্রমণসঙ্গী’। বলা বাহুল্য, তিনটিই পার্শ্ববর্তী দেশ। দেশগুলো নিয়মিতই ভ্রমণ করেন বাংলাদেশের মানুষ। আর এ ভ্রমণে গাইডের মতো সাহায্য করতে পারে বইটি। বিভিন্ন সূত্রের সাহায্য নিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে বইটিকে। আছে ছবিও। ব্যতিক্রমী বিষয়ের ওপর বই প্রকাশ করে অল্প সময়ের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স। এবারও বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর কিছু বই এখান থেকে আসার কথা রয়েছে। গল্প উপন্যাস কবিতার বাইরে গিয়ে কেন এই প্রয়াস? জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ জাকির হোসাইন বলেন, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কিছু তো ভাবতে হবে। আমরা এই ভাবনায় প্রচুর সময় দেই। বিষয় বৈচিত্র্য খুব বড় বিবেচনা আমাদের। এসব বইয়ের বিক্রিও খুব ভাল জানিয়ে তিনি বলেন, কোন কোন বই ধীরে চলে। তবে সারাবছর বিক্রি হয়। আর্কাইভ মূল্যও অনেক বেশি। শিশু প্রহর ॥ শুক্রবারের মতো শনিবারও বিশেষ আয়োজন ছিল শিশুদের জন্য। এদিনও বাংলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় শিশুপ্রহর। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই সরব হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। সকাল সাড়ে ৮টায় শিশু কিশোররা অংশ নেয় সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতার ‘ক’ শাখায় ৮০ জন প্রতিযোগী ও ‘খ’ শাখায় ১৭ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলা একাডেমির পরিচালক মোবারক হোসেন ও উপ-পরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ। ১৯৮ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলা সপ্তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৯৮টি। নজরুল মঞ্চে ১০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. মীজানুর রহমান শেলী এবং অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রাবন্ধিক বলেন, অধ্যপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন একজন বিরল বুদ্ধিজীবী। তাঁর প্রকাশিত স্বল্পসংখ্যক রচনা এবং অপ্রকাশিত গবেষণা-সন্দর্ভ তাঁকে আমাদের কাছে বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করে। তিনি বাংলা ও ভারত অঞ্চলের ইতিহাসের গতিবিধি নির্ধারণে যেমন সত্যসন্ধ দৃষ্টিতে গবেষণা করেছেন তেমনি বাঙালী জাতির বিকাশপদ্ধতি নিয়ে তাঁর ভাবনাও ছিল মৌলিক। আলোচকদ্বয় বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতো মনীষীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাভূমি নির্মাণে অনুঘটকের কাজ করেছেন। বিশেষত ঔপনিবেশিক বাস্তবতার উৎস অনুসন্ধান ও তা নিরসনের মধ্য দিয়ে একটি প্রকৃত স্বাধীন-গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজরাষ্ট্র নির্মাণে অনলস চিন্তা করেছেন। সঙ্গত কারণে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ পদে বরিত করেছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক শিক্ষক ও চিন্তক হিসেবে আমাদের মাঝে বহুকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান যেমন এক সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ছাত্রছাত্রী পরম্পরা সৃষ্টি করেছে তেমনি গবেষণাক্ষেত্রেও তাঁর বিচরণ ছিল নানা পরিসরে ব্যাপ্ত। তিনি বলেন, পা-িত্যের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্বের ঔদার্য ও বিনয় তাঁকে আর দশজনের চেয়ে আলাদা করেছিল। মানবকল্যাণকামী এই অসামান্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের অপ্রকাশিত গবেষণা-সন্দর্ভ অতিদ্রুত প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’-এর শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অরূপ রতন চৌধুরী, নীলোৎপল সাধ্য, শাহনাজ নাসরীন ইলা, ছায়া রাণী কর্মকার, সুস্মিতা আহমেদ, পল্লব গোমেজ, শাহনাজ পারভীন এবং শাহিন আকতার পাপিয়া। আজকের অনুষ্ঠান ॥ রবিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক আবুল মনসুর, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং শরীফ আতিক-উজ-জামান। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
×