ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসির আজকের পরীক্ষা শুক্রবার, মঙ্গলবারেরটা শনিবার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এসএসসির আজকের পরীক্ষা শুক্রবার, মঙ্গলবারেরটা শনিবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীক্ষার্থীদের জীবন উপেক্ষা করে অবরোধের মধ্যেই বিএনপি-জামায়াতের হরতালে আবারও পিছিয়ে গেল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। দেশজুড়ে তীব্র অসন্তোষ আর আবেদনের পরেও নাশকতামূলক কর্মসূচী পরিহার না করায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ ও মঙ্গলবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকের পরীক্ষা আগামী শুক্রবার সকাল ৯টায় এবং মঙ্গলবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শনিবার সকাল ১০টায়। এ নিয়ে হরতাল-অবরোধের কারণেন চার দিনে ২০টি পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। এদিকে নাশকতার আতঙ্ক কাটিয়ে শনিবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষাও সারাদেশে নির্বিঘেœ ও অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা বলছে, পরীক্ষা অনেক ভাল হয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা হরতাল-অবরোধের ফলে পরীক্ষার প্রস্তুতি বিঘিœত হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, আপনার নাতনিদের মতো আমাদের সন্তানদের পরীক্ষাও নিশ্চিত করুন। আগে দুই দফা পরীক্ষা পেছানোর পর দেশজুড়ে দাবি উঠেছিল ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলো হরতাল-অবরোধের বাইরে রাখার। এসব দাবিতে গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-মানববন্ধন ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। সর্বশেষ শনিবারও চট্টগ্রামে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিএনপি নেতাদের কাছে নতুন প্রজন্মের জন্য হলেও অন্তত পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল বন্ধের দাবি জানান। হরতাল প্রত্যাহারে বিএনপি জোটের কাছে করজোড়ে আবেদনও জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, বিকেলের মধ্যে দেশবাসীকে আনন্দের সংবাদ দিন। হরতাল প্রত্যাহার করুন। কিন্তু ১৫ লাখ নতুন প্রজন্ম ও তার পরিবারের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য এদিন বন্দরনগরীতে যান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান, সচিব ড. পীযূষ দত্ত, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান প্রমুখ। নাশকতামূলক কর্মসূচীর কারণে এসএসসি ও সমমানের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের ৮টি পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। রবিবারের পরীক্ষা ১৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং ১০ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা ১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। আজ রবিবার সকালে সাধারণ বোর্ডে ইংরেজী (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, মাদ্রাসা বোর্ডে আরবি প্রথম পত্র এবং কারিগরি বোর্ডে গণিত-২ (১৯২৩) ও গণিত-২ (৮১২৩) বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। মঙ্গলবার সাধারণ বোর্ডে ইংরেজী (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, মাদ্রাসা বোর্ডে আরবি দ্বিতীয় পত্র এবং কারিগরি বোর্ডে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়-২ (সৃজনশীল) ও সামাজিক বিজ্ঞান-২ (৮১২৪, সৃজনশীল/সাধারণ) বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। অন্যান্য পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার আগে ন্যূনতম দুই ঘণ্টা আর পরের দুই ঘণ্টা হরতালের আওতামুক্ত রাখা এবং পরীক্ষার দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে হরতাল দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু কোন আবেদনেই বিএনপি নেতারা সাড়া না দেয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কাছে আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধ পেছানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে তারা হরতাল প্রত্যাহার করবে। কিন্তু আমাদের আশার কথা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেনি বা আমাদের আহ্বান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাদের বিবেক জাগ্রত হয়নি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের সহিংসতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না। তাদের জীবনের নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী বলছে পরীক্ষা চলার সময়ে তারা কঠোর নিরাপত্তা দেবে। শিক্ষার্থীদের জন্য হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নেয়ার একটা চাপ থাকা সত্ত্বেও তাদের (শিক্ষার্থীদের) ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ৬ বছর ধরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সেটি বিএনপি নেত্রী জানেন। বিএনপি নেত্রী বলছেন তাদের আন্দোলন জাতির জন্য। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে তিনি (খালেদা জিয়া) জাতিকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ একজন শিক্ষার্থী সকালে বলতে পারছে না বিকেলে কী হবে, আগামীকাল পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বিএনপি নেত্রী বলছেন তাদের আন্দোলন নাকি জাতির জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মিলিয়ে আছেন আরও এক কোটি। দেশের সবচেয়ে বড় পরিবার শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন, আমরা ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে চাই। আশা করি, তাদের (বিএনপি জোট) মন নাড়া দেবে। আল্লাহর রহমতে তাদের মনে দ্বীন-রহম-দয়া আসবে। কর্মসূচী ভেঙ্গে আমরা পরীক্ষা নিতে পারতাম। কিন্তু বিএনপি জোটের হিংস্রতার মুখে আমরা ছেলেমেয়েদের ঠেলে দিতে পারি না। চলমান আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই কয়েক দিন যা চলছে, তা কোন আন্দোলন না। এটা আন্দোলনের দেশ। আমরা আগেও অনেক আন্দোলন দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেবে। কিছুই চলবে না, তবেই অবরোধ হয়। এখন হরতাল-অবরোধ শুধু প্রচারের মাধ্যমে। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা বড় পৈশাচিক-অমানবিক-নৃশংস। এটা কিসের আন্দোলন?
×