ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে আইএসআই’র তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশে আইএসআই’র তৎপরতা

সারা দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপি জোটের সন্ত্রাসে কীভাবে জ্যান্ত মানুষ পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে, কীভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হচ্ছে, কীভাবে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, কীভাবে মানুষের সামাজিক জীবন, ধর্মীয় উৎসব-সমাবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে নিরীহ মানুষের জীবন-জীবিকা-ভবিষ্যতজ্জ এ সবই গত এক মাসেরও অধিক সময় জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রতিদিন শিরোনাম হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার সন্ত্রাস, অবরোধ ও হরতালের ডামাডোলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ প্রায় চাপা পড়ে গেছে। ২ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) তিনটি দৈনিকে বেশ গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকায় পাকিস্তানী দূতাবাসের এক স্টাফের গ্রেফতার, মুক্তি এবং পাকিস্তানে চলে যাওয়ার বিষয়টি। গত ১২ জানুয়ারি পাকিস্তানী দূতাবাসের সহকারী ভিসা অফিসার মাযহার খানকে বনানীর একটি বিপণিকেন্দ্রে জনৈক বাংলাদেশী মুজিবর রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠকের সময় ভারতীয় জাল টাকাসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার ভেতর পাকিস্তানী দূতাবাসের প্রথম সচিব ‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি’র অজুহাত দেখিয়ে তাকে বনানী থানা থেকে নিয়ে যান। এর পর ৩১ জানুয়ারি এই ব্যক্তি সপরিবারে পিআইএ’র একটি ফ্লাইটে পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ভর্ৎসনা করা বা কড়া কোন বার্তা প্রদান করেছে কি না, সে বিষয়ে কোন দৈনিকে কিছু ছাপা হয়নি। ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ প্রধান শিরোনাম ছিল ‘নাশকতায় পাকিস্তানী কূটনীতিক : জঙ্গীদের অর্থদাতা, জড়িত জাল রুপী তৈরিতেও...।’ খবরে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাকিস্তান দূতাবাসের এক কূটনীতিক। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জঙ্গী কর্মকা-ের সমন্বয় ও অর্থায়ন করেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস’র অন্যতম সংগঠকও এই পাকিস্তানী। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে। মাযহার খান নামে ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী ভয়ঙ্কর সব তৎপরতার তথ্য-প্রমাণ পেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চলছে তোলপাড়।’ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র দীর্ঘ তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘নাশকতার সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাসের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায় বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মাযহার খান জাল নোট (রুপী) তৈরি ও সংগ্রহ করে কতিপয় বাংলাদেশী নাগরিকের মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন। এতে তিনি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে আরও নিশ্চিত হন যে, মাযহার খানের সঙ্গে জলিল আখতার ও মোঃ মুজিবর রহমানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের লোকজনের যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিশেষ করে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, যশোর, বেনাপোল এলাকার বাংলাদেশী রয়েছেন। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গত ১২ জানুয়ারি রাতে বনানীর মৈত্রী মার্কেট এলাকায় মুজিবর রহমান ও পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে গোপন বৈঠকের সময় আটক করে। ওই সময় মাযহার তার সঙ্গে থাকা কিছু কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। ছিঁড়ে ফেলা কাগজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা কিছু বাংলাদেশী পাসপোর্ট নম্বর পান। ওই পাসপোর্টের সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, পাসপোর্টধারীদের মধ্যে এমন তিন ব্যক্তি রয়েছেন যাদের নাম বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুত করা হিযবুত তাহরীরের তালিকায় আছে। ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত আট থেকে দশ বছরে ২২ বার পাকিস্তান, ১১ বার ভারত ও ২২ বার থাইল্যান্ডে যাওয়া মুজিবর রহমানের সঙ্গে মাযহার খানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাযহার খানের পূর্বসূরি সহকারী ভিসা কর্মকর্তা। পরবর্তীকালে মুজিবর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, মাযহার খান এক লাখ ৮০ হাজার ভারতীয় জাল রুপী চালানোর জন্য তাকে দেন। একইভাবে মাযহার আরও ভারতীয় জাল রুপী জাহিদ, ইমরান ও কয়েকজনকে দিয়ে বাজারে ছড়িয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাযহার খান পাকিস্তান দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশে বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে বিনিয়োগ করা হয়। মূলত বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা এখনও ধারাবাহিকভাবে চলছে। ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রের তথ্যমতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানী মোহাম্মদ ইমরানকে আশি লাখ জাল রুপীসহ আটক করা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। ইমরানের পাসপোর্টের ভিসাও ছিল জাল। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ইমরানেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ‘গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে ২ বছর দায়িত্ব পালনের বাইরে মোহাম্মদ মাযহার খান নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের কর্মকা-, পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার ধ্বংস করার লক্ষ্যে জাল রুপীর বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানী দূতাবাসের এই ব্যক্তির কার্যকলাপ সম্পর্কে আপত্তি জানালে তাকে দ্রুত পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে থলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বেড়ালগুলো চেনা না যায়। