ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুটি অনুশীলন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া একাদশের কাছে হারের পর এবার বাংলাদেশের অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ

পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসল পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসল পরীক্ষা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর প্রায় দুই সপ্তাহ সময় কেটে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। এর মধ্যে দুটি অনুশীলন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে দলের। অস্ট্রেলিয়া একাদশের কাছে দুই ম্যাচেই পরাজয় বরণ করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এখনও বিশ্বকাপ শুরু হতে পুরো একটা সপ্তাহ বাকি। আর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথম নামতে বাকি ১১ দিন। এ সময়ের মধ্যে নিজেদের গুছিয়ে নিতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে দল। তবে সে দুটি আইসিসির অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ হওয়াতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডের চেয়ে কোনভাবেই কম নয় গুরুত্বটা। আজ থেকেই এবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো আইসিসির তত্ত্বাবধানে চলে যাবে। সোমবার প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তান ও ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর বিশ্বকাপে দল কতদূর যাবে কিংবা কেমন করতে পারে সেটার এক ড্রেস রিহার্সেল হবে এ দুটি ম্যাচেই। বোঝা যাবে অনেক কিছুই। তাই বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আসল পরীক্ষা বাংলাদেশের। এবার বিশ্বকাপে কোয়র্টার ফাইনাল খেলার প্রত্যাশা নিয়ে দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ। আগের চার বিশ্বকাপের মধ্যে ২০০৭ সালে এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা সাফল্য দেখিয়েছে তারা। উঠতে পেরেছিল সুপার এইটে। এছাড়া আর কোন আসরেই গ্রুপ পর্বের গ-ি পেরোতে পারেনি। এবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের অপরিচিত ও ভিন্ন পরিবেশ, ব্যতিক্রম উইকেটে দুই আয়োজক দলসহ শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের মতো দুই শক্তিধর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতটা ভাল করতে পারে বাংলাদেশ সেটাই শঙ্কা। কারণ গত বছরে শুধু হারের বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকার পর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই মাত্র বছরের শেষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল। তবে তাদের বিরুদ্ধে জিতলেও বড় কোন দলের বিরুদ্ধে গত বছর খুব খারাপভাবে হেরেছে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতেও। এমনকি আফগানদের বিরুদ্ধেও পরাজয়ের কালিমা লেগেছে। সে কারণে এবার বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্য, যোগ্যতা এবং শক্তিমত্তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ টাইগারদের। এর মধ্যে আবার আছে বৈরী ও ভিন্নধর্মী পরিবেশের প্রভাব। গত চার বছরে অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড সফর করেনি বাংলাদেশ দল। আর সে সময় যারা দলের হয়ে খেলেছেন তাদের মধ্যে মাত্র ৪/৫ জন আছেন বর্তমান দলে যাদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে পূর্বে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ এমন ক্রিকেটারই এবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আছেন ৫ জন। সেক্ষেত্রে অন্তত তিন ম্যাচ জেতলে সুযোগ থাকতে পারে। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাগজ-কলমের হিসেবে জয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই যদি ফেবারিট ধরা হলেও ভয় আছে সেখানেও। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের মধ্যে একটি দলকে অন্তত হারাতে হবে। মর্যাদা টিকিয়ে রাখার ম্যাচ তাই আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এ দুটি দেশই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে অনুশীলন করে নিজেদের মানিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই তারাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই দুটি অনুশীলন ম্যাচে বাংলাদেশ দলের দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে, ভুলভ্রান্তিও ধরা পড়েছে। অস্ট্রেলিয়া একাদশের মতো তরুণ উদীয়মানদের নিয়ে গড়া দলের কাছেই পাত্তা পায়নি। প্রথম ম্যাচে ৫ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে পরাজিত হয়েছে দল। প্রথম ম্যাচে কিছুটা ভাল ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখালেও দুয়েকজন ছাড়া কেউ তেমন সফর হতে পারেননি ব্যাট হাতে। ২৩১ রানের পুঁজি নিয়েও বোলাররা লড়াই জমে তুলতে পারেননি। এ দুটি পরাজয়ই এখন বাড়তি শঙ্কা তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে মূল দলগুলোর বিরুদ্ধে কেমন করবে বাংলাদেশ? সেই পরীক্ষার সময়টাও এসে গেছে। আইসিসির অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। সম্প্রতিই পাকিস্তান দল নিউজিল্যান্ড সফরে দুই ম্যাচের ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হলেও গত কয়েক মাস ধরে বেশ ভাল ফর্মে আছে তারা। প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তিই কাজে লাগাতে চাইবে তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া ও সামর্থ্য প্রমাণের জন্য। তাই আন্তর্জাতিক ওয়ানডের চেয়ে কোন অংশেই কম হবে না এ ম্যাচের গতি প্রকৃতি। সোমবার তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ অভিযানের প্রথম পরীক্ষা বাংলাদেশের। দুটি অনুশীলন ম্যাচে ব্যাট হাতে নিয়মিত রান পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান। মাহমুদুল্লাহ ৪২ ও ৩৬ রান করে আর সাব্বির দারুণ খেলে ৩১ ও ৩৩ রান করেছেন। তবে রান পাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। ইনজুরি থেকে ফেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এ দুই ম্যাচেই খেলতে পারেননি। আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয় ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রথম ম্যাচে সর্বাধিক ৫২ রান করা মুমিনুল হক সেটা ধরে রাখতে পারেননি দ্বিতীয় ম্যাচে (১৩)। তবে আশার কথা যে লেট অর্ডারে নাসির হোসেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দ্বিতীয় ম্যাচে ৫২ রান করে। বোলাররা কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেনি দুই ম্যাচেই। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি ও গতিময় উইকেটে মানিয়ে উঠতে পারেনি দল। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড অনুশীলন ম্যাচের আগের অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতি তারকা ব্রেট লিকে আগেই নিয়োগ দিচ্ছে বোলিং কোচ হিসেবে। ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ভারত ও সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয়ার পরও এই আইরিশদের কাছে হেরেই বিদায়ঘণ্টা বেজেছিল বাংলাদেশের। তাছাড়া নিজ দেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ পরিবেশ ও উইকেট হওয়ার কারণে এগিয়ে আয়ারল্যান্ড। গতি ও বাউন্সের আক্রমণ ঠেকাতে যোগ্যতা কতখানি বেড়েছে এ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই বড় পরীক্ষা হয়ে যাবে বাংলাদেশ দলের।
×