ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শচীন নেই বলে ফেবারিট পাকিস্তান!

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শচীন নেই বলে ফেবারিট পাকিস্তান!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হট্টোগোল দেখে মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপের চেয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচর গুরুত্ব বেশি। উন্মদনার এই ডামাডোলে সব কেমন ম্লান! বর্তমান-সাবেক তারকা, সাধারণ থেকে শুরু করে খোদ আয়োজক অসি-কিউইরাও সেই আলোচনায় বুঁদ। পাক-ভারত লড়াই বলে কথা! বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি (১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০১১) হয়ে প্রতিবারই হেরেছে পাকিস্তান। বদলে যাবে ইতিহাস, শচীন টেন্ডুলকর নেই বলেই এবার ফেবারিট পাকিস্তান! বিষয়টি নিয়ে ভেবে ধন্ধে পড়ে যাবেন অনেকে। দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন, আসলেই কী তাই? ক্রিকেটঈশ্বর নেইÑ এটাই তো ভারতীয়দের বড় কষ্ট। আর প্রথমবারের মতো শত্রুদের কাছে হেরে গেলে সেই কষ্ট যে দ্বিগুণ হবে! ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু ১১তম বিশ্বকাপের ময়দানী লড়াই। পরদিন ১৫ তারিখ বহুল প্রতীক্ষার পাক-ভারত ম্যাচ। আগের পাঁচ সাক্ষাতে পাঁচবারই জয় এবং মজার বিষয় বিশ্বকাপে চিরশত্রুদের পর্যুদস্ত করে অনন্য গৌরব ছিনিয়ে আনা সেই পাঁচটি ম্যাচেই ভারতীয় স্কোয়াডে ছিলেন ব্যাটিং-অধিশ্বর শচীন রমেশ টেন্ডুলকর। অপরিহার্য সদস্য রেকর্ডের বরপুত্র। সেই শচীন নেই বলেই পাকিরা যুগ-যুগান্তরের অপ্রাপ্ত বাসনাটা এবার পূরণ করে ফেলবে? ১৯৯২-২০১১ প্রতিটি আসরে, শত্রু দেশের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলেছেন। ২০১৩-এর নবেম্বরে টেস্টের মধ্য দিয়ে সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন শচীন। তার অনুপস্থিতি এবার পাকিস্তানকে স্বস্তি দেবে বলেই ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারণা। নতুন ইতিহাস তৈরি করতে একটু দম পাবে পাকিরা। সবচেয়ে বেশি টেস্ট-ওয়ানডে খেলা, বেশি রান ও সেঞ্চুরি করাসহ ব্যাট হাতে আরও অবিশ্বাস্য সব রেকর্ডের জন্ম দেয়া শচীন বিশ্বকাপে যে কোন দলের বিপক্ষেই ব্যাট হাতে ছিলেন সফল। পরিসংখ্যানই তার স্বাক্ষী। রেকর্ড ছয়বারের (মিয়াঁদাদের সঙ্গে যৌথ) বিশ্বকাপ খেলা শচীন আইসিসির মেগা ইভেন্টে দ্বিতীয় সর্বাধিক (৪৫) ম্যাচ খেলেন। তার চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলেছেন রিকি পন্টিং। বিশ্বকাপের দুই আসরে (১৯৯৬ ও ২০০৩) সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার রেকর্ডও রয়েছে এই ক্রিকেট কিংবদন্তির। সর্বাধিক ৬ সেঞ্চুরি ও বিশ্বকাপে সর্বার্ধিক ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচের’ পুরস্কার পাওয়া শচীন টুর্নামেন্টের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুই হাজারের বেশি রান করেন। রেকর্ড ২ হাজার ২৭৮ রান করা শচিনের বিশ্বকাপ গড়টাও (৫৬.৯৫) ঈর্ষণীয়। বিশ্বকাপ অনুভূতি জানিয়ে শচীন জানিয়েছেন, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে তার ১০ বছর বয়সে কপিল দেব যখন শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তখন থেকেই বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে ভারত যখন পাকিস্তানকে নিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজন করে শচীনের সেই স্বপ্ন আরও প্রবল। সেই বিশ্বকাপে ‘বল-বয়’ হিসেবে ক্রিকেট কিংবদন্তিদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় তার। দুই বছর পরই মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবির্ভাব বিস্ময়-বালকের। এরপর ছয় বিশ্বকাপেই স্বমহিমায় ভাস্বর ছিলেন ক্রিকেট দেবতা। ২০১১ সালের নিজের শেষ বিশ্বকাপে ঘুচিয়েছেন ক্যারিয়ারের একমাত্র অপ্রাপ্তি। ঘরের মাঠ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের ঐতিহাসিক ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২৮ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ভারত।। পূর্ণ হয় মহানায়কের একমাত্র অপ্রাপ্তিও। ১৯৯২-এ নিজের অভিষেক বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন শচীন। সিডনির সেই খেলায় ৪৩ রানে পরাজিত হয় পাকিস্তান। তবে অবিশ্বাসভাবে ইমরান খানের সেই পাকিস্তানই ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে নিয়েছিল! ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠ ব্যাঙ্গালোরে ৩১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শচীন। দল জয় পায় ৩৯ রানে। ১৯৯৯-এ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শচীনের ৪৫ রানের ইনিংসে ভারত পায় ৪৭ রানের জয়। ব্যাটিং-অধিশ্বর হন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়, অসাধারণ ও দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলেছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নের ওই ম্যাচে শোয়েব আখতারকে যেভাবে চার-ছক্কা মেরেছেন সেটি, এখনও ভোলার নয়। ৭৫ বলে ৯৮ রানের অনবদ্য ইনিংস। ব্যাট হাতে তার মহাকাব্যের সুবাদেই পাকিস্তানের করা ২৭৩ রান হেসে খেলে টপকে যায় ভারত। সর্বশেষ ২০১১ সালে নিজেদের মাঠ মোহালিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ৮৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। যার ওপর ভর করে শত্রুদের বিদায় করে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। আগের পাঁচ বিশ্বকাপে অপবাদ শুনতে হয়, দেশকে যদি শিরোপই দিতে না পারলে, তবে তুমি কিসের শচীন! পূরণ হয় জীবনের একমাত্র অপ্রাপ্তি। শচীন নেইÑ এই একটি ধারণাই কি এবার বদলে দেবে দৃশ্যপট? বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর স্বাদ পাবে পাকিরা? শচীন নেই বলেই কি এবার ফেবারিট পাকিস্তান!
×