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল মাযহার খানের কর্মকা-কে নিছক কূটনৈতিক রীতিনীতি লংঘনের মতো মামুলি বিষয় হিসেবে না দেখে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে দেখা এবং গ্রেফতারের পর তাকে ছেড়ে না দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশ ও ভারতে তাদের হয়ে কারা কাজ করছে, কারা তাদের অর্থপ্রাপ্তির তালিকায় আছে সেসব খুঁজে বের করা। মাযহার খানকে ফেরত পাঠাবার চারদিনের ভেতর ৭০ লাখ টাকার জাল ভারতীয় মুদ্রাসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়েছে পাকিস্তানী নাগরিক মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ঢাকার কয়েক প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীর সুসম্পর্ক থাকার বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চিত হয়েছে (জনকণ্ঠ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। মাযহার খান ঢাকা এসেছিলেন ২০১৩ সালে, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির বিরোধিতার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকা- অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছিল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে এ বিষয়ে আমরা একটি দীর্ঘ শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জামায়াত-বিএনপি জোটের সন্ত্রাস ও নাশকতার আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের পাশাপাশি অর্থায়নের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলাম। শুধু পাকিস্তানের আইএসআই নয়, ২০০৮ সালে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে পঞ্চাশ বিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছিল মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সাংগঠনিক ও প্রচার কার্য পরিচালনার জন্য। আমার ‘চূড়ান্ত জিহাদ’ প্রামাণ্যচিত্রে সৌদি সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ ড. ইরফান আল আলাভী এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এই ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। তথাকথিত আফগান জিহাদের সময় ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের হরকত-উল-জিহাদের নেতারা ঢাকায় এসে তাদের শাখা গঠন করেছেন প্রধানত কর্মী রিক্রুট করা এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জিহাদী বলয়ের অংশ বানাবার জন্য। তখন ক্ষমতায় ছিল জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার। ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল এবং ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত যত পাকিস্তানী জঙ্গীকে বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গেছেÑ ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাবার জন্য পাকিস্তান কীভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের এ লক্ষ্য অর্জন একমাত্র, সম্ভবত, যেকোনভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসানো। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের আশীর্বাদপুষ্ট উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যাবতীয় তৎপরতা বন্ধ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে; এটা কখনও পাকিস্তানের কাম্য হতে পারে না। শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারকে উৎখাতের জন্য জামায়াত-বিএনপি জোটের চলমান সন্ত্রাস ও নাশকতা পাকিস্তানের সেই নীল নকশারই অন্তর্গত। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’, ‘ভোটের অধিকার’, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন’ ইত্যাদি বলে জামায়াত-বিএনপি কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে বটে, তবে, মাযহার খানের তৎপরতা আবারও প্রমাণ করেছেÑ পাকিস্তান এবং তাদের এজেন্টরা বাংলাদেশে কী চায়। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবুল আলা মওদুদীর পুত্র হায়দার ফারুখ মওদুদী পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, তার পিতার রাজনীতি ও দলের কট্টর সমালোচক। ২০১২ সালে লাহোরে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে জামায়াতের রাজনীতি, বাংলাদেশে আইএসআই’র নেটওয়ার্ক ইত্যাদি বিষয়ে আমার সঙ্গে তার কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে, যার কিছু আমার ‘সীমানাহীন জিহাদ’ ছবিতে আছে। পাকিস্তানে তখন ‘তেহরিকে ইশতেকলাল’ পার্টির চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান একটি মামলা করেছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে, যার বিষয় ছিল পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আইএসআই’র অর্থপ্রদান। আসগর খান তার আর্জিতে বলেছিলেন, আইএসআই রাজনীতিতে এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। হায়দার ফারুখ এ নিয়ে তার কলামে লিখেছিলেনজ্জ আইএসআই সব সময় এ কাজই করেছে, এটা নতুন কিছু নয়। তখন পাকিস্তানের খবরের কাগজে আইএসআই’র অর্থপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের তালিকায় বাংলাদেশের জামায়াত ও বিএনপির নামও ছিল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করায় হায়দার ফারুখ বলেছিলেনজ্জ আপনি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন কেন? আমি বলেছিলাম, আইএসআই আপনাদের দেশে যা খুশি করুক এ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলকে আইএসআই টাকা দেবে, এটা আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। হায়দার ফারুখ মৃদু হেসে বলেছিলেন, জামায়াত-বিএনপিকে আপনারা আপনাদের দেশের মনে করতে পারেন; আইএসআই মনে করে তারা পাকিস্তানী রাজনৈতিক দল। পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের এই মন্তব্য শুনে আমার বলার কিছু ছিল না। হোসেন হাক্কানী, আহমেদ রশীদ ও একবাল আহমেদসহ বহু পাকিস্তÍানী গবেষক ও বুদ্ধিজীবী আইএসআই’র আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, জিহাদ রফতানি নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। হাক্কানী পাকিস্তানের দুজন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন। আইএসআই’র প্রাক্তন কর্মকর্তা ও ফিল্ড অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে তিনি লিখেছেন তার বহুল আলোচিত গ্রন্থ ‘পাকিস্তান বিটুয়িন মস্ক এ্যান্ড মিলিটারি।’ হাক্কানী ছাত্রজীবনে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বা হায়দার ফারুখের মতো ব্যক্তিরা আমাদের চেয়ে শতগুণ বেশি জানেন বাংলাদেশে আইএসআইর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে। বাংলাদেশকে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উন্নত ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দেখতে চাই, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বর্তমান ধারা যদি অব্যাহত রাখতে চাই; এদেশে আইএসআই’র যাবতীয় অবস্থান ধ্বংস না করে কখনও তা সম্ভব হবে না।
×