ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় নিহত স্বজনদের আহাজারি

‘বাহে হামার বেটা কি দোষ করচিল, পুড়িয়া আংরা বানে ফেলাইছে’

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘বাহে হামার বেটা কি দোষ করচিল, পুড়িয়া আংরা বানে ফেলাইছে’

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ সৈয়দ আলীর স্ত্রী স্বামীর শোকে আহাজারি করছিলেন। আর তার মা বৃদ্ধ সাবানা বেগমও দিশেহারা হয়ে গেছেন পুত্রের শোকে। কান্নাভেজা কণ্ঠে বার বার চিৎকার করে বলছিলেন,- “বাহে হামার বেটা কি দোষ করচিল। কামোত যাবার জন্যে গাড়িত চড়ছে ঢাকাত যাবে। তাক ক্যামন আগুন দিয়া পুড়িয়া এক্কেবারে আংরা (কয়লা) বানে ফেলাইছে। যারা এই অকাম করছে তারা কেমন মানুষ। আল্লায় তামার বিচার করবে।’ তার এই আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছিল শোকার্ত পরিবেশ। গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসীঘাট এলাকায় শুক্রবার রাতে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় নিহতদের বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর, দক্ষিণ কালির খামার, মধ্যপাড়া খামার, পশ্চিম সীচা গ্রামে শনিবার গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেল এই করুণ“আহাজারি আর শোকের মাতম। বোমা হামলায় নিহত দক্ষিণ কালির খামার গ্রামের দিনমজুর সৈয়দ আলীর (৪২) বাড়িতে চলছিল স্বজনদের আহাজারি। এ জেলায় ও জেলায় দিনমজুরের কাজ করে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতেন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে শরিফা খাতুন দশম শ্রেণী, মেজো মেয়ে শান্তি আকতার ষষ্ঠ শ্রেণী এবং ছোট ছেলে ইমরান প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। এলাকায় কাজ না থাকায় সৈয়দ আলী শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় যাবার সময় নিহত হন। নিহত শিশু শিল্পী রাণীর (৬) বাবা উপজেলার পশ্চিম চন্ডিপুর গ্রামের বলরাম দাস ও মা সাধনা রাণী দিনমজুরের কাজ করেন। তারা শিল্পী রাণীরকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাতে কাজের জন্য মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। বোমা হামলার ঘটনায় তারা শিশু নিহত এবং বাবা-মা দগ্ধ হন। নিহত শিশুটির মা সাধনা রাণী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাবা বলরাম দাস গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিশুর বাবা বলরাম দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘পেটের দায়ে রোজগারের জইন্নে হামরা বাবা ঢাকাত যাচ্ছিনো এখনতো হামরা সগি হারানু । বাহে হামার কি দোষ ভগবান এর বিচার করবে।’ -‘তোমরা হামার ছোলোক আনি দ্যাও। ছোলট্যা কামাই করব্যার জন্নে ঢাকাত যাবার ধরচিলো। কেটা হামার ছোলট্যাক মারি ফেলালো। হামরা একন ক্যামন করি চলমো’-এভাবেই আহাজারি করছিলেন পেট্রোলবোমা হামলায় নিহত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের সুমন মিয়ার (২২) মা মজিদা বেগম। এ সময় তার বাবা শাহাজান আলী অশ্রুসজল অবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সুমন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে আসেন। শুক্রবার নাপু পরিবহনে ঢাকা যাবার পথে তিনি মারা যান। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুইভাই এক বোনের মধ্যে সুমন সবার বড়। সেই পাঁচ সদস্যের সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম। একই উপজেলার পশ্চিম সীচা গ্রামের মৃত সাহেব উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেগমের (৪০) বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। তার মেয়ে শামসুন নাহার মাকে হারিয়ে আহাজারি করছিলেন।
×